এসএফআই নেতা সন্তোষ সাহানিকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পায়ে বেড়ি পরিয়ে রাখার ঘটনার আলাদা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর এবং মানবাধিকার কমিশন। কিন্তু বুধবারেও ওই হাসপাতালে পায়ে বেড়ি পরানো অবস্থায় দেখা গিয়েছে তিন জেল-বন্দিকে। সন্তোষের মতো এই তিন জনের ঘটনা জানাজানি হতেই, তড়িঘড়ি তাঁদেরও বেড়ি খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই তিন জনের মধ্যে দুর্গাপুরের হাজি আবু বক্করের বয়স ৮০ ছুঁইছুঁই। তিনি জমি-বিবাদের জেরে খুনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তেঁতুলিয়ার আবদুল সামাদ বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের দায়ে বন্দি রয়েছেন। কালিম্পঙের শৈলেশ ডার্নালও খুনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। আবু বক্কর বললেন, “৩ এপ্রিল থেকে হাসপাতালে রয়েছি। বুকে ব্যথা। পায়ে শিকল বেঁধে রেখেছে। নড়তে পারি না।” মেঝেয় জায়গা পাওয়া আবদুল সামাদের পা অন্য একটি শয্যার পায়ার সঙ্গে শিকল দিয়ে বাঁধা। সামাদ বলেন, “এই কষ্টের চেয়ে মরে যাওয়া ভাল।” কালিম্পঙের শৈলেশ অবশ্য ‘বেড’ পেয়েছেন। তিনি বললেন, “শিকল দিয়ে বেঁধে রক্ষীরা যে কোথায় চলে যান জানি না। অনেক সময়ে প্রকৃতির ডাক এলেও রক্ষীরা না থাকায় চেপে রাখতে হয়।” |
অন্য রোগীরা জানান, সকালে ও বিকেলে দু’দফায় বেড়ি খুলে শৌচাগারে নিয়ে যাওয়া হয় ওই তিন জনকে। দিনের অন্য সময়ে ডাকাডাকি করা হলেও রক্ষীদের দেখা মেলা ভার। সামাদ, বক্করদের অভিযোগ বহু বার বেড়ি খুলতে আর্জি জানানো হলেও হাসপাতাল কিংবা জেলের তরফে কেউ উদ্যোগী হননি।
রাজ্য পুলিশের আইজি (উত্তরবঙ্গ) অনুজ শর্মা বলেন, “এ ভাবে কোনও বন্দিকে আটকে রাখা যায় না। খোঁজ নিয়ে যা করার, করছি।” উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের সুপার সব্যসাচী দাস জানান, তাঁরাও খবর পেয়েই জেল কর্তৃপক্ষকে ওই তিন জনের বেড়ি খুলে দিতে বলেছেন। শিলিগুড়ির স্পেশাল জেলের সুপার থুপদেন ভুটিয়া বলেন, “বন্দিদের পায়ে বেড়ি দেওয়া যাবে না বলে কারারক্ষীদের জানিয়ে দিয়েছি। সব খুলে দেওয়া হয়েছে।”
সন্তোষ সাহানির প্রতিক্রিয়া, “সবাই তো মানুষ। তা হলে পশুর মতো তাঁদের বেঁধে রাখার নিয়ম যারা চালু করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?” সংবাদমাধ্যমে সন্তোষের ঘটনা জেনে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। কমিশনের রেজিস্ট্রার রবীন্দ্রনাথ সামন্ত বলেন, “আইজি (উত্তরবঙ্গ) যাতে নিজে তদন্ত করে দু’সপ্তাহের মধ্যে মতামত-সহ রিপোর্ট পাঠান, সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” মহাকরণে স্বরাষ্ট্র সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কারা দফতরের আইজি (রণবীর কুমার) ওই ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট দেবেন।”
শিলিগুড়ির এই কাণ্ড নিয়ে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। তাঁর মন্তব্য, “গনি খান চৌধুরী যখন প্রদেশ সভাপতি ছিলেন, তখন আমাদের এক কর্মীকে পুলিশ ধরে। তাঁর পায়েও সন্তোষের মতো বেড়ি পরিয়ে রাখা হয়। সে দিন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (তখন কংগ্রেসে) মহাকরণে স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিলেন। সেই মমতা শিলিগুড়ি-কাণ্ডে প্রতিক্রিয়া দিলেন না। কারণ, তিনি পুলিশকে দলদাসে পরিণত করেছেন।”
সন্তোষ সাহানির ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে শিলিগুড়িতে এ দিন মুখে কালো কাপড় বেঁধে মিছিল করেন সিপিএমের নেতা-কর্মীরা। |