পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশের ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার দৌরাত্ম্য দমনে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। ভবিষ্যতে সেই কর্তৃপক্ষের আওতায় দেশের সমস্ত অর্থলগ্নি সংস্থাকে নিয়ে এসে একটি আর্থিক শৃঙ্খলা গড়ে তুলতে চাইছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। ওই ধরনের ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা কোনও নিয়ম না মেনে ইচ্ছেমতো বাজার থেকে টাকা তোলে। একাধিক নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ থাকলেও এরা আইনের ফাঁক দিয়ে গলে যায়। ফলে প্রতারিত হন সাধারণ লগ্নিকারী। তাই মন্ত্রকের পরিকল্পনা হল, বিদ্যুতের ক্ষেত্রে যে ভাবে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ রয়েছে, প্রতারণা রুখতে সেই ধাঁচে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠন করে অর্থলগ্নি সংস্থাগুলিকে নিয়মের আওতায় নিয়ে আসা।
সহারা বা পিয়ারলেসের মতো সংস্থাগুলির নন ব্যাঙ্কিং ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউটগুলির জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কিছু নিয়ম বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু সমস্যা হল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সম্পূর্ণ ভাবে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের আওতায় নয়। তাই এখন একটি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠন করার বিষয়ে ভাবছে অর্থ মন্ত্রক। যার ছাতার তলায় সমস্ত অর্থলগ্নি সংস্থাকে নিয়ে আসা সম্ভব হবে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞরা ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলির রমরমা রুখতে চিদম্বরমকে ওই কর্তৃপক্ষ গঠন করার পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শ মেনে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। তবে ওই নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের সাংবিধানিক কাঠামো কী হবে, কী ভাবে সেটি কাজ করবে, তা রাজ্যগুলির সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনার পরেই ঠিক করা হবে বলে জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র-রাজ্যের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যাতে এই নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি না হয়, তা নিশ্চিত করতে সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে একটি বৈঠক করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিদম্বরম। কেন না, এই ধরনের প্রতারণা রোখার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারগুলিরও একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে কোনও সংস্থা আর্থিক অনিয়ম করলে সেবি সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকেই আইনি পদক্ষেপ করতে পরামর্শ দেয়। সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্বেও থাকে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলি। তাই ওই নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা ঠিক কী হবে, তা কেন্দ্র-রাজ্য আলোচনার পরেই চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রক। তবে ওই কর্তৃপক্ষ এক বার গঠন হয়ে গেলে সহরা থেকে সারদা গোষ্ঠী, সকলেই তার আওতায় চলে আসবে।
চিদম্বরম আগামী সোমবার দেশে ফিরছেন। তার পরেই ওই নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠনের বিষয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর। সেই বৈঠকে ডাকা হবে অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীদেরও।
|