বলা হল দিল্লিকে
এখনই সেট-টপ বক্স চালু করতে আপত্তি মমতার
নমোহন সিংহ-সরকারের সিদ্ধান্তে ফের আপত্তি তুলল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এ বারের বিষয়, কলকাতায় ডিজিটাল কেবল পরিষেবা চালু করা।
কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে কলকাতা-সহ চার মেট্রো শহরে কেবল পরিষেবা ডিজিটাল ব্যবস্থায় রূপান্তরিত করতে হবে। এ জন্য সব বাড়িতেই ওই সময়সীমার মধ্যে ‘সেট-টপ বক্স’ বসিয়ে ফেলতে হবে। কিন্তু আজ দিল্লিতে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এ বিষয়ে তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের কাছে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, গোটা কলকাতায় এই ব্যবস্থা চালু করতে গেলে যে পরিমাণ সেট-টপ বক্স প্রয়োজন, তা পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষকে কেবল পরিষেবার জন্য মাসে কত খরচ করতে হবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। হঠাৎ কেবল পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেলে বিক্ষোভের পরিস্থিতি তৈরি হবে। রাজ্য সরকারকেই তার ঠ্যালা সামলাতে হবে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের কাছে ধাপে ধাপে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালুর দাবি তুলেছেন তিনি। তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের কর্তারা এ বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে ঠিক হয়েছে।
মনমোহন-সরকারের কোনও সিদ্ধান্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আপত্তি এই প্রথম নয়। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ থেকে লোকপাল বিল বা জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র, সব ক্ষেত্রেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করে একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তবে এ বারের বিষয়টি কিছুটা অভিনব। কারণ, ডিজিটাল কেবল পরিষেবা চালু করার বিষয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও কোনও মহল থেকে আপত্তি উঠলেও একেবারে রাজ্য সরকারের তরফে আপত্তি এই প্রথম। ফিরহাদের যুক্তি, “হঠাৎ কেন্দ্রীয় সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্যের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। তুঘলকি কায়দায় দেশ চলে না।”
এখন কলকাতার বেহালা থেকে টালির নালা পর্যন্ত অংশে ডিজিটাল কেবল পরিষেবা চালু রয়েছে। ফিরহাদের যুক্তি, শহরের বাকি অংশে ডিজিটাল পরিষেবা চালু করতে গেলে যত সেট-টপ বক্স প্রয়োজন, কলকাতার বাজারে তা মজুত নেই। এই সময়ের মধ্যে চিন থেকে আমদানি করেও সেট-টপ বক্সের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। ৩০ জুনের পর থেকে পুরনো অ্যানালগ পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাবে। যাঁরা কেবল পরিষেবা পাবেন না, তাঁরা রাস্তায় নামবেন। এর ফলে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা দেখা দেবে। কলকাতার স্থানীয় কেবল টিভি অপারেটর ও মাল্টি-সিস্টেম অপারেটর (এমএসও)-দের প্রতিনিধিদের নিয়ে তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব রাজীব টাকরুর সঙ্গে বৈঠক করেন ফিরহাদ। তথ্য-সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা চৌধুরী মোহন জাটুয়ার সঙ্গেও বৈঠক করেছেন তাঁরা। ঠিক হয়েছে, কেন্দ্রের আমলারা রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করবেন।
তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের অবশ্য বক্তব্য, প্রয়োজনীয় সংখ্যায় সেট-টপ বক্স মিলবে না বলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে গুজব রটানো হচ্ছে। বাজারে যথেষ্ট সংখ্যায় সেট-টপ বক্স রয়েছে। রাজ্যের আপত্তির আর একটি দিক হল, নতুন ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষকে কেবল পরিষেবার জন্য অনেক বেশি খরচ করতে হবে। কারণ, প্রত্যেকটি ‘পেড চ্যানেল’-এর জন্য মাসুল গুণতে হবে। এর উপরে সেট-টপ বক্স কেনার জন্যও বাড়তি খরচ রয়েছে। গরিব মানুষেরা এর ফলে সমস্যায় পড়বেন। অতিরিক্ত সচিব রাজীব টাকরু জানিয়েছেন, চ্যানেল প্রতি দরের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। কেবল অপারেটরেরা তার থেকে কম দামেই পরিষেবা দিতে পারেন। সেট-টপ বক্স কেনারও প্রয়োজন নেই। ভাড়া নিলেই চলবে।
তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, কেবল টিভি নেটওয়ার্কস (রেগুলেশন) আইনের সংশোধন করেই নতুন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। প্রথমে চার মেট্রো শহর, তার পরে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে গোটা দেশেই ডিজিটাল পরিষেবা চালু হবে। নতুন ব্যবস্থার কিছু ভাল দিকও রয়েছে। দেশে এখন ৮২০টি চ্যানেল রয়েছে। ডিজিটাল ব্যবস্থায় যে কেউ এর থেকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী চ্যানেল বেছে নিতে পারবেন। ফলে নিজের পছন্দমতো অনেক বেশি চ্যানেল দেখতে পাওয়া যাবে। প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত মানের ছবি ও শব্দও মিলবে। অন্য দিকে, চ্যানেলগুলিকে এখন শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনের উপরে নির্ভর করতে হয়। নতুন ব্যবস্থায় যাঁরা চ্যানেল দেখছেন, তাঁদের থেকেই খরচের অনেকটা উঠে আসবে। এক জন কেবল অপারেটর ক’টি বাড়িতে সংযোগ দিয়েছেন, তার উপরেও নজরদারি করা যাবে। যা এখন সম্ভব নয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.