মদ খেয়ে পুলিশকে মার, শাস্তি বেসু-র ১৮ ছাত্রের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য একসঙ্গে ১৮ জন ছাত্রকে শাস্তি দিয়ে নজির গড়ল শিবপুরের বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি বা বেসু। ওই ছাত্রেরা মদ্যপান ও পুলিশকর্মীকে মারধরের ঘটনায় জড়িত বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। ওই ১৮ জনের মধ্যে এক জনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সারা জীবনের মতো বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্য দু’জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে দু’বছরের জন্য।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, বেসু-র ইতিহাসে একসঙ্গে এত ছাত্রকে শাস্তি দেওয়ার নজির নেই। ২০০৮ সালে র্যাগিংয়ের অভিযোগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ জন পড়ুয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন সেখানকার কর্তৃপক্ষ। বেসু সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১২ এপ্রিল রাত ১১টা নাগাদ বেসু-র পিছন দিকে লঞ্চঘাটে মদ্যপান করছিল ওই প্রতিষ্ঠানের কয়েক জন ছাত্র। সেখানেই স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বচসা বাধে তাঁদের। ফোনে খবর পেয়ে হস্টেল থেকে আরও এক দল ছাত্র লঞ্চঘাটে যান সহপাঠীদের ‘পাশে দাঁড়াতে’। অভিযোগ, সেখানে তাঁরা ঝুপড়ি এবং দোকানে ভাঙচুর চালান। পুলিশকেও তাঁরা মারধর করেন। পুলিশ ছ’জন ছাত্রকে সেই রাতেই আটক করে। পরে উপাচার্য অজয় রায়ের অনুরোধে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ১২ এপ্রিল রাতেই অজয়বাবু পাঁচ অধ্যাপককে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সোমবার রিপোর্ট জমা দেয় কমিটি।
উপাচার্য মঙ্গলবার জানান, তদন্তে হামলা এবং মারধরের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ওই ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রকে বেসু থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বরাবরের মতো। তথ্যপ্রযুক্তি এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের আরও দুই ছাত্রকে দু’বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাসপেন্ড করার সঙ্গে সঙ্গে বরাবরের মতো হস্টেল বহিষ্কার করা হয়েছে। ছ’জন ছাত্রকে এ বছর সেমেস্টারের তিনটি পত্রে বসতে দেওয়া হবে না। হস্টেল থেকে ওই তিন জনকেও বরাবরের মতো বহিষ্কার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। তাঁদের অভিভাবকদেরও ডেকে পাঠানো হয়েছে। আরও ন’জন ছাত্রের অভিভাবককে লিখিত মুচলেকা দিতে হবে বলে জানান উপাচার্য।
প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলার স্বার্থেই যে এই সিদ্ধান্ত, উপাচার্য তা-ও জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “গুটিকয়েক ছাত্রের জন্য বেসু-র নাম কলঙ্কিত হবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। তাই আমরা কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।” ওই দিনের ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীদেরও দায়ী করেছেন তিনি। তাঁর আক্ষেপ, “তিন বছর ধরে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গঠনমূলক পরিবেশ তৈরি করা গিয়েছে। সে-রাতেও ছাত্রদের নাটক দেখছিলাম আমরা। নিরাপত্তাকর্মীরা অনায়াসে আমাদের খবর দিতে পারতেন। তা হলে ঘটনা এত দূর গড়াতই না।”
এই ঘটনার পরে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তাঁরা কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন?
বেসু-র নিয়ম অনুযায়ী রাত ১০টার পরে কোনও ছাত্রের ক্যাম্পাসের বাইরে থাকার কথা নয়। এখন থেকে ওই নিয়ম কঠোর ভাবে মানা হবে বলে জানান উপাচার্য।
রবিবার অন্যের হয়ে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিতে গিয়ে বেসু-র এক ছাত্র পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তাঁর ব্যাপারে অবশ্য এখনও কোনও ব্যবস্থা নেননি বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য বলেন, “পুলিশ ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করেছে। তাই আমরা এখনই আলাদা ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছি না।” |