কেবল ব্যবসায়ে এলাকা দখলের লড়াইয়ে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সেট-টপ বক্স কিনেও টেলিভিশনে ছবি দেখতে পাচ্ছে না বহু পরিবার।
সল্টলেক থেকে বারুইপুর, বেহালা থেকে চুঁচুড়া সর্বত্রই ধীরে ধীরে কেবল ব্যবসায় যেমন নতুন করে এলাকা দখলের সূত্রপাত হচ্ছে, তেমনই এর ফলে দুর্ভোগে পড়ছেন সাধারণ গ্রাহক। যেমন, সল্টলেকের বিভিন্ন ব্লকে একটি এমএসও সংস্থার কেবলের গ্রাহকেরা সেট-টপ বক্স থাকা সত্ত্বেও সপ্তাহ দুয়েক ধরে বেশির ভাগ চ্যানেল দেখতে পাচ্ছেন না।
ই ই ব্লকের বাসিন্দা গৃহবধূ সুপর্ণা মিত্র জানান, কলকাতার বিভিন্ন জায়গায়, এমনকী ঢাকুরিয়ায় তাঁর বাপের বাড়িতে বহু আগেই সেট-টপ বক্স এসে গেলেও সল্টলেকে স্থানীয় কেবল অপারেটর তা দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। তিনি বলেন, “এখানে ডিজি কেবল। অ্যানালগ সম্প্রচার বন্ধ হওয়ার পর আমরা চেঁচামেচি করতে বাধ্য হয়ে এক হাজার টাকা নিয়ে বক্স দেন অপারেটর। কিন্তু প্রথম থেকেই ছবি, শব্দের মান খুব খারাপ ছিল। এখন অধিকাংশ চ্যানেল দেখাই যাচ্ছে না। অপারেটরও বলছে লাইন খারাপ। তিনি অন্য সংস্থার বক্স দিতে চাইছেন। কিন্তু নেব কেন?” রুবি হাসপাতালের পিছনে থাকেন বনশ্রী চৌধুরী। তিনি বলেন, “প্রথম থেকে বক্স কিনতে চাইলেও অপারেটর বলেছেন ও সব লাগবে না। পরে বক্স পেলেও সার্ভিস খুব খারাপ দেখে বাধ্য হয়ে ডিটিএইচ কানেকশন নিয়েছি। কেবল অপারেটরের খারাপ পরিষেবায় আমরা ভীষণ বিরক্ত।” |
কসবার বাসিন্দা সুপবিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতা, “সেট-টপ বক্সের জন্য কেবল অপারেটরের পিছনে দৌড়ে আমরা ক্লান্ত। এক দোকান পছন্দ না-হলে আমরা অন্য দোকানে যাই। কেবলের ক্ষেত্রে কেন পারব না?” একই ঝামেলার কথা বলেন রিজেন্ট পার্কের মনোজ সরকারও।
প্রশ্ন উঠছে, সেট-টপ বক্সের যুগ শুরু হওয়ার পর ভাবা হয়েছিল টেলিভিশন-দর্শনের মান উন্নত হবে। কিন্তু এই পরিস্থিতি হল কেন? জানা গিয়েছে, মূলত মুম্বইয়ের একটি বড় মাল্টি সার্ভিস অপারেটর (এমএসও) কলকাতায় কেবল ব্যবসায়ে প্রবেশ করতে উদ্যোগী হওয়া থেকে গোলমালের সূত্রপাত।
বস্তুত, কেবল টেলিভিশনের যুগ শুরু হওয়ার সময় কলকাতায় কেবল অপারেটরদের এলাকা দখলের লড়াই দেখতে হয়েছিল পাড়ায় পাড়ায়। এ নিয়ে সংঘর্ষে রক্তপাতও হয়। পরে অপারেটররা একটি অলিখিত চুক্তি করে নেন এলাকা নিয়ে। পরে এই ব্যবসায়ে এমএসও-দের প্রবেশের পরও এলাকা নিয়ে কোনও গোলমাল হয়নি। অ্যানালগ সম্প্রচারের শেষ সময় অবধি সেই চুক্তি বহাল ছিল।
কিন্তু মুম্বইয়ের একটি সংস্থা আইন মেনে এ শহরে ব্যবসা করতে এসে বাধার মুখে। ডিজি কেবলের এক আধিকারিক লোকেশ অগ্রবালের অভিযোগ, “অনেক সুবিধা দেওয়ার লোভ দেখানো হচ্ছে স্থানীয় কেবল অপারেটরদের”। তাঁর সংস্থার পরিষেবা নিয়ে অনেক অভিযোগ। তবে লোকেশবাবু বলেন, “সংস্থা থেকে এক উচ্চপদস্থ ব্যক্তি বেরিয়ে গিয়ে মুম্বইয়ের সংস্থাটির কলকাতার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দেখছি বিভিন্ন এলাকায় আমাদের পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটানো হচ্ছে।” ‘অভিযুক্ত’ সংস্থার অন্যতম আধিকারিক শিরীষ রুপারেল মুম্বই থেকে বলেন, “কোনও এমএসও-র এলাকায় আমরা ঢুকছি না। আরও ভাল পরিষেবা আনছি সাধারণ মানুষের উপকারের জন্য।”
কিন্তু শুধু সল্টলেক বা রুবিই নয়, বিভিন্ন এলাকায় ফের এলাকা সম্প্রসারণের ঘটনা শোনা যাচ্ছে। কলকাতার প্রধান এমএসও সংস্থাগুলি প্রশ্ন তুলছে, ব্যবসা সম্প্রসারণের অধিকার সব ব্যবসারই রয়েছে। কেবল-এ থাকবে না কেন? কিন্তু এখন এই ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার মাঝখানে পড়ে গ্রাহকেরা আতান্তরে। |