সংঘর্ষে উত্তাল শিলিগুড়ি, গ্রেফতার অশোক
দিল্লিতে হেনস্থা হলেন রাজ্যের বর্তমান মন্ত্রী, তার জেরে শিলিগুড়িতে গ্রেফতার হলেন প্রাক্তন মন্ত্রী।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীতে যোজনা কমিশনের দফতরের সামনে এসএফআই নেতা কর্মীদের হাতে হেনস্থা হন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তার প্রতিবাদে বুধবার তৃণমূলের মিছিলে বাম নেতাকর্মীরা হামলা করেছেন, এমনই অভিযোগ করল তৃণমূল। সেই হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকারকে দলীয় দফতর অনিল বিশ্বাস ভবন থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ সমন পাঠক, ৫ জন কাউন্সিলর সহ মোট ৫২ বাম নেতা কর্মীকেও। অশোকবাবু, জীবেশবাবু ছাড়াও নাম করে অভিযোগ করা হয়েছে শঙ্কর ঘোষ, জয়ন্ত মৌলিক, বুলা হালদার, জয় চক্রবর্তী, পার্থ মৈত্র সহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে। রাতে পুলিশ অশোকবাবু, জীবেশবাবু এবং সমনবাবুকে ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তি দেয়। থানার যে ঘরে তাঁদের রাখা হয়েছিল, সকলকে মুক্তি দেওয়ার দাবি তুলে, সেই ঘরেই রাত পর্যন্ত বসেছিলেন অশোকবাবুরা। তাঁদের দাবি, উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব, শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সিপিএমের দফতরে হামলা করেছে তৃণমূল, তাই তাঁদের গ্রেফতার করতে হবে। আজ, বৃহস্পতিবার দার্জিলিং জেলায় ১২ ঘণ্টা বন্ধেরও ডাক দিয়েছে বামফ্রন্ট।
অশোক ভট্টাচার্য এবং জীবেশ সরকারকে গ্রেফতার করে নিয়ে
যাচ্ছে পুলিশ। বুধবার শিলিগুড়িতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
শিলিগুড়িতে এই দিন এক ঘণ্টার ব্যবধানে একই রাস্তায় যথাক্রমে সিপিএম ও তৃণমূলের মিছিল ও সমাবেশকে ঘিরে বিকেল থেকে উত্তেজনা শুরু হয়। দিল্লিতে নেতা-মন্ত্রীদের হেনস্থার প্রতিবাদে মিছিলের আয়োজন করেছিল তৃণমূল। সিপিএম মিছিল করেছে এসজেডিএ এবং পুরসভায় দুর্নীতির প্রতিবাদে। দু’সপ্তাহ আগে থেকেই সিপিএম এই মিছিল ও সমাবেশের অনুমতি নিয়েছিল। ঘটনাচক্রে এই দিন প্রায় একই সময়ে দু’টি মিছিল শহরে বেরোয়। একই রাস্তায় ঘণ্টাখানেকের ব্যবধানে দুই দলের মিছিল হলে গোলমালের আশঙ্কায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল। শতাধিক পুলিশকর্মী জলকামান নিয়ে মোতায়েন ছিলেন। র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স, কমব্যাট ফোর্সের জওয়ানেরাও ছিলেন। তবু গণ্ডগোল এড়ানো গেল না।
হিলকার্ট রোডে দুই দলের লোকজন কাছাকাছি হতেই এক পক্ষ অন্য পক্ষকে আক্রমণ করে। তৃণমূলের মিছিল হিলকার্ট রোডে পৌঁছয়। তার আগেই বামেরা নির্ধারিত সময়ে মিছিল ও সভা শেষ করে দলীয় অফিসে ফিরে যান। কিন্তু দেরিতে আসা বামেদের একটি মিছিল তখন সবে অনিল বিশ্বাস ভবনের সামনে পৌঁছেছে। গৌতম দেবের নেতৃত্বে তৃণমূলের মিছিলের সিংহভাগ সে সময়ে সিপিএম অফিস পেরিয়ে সেবক মোড়ে চলে গিয়েছে। কিন্তু মিছিলের শেষের দিকে থাকা তৃণমূলকর্মীরা অভিযোগ করেন, সিপিএম অফিস থেকে তাঁদের উপরে জল, সোডার বোতল, ইট ছোড়া হয়েছে। অশোকবাবুদের দাবি, সেই অভিযোগ মিথ্যে। পূর্ব পরিকল্পিত ভাবেই সিপিএমের অফিসে হামলা চালিয়েছে তৃণমূল। বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। ওই সময়ে পুলিশ বারবার লাঠিও চালায়। ইট, ঢিল, লাঠির আঘাতে নিরীহ পথচারী, রাস্তার ধারের ব্যবসায়ী, পুলিশ, সাংবাদিক-সহ অন্তত ৩৫ জন জখম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৩ জন শিলিগুড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ পুলিশ সিপিএম অফিসে ঢুকে প্রথমে ১০ জনকে গ্রেফতার করে। কিছুক্ষণ পরে আরও পুলিশ গিয়ে অশোকবাবু সহ সব নেতাদের পুলিশের বাসে নিয়ে শিলিগুড়ি থানায় চলে যায়। ততক্ষণে গোটা হিলকার্ট রোডের দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অশোকবাবুর দাবি, “তল্লাশি পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশ দলীয় দফতরে ঢুকেছে ও আমাদের গ্রেফতার করেছে।” পুলিশের অবশ্য দাবি, আগেই অভিযোগ ছিল, তা ছাড়াও শান্তিভঙ্গের আশঙ্কায় ওই নেতাদের থানায় নিয়ে আসা হয়।
গৌতমবাবু বলেছেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল করছিলাম। সিপিএম পার্টি অফিসের সামনে দিয়ে যখন যাচ্ছিলাম, সেই সময়ে আমাদের উপরে জলের বোতল, ইট, পাথর পড়তে থাকে। তাতেই পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে যায়।” মন্ত্রীর অভিযোগ, সিপিএমের অফিসের দোতলা, তিনতলা থেকে জল, সোডার বোতল, ইট-পাথর ছোড়া হয়েছে। তাঁর কথায়, “পুলিশের একাংশের ভূমিকা নিয়ে অনেকেই আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। আমি যথাস্থানে জানিয়েছি।”
উল্টো দিকে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবুর দাবি, তাঁরা মিছিল ও সভার পরে শান্তিপূর্ণ ভাবে দলীয় অফিসে বসেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, পুলিশের সামনেই তৃণমূলের মিছিলে যাঁরা ছিলেন তাঁদেরই কয়েকজন রাস্তার রেলিংয়ে টাঙানো দলীয় পতাকা ছিঁড়ে ফেলে পার্টি অফিসের দিকে ইট, ঢিল ছুড়তে থাকে। অশোকবাবু বলেন, “এটা শিলিগুড়ির রাজনৈতিক সংস্কৃতি নয়। তা সত্ত্বেও এমন পরিস্থিতি তৈরির দায় যেমন তৃণমূলে, ততটাই পুলিশের।”
সিপিএম-তৃণমূল দু’দলের তরফেই পুলিশের একাংশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরে পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমার বলেন, “এটা অনভিপ্রেত ঘটনা। দু’পক্ষের মিছিলের মধ্যে সময়ের ব্যবধান রাখা হয়েছিল। তবুও কেন এমন হল তা খতিয়ে দেখা হবে।”
এই দিন রাত পর্যন্ত শিলিগুড়ির পরিস্থিতি ছিল থমথমে। রাস্তাঘাটও একদম সুনসান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.