নমিতেশ ঘোষ ও সংগ্রাম সিংহ রায় • শিলিগুড়ি |
সংঘর্ষ, হামলার অভিযোগের চাপান-উতোরের জেরে পর পর দু’দিন মঙ্গল ও বুধবার শিলিগুড়ি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে যায়। আজ, বৃহস্পতিবার বামেদের ডাকা শিলিগুড়ি বন্ধের জেরে শহরের স্বাভাবিক কাজকর্ম স্তব্ধ হওয়ার আশঙ্কা করেছেন অনেকেই। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন শহরের বাসিন্দা থেকে ব্যবসায়ীরা। কারণ, তিনদিন পরেই বাংলা নতুন বছর শুরু। তার প্রাক্কালে লাগাতার শহরের অচলাবস্থার জেরে নববর্ষের বাজার আর জমবে কী না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ী তো বটেই বাসিন্দারাও। ইতিমধ্যেই একাধিক ব্যবসায়ী সংগঠনের তরফে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলির কাছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অনুরোধ করা হয়েছে। সর্বদল বৈঠক ডাকার জন্য প্রশাসনকে উদ্যোগী হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, “শিলিগুড়ি শহরের আইন শৃঙ্খলা, জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। মানুষকে আমরা বলব বামেদের বন্ধ প্রত্যাখ্যান করে শহর স্বাভাবিক রাখুন। কারও কোনও আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।” আর সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা শহরে শান্তি চাই। এই ধরণের ঘটনা শিলিগুড়িতে কোনওদিন ঘটেনি। এরজন্য তৃণমূল কংগ্রেস দায়ী। পুলিশ একেবারেই সঠিক ভূমিকা পালন করছে না। প্রয়োজনে সবর্দল বৈঠক হলে আমরা অবশ্যই যাব।” |
বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের অনেকেই অবশ্য কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেই প্রশ্নে উদ্বিগ্ন।
যেমন মাটিগাড়া থেকে ১০ বছরের মেয়েকে নিয়ে শিলিগুড়িতে বাজার করতে এসেছিলেন পৌলমী সেন। ঘটনার সময় তিনি হিলকার্ট রোডের সিপিএম পার্টি অফিসের সামনেই ছিলেন। ঘটনায় আতঙ্কে, ভয়ে মেয়েকে নিয়ে পার্ক প্যালেস-এসি মার্কেটের সরু গলি দিয়ে দৌড়ে বিধান রোডে পালান। তিনি বলেন, “পয়লা বৈশাখের বাজার করতে এসেছিলাম। বাস, অটো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কীভাবে বাড়ি ফিরব বুঝতে পারছি না।”
দুই দিনের গোলমালে সমস্যা পড়তে হয়েছে স্কুল বাস থেকে সাধারণ বাজার করতে আসা মানুষজন, এমনকি চিকিৎসকের কাছে আসা রোগী এবং তাঁদের পরিবারকে। প্রথমে মিছিলের জেরে যানজট, পুলিশের ট্রাফিক নানা রাস্তায় ঘুরিয়ে দেওয়ায় বাসিন্দাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। পাশাপাশি, রাতে বাড়ি ফিরতেও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। শিবমন্দির থেকে আসা অরূন্ধতী দত্ত বলেন, “বাবাকে নিয়ে এসেছিলাম ডাক্তার দেখাতে। নাম লিখিয়ে ভিতরে ঢুকে বসেছিলাম। হঠাৎ কেউ হুড়মুড় করে বাইরে শাটার নামিয়ে দিল। একজন পুলিশ বলল, আপনারা ভিতরে বসে থাকুন। তারপর ২ ঘন্টা ভিতরে বসে শুধু চিৎকার শুনলাম।” অনেক রোগীকে তাঁদের পরিবারের লোকজন চিকিৎসক, ওষুধের দোকান থেকে কোনওক্রমে বাড়ি নিয়ে যান।
মিলনপল্লির বাসিন্দা রাজেশ ত্রিপাঠি বলেন,“বিবেকানন্দ মার্কেটে এসেছিলাম। হঠাৎ পিছন থেকে একটা ঢিল এসে মাথায় লাগল। মাথা ফুলে গিয়েছে। হিলকার্ট রোডে কোনও ওষুধের দোকান খোলা না পাওয়ায় শেষপর্যন্ত শিলিগুড়ি হাসপাতালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু করাই।”
এদিন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সিপিএম পার্টি অফিস লাগোয়া একটি ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকানের শাটার নামিয়ে দেওয়ার পরেও পুলিশ শাটার তুলে ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ। দোকান মালিককেও ব্যাপক মারধর করায়। এমনকী, হিলকার্ট রোডের এক চায়ের দোকানদারও পুলিশের হাত থেকে রেহাই পায়নি বলে অভিযোগ। পাঞ্জাবিপাড়ার বাসিন্দা কে পি শ্রীবাস্তব ঘটনার সময় হিলকার্ট রোড দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার মাথায় একটা পাথর এসে লাগায় তাঁর মাথা ফেটে যায়। আতঙ্কিত বাসিন্দা, পথচারীরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করায় সন্ধ্যাতেই বিধান রোড, হিলকার্ট রোড, সেবক রোড কার্যত বন্ধের চেহারা নেয়। |