ঘরের নলি কাটা অবস্থায় সদ্যোজাত শিশুকন্যার দেহ উদ্ধারের ঘটনাকে ঘিরে রহস্য দানা বাঁধছে শিলিগুড়িতে। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়ির শান্তিপাড়ার শ্রীনগর কলোনিতে। শ্বাসরোধ করে গলার নলি কেটে সদ্যোজাতকে খুনের অভিযোগ উঠেছে তার মায়ের বিরুদ্ধে। শিশুটির বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ খুনের মামলা রুজু করেছে। ব্লেড ও ফিতে বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। তবে অভিযুক্ত প্রসূতি অসুস্থ থাকায় তাঁকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। শিশুটির মায়ের দাবি, “আমি খুন করিনি। ব্লেড কোথা থেকে কে আনল তা বলতে পারব না। আমি পরিস্থিতির শিকার।” শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমার জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে ওই মহিলাকে আটক করা হয়েছে। সিপি বলেন, “অসুস্থ থাকায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সুস্থ হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ঘটনার তদন্ত চলছে।”
পুলিশ জানায়, ২০ বছর বয়সী ওই মহিলার নাম দীপা দাস। হতদরিদ্র পরিবারের বধূটির স্বামী পূণ্য গ্রিল কারখানায় কাজ করেন। তাঁদের ২ বছর বয়সী ছেলে রয়েছে। বাড়িতে শাশুড়ি ও ননদের সঙ্গে থাকেন বধূটি। শাশুড়ি গীতা দেবীর দাবি, ঘটনার সময়ে তাঁরা অন্য ঘরে ছিলেন। অন্য ঘরে দীপার স্বাভাবিক প্রসব হয়। সেই সময়ে দীপা ব্লেড দিয়ে নাড়ি কেটেছেন বলে গীতা দেবীর দাবি। তাঁর সন্দেহ, দীপাই ফিতে দিয়ে সদ্যোজাতের গলায় ফাঁস দিয়ে মেরে ব্লেড দিয়ে নলি কেটে দিয়েছে। কিছুক্ষণ পরে একটি গামলায় রক্তমাথা জামাকাপড়ের নিচে শিশুর দেহ দেখে ননদ চেঁচামেচি করলে তিনি ছুটে যান বলে গীতা দেবীর দাবি। বধূর স্বামী পূণ্যের অভিযোগ, “দীপাকে বহুবার হাসপাতালে নিতে চেয়েছি। ও রাজি হয়নি। ও যে এমন ভাবে বাচ্চাকে মেরে ফেলবে তা ভাবিনি। মায়ের মুখে সব শুনে থানায় খুনের অভিযোগ করেছি।”
কিন্তু, পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে শাশুড়ির ভূমিকা নিয়েও ধন্দে পড়েছে। পাশের ঘরে প্রসব বেদনা ওটা পুত্রবধূর আওয়াজ তিনি কেন পাননি সেটা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। পাশাপাশি, কন্যা সন্তান হলে দীপাকে তাড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়েছিল বলে প্রতিবেশীদের কয়েকজন সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তা কতটা সত্যি সেটাও দেখছে পুলিশ।
এভাবে গর্ভবতী কোনও মহিলা একাই সন্তানের জন্ম দিয়ে নিজেই নাড়ি কাটতে পারেন কি না তা নিয়ে চিকিৎসক মহলেও বিতর্ক রয়েছে। প্রসবের ব্যাথা উঠলে চেঁচামেচি করাই স্বাভাবিক। তা হলে এমন নিঃশব্দে প্রসব হওয়া সম্ভব?
শিলিগুড়ির স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মল্লিকা মুখোপাধ্যায় বলেন, “অনেক সময়ে স্বাভাবিক ভাবে প্রসব হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাস্তাতেও হয়। কিন্তু, প্রসবের পরে নাড়ি কেটে সদ্যোজাতকে মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন করা ও প্ল্যাসেন্টা বার করা প্রসূতির নিজের পক্ষে কার্যত অসম্ভব। চিকিৎসা শাস্ত্রে এমন ঘটনার কথা আমি অন্তত শুনিনি। পরিবেশ-পরিস্থিতি প্রসবের সময়ে ঠিক কি ছিল তা জানা জরুরি।” একই ভাবে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ মলয় রায় বলেন, “এমন ঘটনার কথা কখনও শুনিনি। খুবই অস্বাভাবিক ঠেকছে। বিশদে তদন্ত হলে স্পষ্ট হবে।” পক্ষান্তরে, স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ সীমা রায় ও কৃষ্ণ চন্দ্র (কে সি) মিত্র প্রায় একই সুরে জানান, প্রসবের সময়ে রোগিণী চিৎকার না-ও করতে পারেন। তবে কোন পরিস্থিতিতে, কী হয়েছে তা জানলে বিশদে মন্তব্য করা সম্ভব বলে তাঁরা জানিয়েছেন। |