রাস্তার দুর্দশার মূলে অশুভ চক্র, কটাক্ষ কোর্টের |
অরুণোদয় ভট্টাচার্য • কলকাতা |
সারানোর কিছু দিন পরেই রাস্তা ভাঙে। আবার সারানো হয়। দু’দিন যেতে না-যেতেই ফের ভেঙে যায় সেই রাস্তা। জলের মতো বেরিয়ে যায় সরকারের টাকা। তামাম বঙ্গবাসীর অভিজ্ঞতা এটাই। দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাঁদেরই। পুরো বিষয়টির পিছনে যে অশুভ চক্রের কারসাজি আছে এবং সেই অশুভ শক্তির জন্যই যে রাস্তার আয়ু কম হয়, তা নিয়ে কটাক্ষ করল কলকাতা হাইকোর্ট।
কী ভাবে এই অশুভ শক্তি কাজ করে, মঙ্গলবার রাস্তা সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানির সময় তারও উল্লেখ করেছেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বেহাল রাস্তার জন্য মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। তার পরেও রাস্তা তৈরির বরাদ্দ অর্থের পুরোটা ওই কাজে খরচই হয় না। সংশ্লিষ্ট যে-রাস্তা নিয়ে মামলা, তার ঠিকাদারের বরাত খারিজ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক বলেও এ দিন জানিয়ে দেন বিচারপতি।
গোপীবল্লভপুর-নয়াগ্রাম জাতীয় সড়ক চওড়া ও মজবুত করার জন্য রাজ্য সরকার আনুমানিক খরচ ধরেছিল পাঁচ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা। যে-ঠিকাদার ওই রাস্তা তৈরির বরাত পেয়েছেন, তিনি জানান, কাজ শেষ করতে খরচ পড়বে চার কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী মার্চে শুরু করে কাজ শেষ করতে হবে আগামী জানুয়ারির মধ্যে। কিন্তু ঠিকাদার রামচন্দ্র পাল জানান, জুলাইয়ে তিনি কাজ শুরু করবেন। তবে শেষ করে দেবেন নির্ধারিত সময়সামীর মধ্যেই। রাজ্যের পূর্ত দফতর ওই ঠিকাদারের বরাত খারিজ করে দেয়। ঠিকাদার সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন।
আদালত সূত্রের খবর, পূর্ত দফতরের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার গত ৬ ফেব্রুয়ারি রামবাবুকে সাত দিনের মধ্যে চুক্তিপত্র জমা দিতে বলেন। কিন্তু ঠিকাদার চুক্তিপত্র জমা দেন ৯ এপ্রিল। তিনি নির্দিষ্ট সময়েও কাজ শুরু করেননি। তার পরেই পূর্ত দফতর তাঁর দরপত্র খারিজ করে দেয়।
রামবাবুর আইনজীবী আদালতকে জানান, আবেদনকারী অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাই কাজ শুরু করা যায়নি। এ দিন ওই মামলার শুনানির সময় বিচারপতি বলেন, এ কথা বিশ্বাস করার কোনও সঙ্গত কারণ নেই। তার পরেই রাস্তা নিয়ে অশুভ শক্তির আঁতাঁতের প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। কী ভাবে ওই অপশক্তি ছক সাজায়, তার বিবরণও দেন বিচারপতি। তিনি মন্তব্য করেন, এর পরে বাজারদর বেড়েছে বলে ব্যয়বরাদ্দ বৃদ্ধির আবেদন করা হবে। টাকা না-বাড়ালে মামলা হবে। মামলায় দু’পক্ষের মত নিয়ে এক জন সমঝোতাকারী নিযুক্ত হবেন। তার পরেই সুদ-সহ ঠিকাদারকে টাকা মিটিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে আদালতের কাছে। রাস্তা কোন মানের জিনিস দিয়ে তৈরি করা বা সারানো হবে, এর পরে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিচারপতি বলেন, এর পরে যদি ওই ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হয়, তা হলে রাস্তা কেমন হবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। ওই ঠিকাদারের বরাত খারিজ করে পূর্ত দফতর ঠিকই করেছে বলে রায় দেন বিচারপতি। তিনি নির্দেশ দেন, দরপত্র দাখিল করা সময় ওই ঠিকাদার যে-টাকা (প্রায় ১২ লক্ষ) জমা দিয়েছিলেন, সরকার যেন তা আর ফেরত না-দেয়। |