অভাবে বালিকা কন্যাকে বিক্রির চেষ্টা আদিবাসী দম্পতির
ভাবের সংসার। তাই কন্যাসন্তানকে বিক্রি করে দিতে চেষ্টা করেছিলেন এক আদিবাসী দম্পতি। তবে ছেলেদের লালন পালন করতে তাঁদের আপত্তি নেই।
জলপাইগুড়ির ফালাকাটার ছোট শালকুমার গ্রাম পঞ্চায়েতের শিবনাথপুর মেচ বস্তির বাসিন্দা মণিরাম কার্জির স্ত্রী শকুন্তলাদেবী বলেন, “ছেলেরা একটু বড় হলে খেটে দু’পয়সা আনতে পারবে। মেয়েরা থাকলেই নানা ঝামেলা। বড় করে বিয়ে দিতে হবে। বিয়ে দিতে না-পারলে বিপদে পড়বে। তাই বিক্রি করে কারও হাতে দিলে দু’টো পয়সা ঘরে আসবে। মেয়েটাও ভাল থাকবে।” যা শুনে স্তম্ভিত হয়ে যান ফালাকাটার যুগ্ম বিডিও তাপস পাল। তবে শেষ পর্যন্ত প্রশাসন তাঁদের পাশে দাঁড়াবে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই দম্পতিকে কন্যা বিক্রি করা আটকাতে পেরেছেন তিনি। তাপসবাবু বলেন, “তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন, মেয়েকে বিক্রি করবেন না। তবে আমরাও নজর রাখছি।”
মণিরামবাবুদের প্রতিবেশীরাই প্রশাসনকে জানান যে, ওই দম্পতি তাঁদের এক কন্যাকে বিক্রি করে দিতে চেষ্টা করছেন। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্রের নির্দেশে সেখানে যান তাপসবাবু। ওই দম্পতির পাঁচ সন্তান। খুবই দরিদ্র। মণিরামবাবু বন থেকে শাকপাতা কুড়িয়ে এনে তা বিক্রি করে সংসার চালান। ভাত না জুটলে কখনও আলু সেদ্ধ খেয়ে দিন চলে।
ছোট মেয়েকে নিয়ে শকুন্তলা। —নিজস্ব চিত্র
তাপসবাবু বলেন, “বছর তিনেক আগেই টাকার বিনিময়ে এক কন্যা সন্তানকে ওই দম্পতি অন্যের কাছে দিয়ে দিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। এ বার তাঁরা তাঁদের আরও এক কন্যাকে ওই ভাবেই দিয়ে দিতে চেষ্টা করছিলেন। তবে আমরা দেখছি, যাতে তাঁকে সাহায্য করা যায়।”
কিন্তু ওই দম্পতির বিপিএল কার্ডই নেই। তাপসবাবু জানিয়েছেন, কোনও ভাবে মণিরামবাবুর নাম বিপিএল তালিকা থেকে বাদ চলে গিয়েছে। ফালাকাটা ব্লক অনগ্রসর কল্যাণ অফিসার কৌশিক চৌধুরী জানান, বিপিএল-এর নতুন তালিকা প্রকাশ হয়নি। তাঁর কথায়, “বিপিএল-এ নাম না থাকলে তেমন ভাবে সাহায্য করা সম্ভব নয়। বিডিও-র মাধ্যমে আপাতত কিছু সাহায্য বা ঋণ দিতে পারি।”
জলদাপাড়া জঙ্গল লাগোয়া মেচ সম্প্রদায় অধ্যুষিত ওই গ্রামের বেশিরভাগ পরিবারের সংসার চলে সামান্য জমি চাষআবাদ করে বা দিনমজুরি করে। সেই সঙ্গতিটুকুও নেই মণিরামবাবুদের। টিনের চালের আট ফুট বাই ছয় ফুটের ভাঙাচোরা আস্তানা। প্রতিবেশীরাই মণিরামবাবুর পরিবারের জন্য কয়েক বছর আগে সেটি তৈরি করে দিয়েছেন। তাতে অবশ্য ৬ জন শোওয়ার জায়গা নেই। পরিবারের দু’জনকে রোজ খোলা আকাশের নীচে ঘুমোতে হয়। বর্ষাকালে কারও বাড়ির বারান্দায় গিয়ে রাত কাটাতে হয়।
ওই দম্পতির বড় ছেলের বয়স ১৭। মেজ মেয়ের বয়স যখন ৮ তখন তাঁকে বীরপাড়ায় এক ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে মণিরামবাবু জানিয়েছেন। তার পরে আরও দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সেই ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ। তাকেই বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। ওই দম্পতির প্রতিবেশী মানিকচাঁদ কার্জি বলেন, “এ বার ছোট মেয়েটার দাম প্রায় সাত হাজার টাকা উঠেছে। ওঁরা আরও বেশি দাম চাইছেন বলে শুনেছি। গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে প্রশাসন, কেউ তো ওই পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। আমরাও আর সাহায্য করতে পারব না।”
জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র অবশ্য জানিয়েছেন, ওই দম্পতিকে সব রকম সাহায্য করবে প্রশাসন। মণিরামবাবুকে একটি বড় বাড়ি করে দেওয়া যায় কি না, সে চেষ্টাও শুরু হয়েছে।
তবে সিপিএম পরিচালিত ফালাকাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ক্ষিতীশ রায় অন্য কথা বলছেন। তাঁর দাবি, “ওই গ্রামে কেউ সন্তান বিক্রি করবেন বলে জানি না। হয়তো নেশার ঘোরে কেউ বিক্রির কথা বলেছেন। খোঁজ নিয়ে যা করণীয় করব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.