সরকারি আইনজীবীরা বিরোধিতা না করায় শিলিগুড়িতে সিপিএম-তৃণমূলের সংঘর্ষে ধৃত ৫১ সিপিএম কর্মীকে জামিনে মুক্তি দিল আদালত।
গত ১০ এপ্রিল শিলিগুড়িতে এক ঘন্টার ব্যবধানে সিপিএম-তৃণমূলের মিছিল ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শহর। প্রায় আড়াই ঘন্টা ধরে কয়েক দফায় হিলকার্ট রোডে সিপিএম পার্টি অফিসের সামনে সংঘর্ষ হয়। রাতে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, সিপিএমের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার সহ ওই সিপিএম কর্মীরা গ্রেফতার হন। ওই রাতেই অশোকবাবু, জীবেশবাবু সহ ৩ জনকে ব্যক্তিগত জামিনে ছেড়ে দেয় পুলিশ। পুলিশের তরফে একটি মামলা হয়। তৃণমূলের তরফেও ২টি অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়।
পক্ষান্তরে, সিপিএমের তরফে করা ২টি অভিযোগের ভিত্তিতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব সহ তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধেও পুলিশ মামলা দায়ের করে। ঘটনাচক্রে, অশোকবাবুদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় (খুনের চেষ্টা) মামলা রুজু করে পুলিশ। ফলে, প্রথম দিনে সকলের জামিনের আর্জি মঞ্জুর হয়নি। শুধু ৫ জন মহিলা সিপিএম কর্মীকে শতার্ধীন জামিন দেয় আদালত। পর দিন ওই ৫ মহিলার আদালতে হাজির থাকার কথা ছিল। কিন্তু সকলে হাজির না-হওয়ায় ধৃতদের আইনজীবীরা জামিনের আর্জি শেষ পর্যন্ত পেশ করতে পারেননি। এর পরে এদিন শুনানি ছিল। শেষ পর্যন্ত ৮ দিনের মাথায় তাঁরা জামিন পাওয়ায় সিপিএম নেতারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। |
ওই কর্মীরা ছাড়া পাওয়ার পরে তাঁদের নিয়ে হিলকার্ট রোডে মিছিলও করে আবির খেলেন সিপিএম নেতারা। সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “বিচার ব্যবস্থার উপর আমাদের আস্থা রয়েছে। ভবিষ্যতে আরও সত্য উদঘাটিত হবে।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীও ‘আদালতের সিদ্ধান্ত শিরোধার্য’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা বিচার ব্যবস্থাকে শ্রদ্ধা করি।” পাশাপাশি, মন্ত্রী বলেন, “প্রথম দিন ৫ জন মহিলার জামিন হয়। পর দিন কেস ডায়েরি ও ইনজুরি রিপোর্ট আদালতে পেশ করে পুলিশ। সে দিন ওই ৫ জনকে সিপিএম নেতৃত্ব হাজির করাতে উদ্যোগী হননি কেন সেটা স্পষ্ট হওয়া দরকার।”
এ দিন শুনানি শুরু হতেই অন্তর্বর্তী জামিনে থাকা চার কাউন্সিলর সহ ৫ জন মহিলা হাজির রয়েছেন কি না তা জানতে চান বিচারক। তাঁদের হাজিরার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পরই পরের তিনটি মামলায় প্রত্যেককে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরেই চারটি মামলার শুনানি শুরু হয়। বামেদের পক্ষে মিলনবাবু সিপিএম কর্মীদের গ্রেফতার করা এবং তাঁদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি সওয়াল করেন, ওই ঘটনার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ সিপিএম কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। রাত ৮টা ১০ মিনিটে পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করে। পরে রাত ৯টা ১০ মিনিট থেকে ৯টা ২০ মিনিটের মধ্যে আরও তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। সেগুলোতে কোনও ‘গ্রেফতার সংক্রান্ত নথি’ দেওয়া হয়নি। পরে আদালতের মাধ্যমে ওই মামলায় ধৃতদের গ্রেফতারের আর্জি জানানো হয়। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। তিনি দাবি করেন, খুনের চেষ্টা মামলা বা অন্য জামিন অযোগ্য মামলা এখানে খাটে না। এখানে কতগুলি কাচের টুকরো এবং ঢিলের কথা বলা হচ্ছে। যা দিয়ে কেউ সামান্য আঘাত পেতে পারে। বিচারক সরকারি আইনজীবীর কাছে ‘ইনজুরি রিপোর্ট’ চান। এক পুলিশ কর্মী সহ ৯ জন জখমের রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। বেশ কিছুক্ষণ ধরে তিনি তা দেখেন। জখম সোনা শেখ ও অভিজিৎ বিশ্বাসের রিপোর্ট কোথায় তা জানতে চান বিচারক। তদন্তকারী অফিসার ওই দু’জনকে পাওয়া যায়নি বলে জানান। এর পরে জামিন মঞ্জুর হয়।
সরকারি আইনজীবী সুদীপ বসুনিয়া বলেন, “ইনজুরি রিপোর্ট দেখার পরই চারটি মামলাতেই জামিন মঞ্জুর করেছেন বিচারক। এদিন চারটি মামলার কেস ডায়েরি রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে।”
এ দিন সকাল থেকে আদালত চত্বরে সিপিএমের নেতা-কর্মীরা ভিড় করেন। আজ, শুক্রবার মিত্র সম্মিলনী হলে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের সভায় জামিনে মুক্ত সিপিএম নেতা-কর্মীদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে বলে অশোকবাবু জানান।
|