জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির দখল কার্যত বিনা লড়াইয়ে জিততে চলছে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির নির্বাচন। সমিতির ৯টি পদের মধ্যে ৬টিতে ইতিমধ্যেই তৃণমূল এবং কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জয়ী হয়েছেন। ৩ আসনের জন্য এদিন জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রয়াস হলে ভোট গ্রহণ হবে। যদিও কংগ্রেসের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বোর্ডে বামপন্থীদের সমর্থন করার প্রশ্নই নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে ইতিমধ্যে জয় পেয়ে যাওয়ায় পরিচালন সমিতির দখল তৃণমূলের হাতে আসা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা বলেই রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই মনে করছেন। ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠার পরে প্রথম বাম বিরোধীরা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বোর্ডের দখল নিতে চলেছে। সমিতির দখল নিশ্চিত জেনেও ৩টি আসন জিততেও প্রচারে কোনও কসুর ছাড়ছে না তৃণমূল কংগ্রেস।
গত ডিসেম্বরে মূলত অনিয়মের অভিযোগ তুলেই বামপন্থীদের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিল তৃণমূল। অনিয়মের অভিযোগেই গ্রেফতার হয়েছিলেন ব্যাঙ্কের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক গোবিন্দ রায়সহ প্রাক্তন এক কার্যনির্বাহী আধিকারিক এবং ম্যানেজার। তৃণমূল পরিচালিত পরিচালন সমিতির অভিযোগ, ব্যাঙ্কের ঋণ সংক্রান্ত নথি ঘেটে ৪৩ কোটি টাকার অনিয়মের হদিস মিলেছে। তবে অনিয়মের অভিযোগের পরিবর্তে এখন নির্বাচনে তৃণমূলের হাতিয়ার গত তিন মাসে সমিতির সাফল্য।
গত দু’মাসে ১২ কোটি টাকার বকেয়া ঋণ আদায় করা হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রে দাবি করা হয়। ব্যাঙ্কের বকেয়া ঋণের অঙ্ক গত আর্থিক বছরে যেখানে প্রায় ৭০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছিল, সেই সময়ে গত দু মাসে ১২ কোটি ঋণ আদায় করতে পারা রেকর্ড বলে দাবি করেছে তৃণমূল পরিচালিত সমিতি। গত আর্থিক বছরে কৃষকদের দেওয়া ৬৪ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৪৫ কোটি টাকাই গত তিন মাসে মঞ্জুরি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে, বিলি করা হয়েছে ৭০ হাজার কিষাণ ক্রেডিট কার্ড। আরও ৫৬ কোটি টাকা কৃষকদের ঋণ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান তথা সরকারি মনোনীত প্রতিনিধি সৌরভ চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে বলেন, “রাজ্যে পরিবর্তন আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী আমাদের যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা পালন করতেই কৃষি ঋণে জোর দেওয়া হয়েছে। আগের সময়ে কৃষকদের ঋণ না দিয়েই কোটি কোটি টাকা নিজেদের পকেটে পুড়েছে সমিতির সদস্যরা। গত ৩ মাসে কৃষকদের ঋণ দেওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। ব্যাঙ্কে পরিষেবার ক্ষেত্রেও আমূল রদবদল হয়েছে।” পাশাপাশি চাষিকে সহজে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কের হেল্প লাইন চালু, শহর এবং লাগোয়া এলাকায় এটিএম পরিষেবা চালুর বিষয়টিও প্রচারে তুলে ধরেছে তৃণমূল।
অন্য দিকে ৩ আসনের জন্য লড়াই চালাচ্ছে সিপিএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লক। সিপিএমের জোনাল কমিটির সদস্য বাদল গুহ বলেন, “আমরা সমিতির ক্ষমতায় আসতেও চাই না। তবে ব্যাঙ্কের কাজকর্ম যাতে সুষ্ঠ ভাবে চলে সে কারণে আমাদের প্রতিনিধিদের বোর্ডে রাখতে নির্বাচনে লড়ছি। ব্যাঙ্ক সুষ্ঠ ভাবে চালাতে সহযোগিতা করব এই কথা বলেই সাধারণ ভোটারদের কাছে যাওয়া হচ্ছে।” ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা মিহির সেনগুপ্ত বলেন, “তৃণমূল সরকার গত ডিসেম্বর মাসে জোর করে অনাস্থা অনে বোর্ড গড়েছিল। এর প্রতিবাদ করেই ভোট চাইছি। শুধু তৃণমূল নয় কংগ্রেসও তো জিতেছে দেখাই যাক না কী হয়।”
তবে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জেতা কংগ্রেসের সদর ব্লক সভাপতি লুৎফর রহমান বলেন, “যদিও সমবায় নির্বাচন অরাজনৈতিক, তবু এতদিন বোর্ডে থেকে বামপন্থীরাই যাবতীয় অনিয়ম করেছে। এবারের বোর্ডে বামপন্থীদের সমর্থন করার কোনও প্রশ্নই নেই।” |