মোম জ্বালিয়ে থানায় অশোক, জীবেশ
দু’বার চিনি ছাড়া চা। ঠান্ডা পানীয় দেওয়ার কথা বলায় সবিনয়ে অস্বীকার করলেন। দলের কর্মীদের কেউ কেউ খোঁজ নিলেন, “দাদা আপনার কোনও ওষুধ লাগবে না তো?” পুলিশ কর্মীরাও তৎপর তখন। কারণ, শিলিগুড়ির দু’দশকের মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য যে ব্লাডসুগারের রোগী, তা তাঁরাও জানেন। এক সময়ে যাঁরা তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের কয়েকজন পদস্থ কর্তাদের জানিয়ে দেন যে, অশোকবাবুকে কিন্তু নিয়মিত ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নিতে হয়। সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ সেই ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয়। তবে অশোকবাবু তাঁদের জানিয়ে দেন, “যা করার আমার দলের ছেলেরাই করবে।”
রাত ৮টার সময়ে শিলিগুড়িতে দলের দফতর অনিল বিশ্বাস ভবন থেকে অশোকবাবুকে নিয়ে আসা হয় শিলিগুড়ি থানায়। সঙ্গে ছিলেন জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার ও রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ সমন পাঠক-সহ ৫২ জন সহকর্মী। রাত ১০টা নাগাদ অশোকবাবুকে জানানো হয়, জীবেশবাবু ও ডিওয়াইএফের জেলা সভাপতি শঙ্কর ঘোষের সঙ্গে তাঁকেও ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অশোকবাবু চেয়ার ছেড়ে উঠলেন না। তিনি বললেন, “দলের ছেলেদের ছেড়ে আমি এক পা-ও নড়ব না। সকলকে ছাড়তে হবে, তবেই আমি যাব।” জীবেশবাবু ও শঙ্করবাবুও তখন পাশে বসে তাঁকে সমর্থন করেন।
বস্তুত, এক সময়ে যিনি ছিলেন ‘উত্তরবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী’, তাঁকে গ্রেফতার করার পরে পুলিশও কিছুটা বিব্রত ছিল। কারণ, ‘ভিআইপি রাজনৈতিক বন্দি’ ও তাঁর সতীর্থদের রাতভর থানার ডিউটি অফিসারের পাশের ছোট্ট ঘরে কী ভাবে রাখা হবে, তা নিয়ে শুরু হয় নিজেদের মধ্যে আলোচনা। ধৃত বাম নেতাকর্মীদের একাংশকে সরিয়ে দেওয়া হয় ভক্তিনগর থানায়। অশোকবাবুর সঙ্গে ছিলেন জনা ২০ নেতা-নেত্রী।
অশোকবাবু কিন্তু ছিলেন দৃশ্যত সাবলীল। কখনও ফোনে কলকাতায় বিমান বসুর সঙ্গে কথা বলেছেন। কখনও কথা বলেছেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। কখনও তাঁদের ডাকা বন্ধে যেন কেউ প্ররোচনায় পা না দেন, সেই বিষয়ে সতর্ক করেছেন দলের কর্মীদের। রাত বারোটা নাগাদ একবার থানার বাইরে বেরোন। দাঁড়িয়ে কথা বলেন দলের নেতাকর্মী ও সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে।
প্রচণ্ড গরমের পরে এই দিন রাতে সামান্য বৃষ্টি হয় শিলিগুড়িতে। তারপরেই লোডশেডিং হয়ে যায়। অশোকবাবুর অভিযোগ, “আমাদের বন্ধের ডাক যাতে বৈদ্যুতিন মাধ্যমের মাধ্যমে ছড়াতে না পারে, সেই জন্য পরিকল্পিত ভাবেই বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটানো হয়েছে।” সাড়ে বারোটা নাগাদও বিদ্যুৎ আসেনি। থানার জেনারেটরও খারাপ হয়ে যায় কিছুক্ষণ পরে। মোম জ্বালিয়ে ওই ছোট ঘরে সাড়ে বারোটার সময়ে বসেছিলেন অশোকবাবুরা। তাঁর খেদোক্তি, “অনেক বছর মন্ত্রী ছিলাম। কিন্তু বিরুদ্ধ দলের কাছ থেকে সামান্য সৌজন্যটুকুও পেলাম না।”
তবে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এক পদস্থ কর্তা জানান, অশোকবাবুদের তো ছেড়েই দেওয়া হয়েছিল, তারপরেও সতীর্থদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন তাঁরা। তবুও পুলিশের পরিকাঠামোতে যা যা করা সম্ভব সবই করা হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.