সিপিএম-তৃণমূলের মিছিল ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় ধৃত সিপিএম নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে সরব হলেন সিটু নেতৃত্ব ও শহরের বিদ্বজ্জনদের একাংশ। আজ, বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি আদালতে ওই মামলার শুনানি হবে। ওই ঘটনায় ৫১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৫ জন মহিলা সিপিএম কর্মী শর্তসাপেক্ষে জামিনে ছাড়া পেলেও বাকিরা জেলে। এ দিন সকলের জামিনের আবেদন জানানো হবে বলে তাঁদের আইনজীবীরা জানিয়েছেন। ওই ঘটনায় ধৃতদের মধ্যে ৬৫ বছরের সঙ্গীত শিল্পী চঞ্চল চক্রবর্তীও রয়েছেন। সে জন্য বামপন্থী লেখক, নাট্যকর্মী, চিত্রশিল্পীদের অনেকেই সরব হয়েছেন। ইতিমধ্যেই বিদ্বজ্জনদের একাংশের তরফে ১ লক্ষ লিফলেট ছাপিয়ে তা বিলি করা হয়েছে। এ দিকে, বুধবার সন্তোষের পায়ে বেড়ি পরানোর ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবিতে মুখে কালো কাপড় বেঁধে ধিক্কার মিছিল করেন সিপিএমের নেতা-কর্মীরা। শহরের দলীয় কার্যালয় অনিল বিশ্বাস ভবন থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরে ওই ধিক্কার মিছিল। |
মুখে কালো কাপড় বেঁধে শিলিগুড়িতে সিপিএমের ধিক্কার মিছিল। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
বিদ্বজনদের একাংশের অভিযোগ, ১০ এপ্রিলের ওই ঘটনায় মিথ্যে মামলা সাজিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে চঞ্চলবাবুর মতো শিল্পীকে। ভারতীয় গণনাট্য সংস্থার দার্জিলিং জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শক্তিপ্রসাদ আইচ বলেন, “দ্রুত ওই ব্যক্তিদের ছাড়ার ব্যবস্থা না হলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথে যাব।”
সিপিএমের নেতা-কর্মীদের রাজ্য সরকার মুক্তির ব্যবস্থা না-করলে বন্ধের হুমকিও দিয়েছেন সিটু নেতৃত্ব। বুধবার শিলিগুড়িতে দলের জেলা কার্যালয়ে এক সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এ কথা জানান তাঁরা। সিটু নেতা তথা সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম ঘোষের অভিযোগ, “মিথ্যা মামলায় আমাদের কর্মীদের ফাঁসিয়ে রাজ্যে ক্ষমতাসীন সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে।” এ ভাবে হুমকি দিয়ে সিটু নেতৃত্ব বিচারাধীন মামলা প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে বলে পাল্টা অভিযোগও উঠেছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য করা এবং সেই ইস্যুতে বন্ধের হুমকি দেওয়া আইন ভাঙার সামিল। তাতে গণতন্ত্র মানা হয় না।”
তৃণমূলের মিছিলে হামলার অভিযোগে পুলিশ সিটু-সহ সিপিএম নেতা-কর্মীদের একাংশকে গ্রেফতার করে। সিটু নেতৃত্ব ঘটনার প্রতিবাদে নিষ্ক্রিয় থাকায় সংগঠন ও দলের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এমনকী, নেতৃত্বের একাংশকে ভর্ৎসনাও করা হয়েছে বলে দলেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। এর পরেই এ দিন তারা সাংবাদিক বৈঠক করে সরব হন। সিটু নেতা গৌতম ঘোষ অবশ্য ভর্ৎসনার বিষয়টি স্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার জেল হেফাজতে থাকা ৫১ জন সিপিএম নেতা-কর্মীদের জামিন না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাব। প্রয়োজনে বন্ধের রাস্তাতেও যেতে পারি।” দলের নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে নিক্রিয় থাকার অভিযোগ মানতে চাননি ওই সিটু নেতা।
সিটু সূত্রেই জানা গিয়েছে, আন্দোলনের ব্যাপারে বাম সংগঠনগুলি এমনকী আইএনটিইউসির সঙ্গেও তাদের কথা হয়েছে বলে জানান। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, “সিটু বা সিপিএম কোনও সময়ই আইনকে তোয়াক্কা করে না। তাই বিচারাধীন বিষয়ে এই ধরনের হুমকি দিয়ে বিচারকের রায়কে প্রভাবিত করতে চাইছেন। ৩৪ বছর বামফ্রন্ট এই বেআইনি পথেই শাসন চালিয়ে এসেছেন। কিন্তু বর্তমানে আইনি শাসন ফিরেছে। আইন আইনের পথেই চলবে। একজন মন্ত্রী হিসেবে আমি মামলা নিয়ে মন্তব্য করব না।”
সন্তোষ সাহানির পায়ে বেড়ি পরানোর প্রতিবাদে জলপাইগুড়িতেও বুধবার মিছিল করে ডিওয়াইএফ ও এসএফআই। শিলিগুড়িতে সিপিএম-তৃণমূল গণ্ডগোলের পর রাজনৈতিক দলগুলির সভা ও মিছিল করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল প্রশাসন। রবিবার তা তুলে নেওয়া হয়। এর পরেই এ দিন পথে নামে সিপিএমের ওই দুই শাখা সংগঠন।
|