শিলিগুড়িতে মঙ্গলবার সন্তোষ সাহানি নামে এক এসএফআই নেতাকে হাসপাতালে পায়ে বেড়ি পরিয়ে রাখা হয়েছিল। মানবাধিকার লঙ্ঘনের এ ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্য সরকার। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব ঘটনার প্রতিবাদ জানান। চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত বেড়ি খুলে দেওয়া হয়।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু এ ঘটনাকে রাজ্য সরকারের ‘অমানবিক মুখ’ বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর অভিযোগ, “রাজ্যে যা হচ্ছে, তা জরুরি অবস্থার থেকেও ভয়ংকর।” সন্তোষের পায়ে বেড়ি পরানোর ঘটনায় বিব্রত উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবও। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী সব সময় বলেন, সরকারের মানবিক মুখ রাখতে হবে। সে কথা মাথায় রেখেই বেড়ি খুলে দিতে বলেছি।” কেন, কার নির্দেশে সন্তোষের পায়ে বেড়ি পরানো হল, তা নিয়েও গৌতমবাবু রিপোর্ট চেয়েছেন। তিনি বলেন, “সবই মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব। যা করণীয় তিনিই করবেন।” ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি দাবি করে সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা এর বিরুদ্ধে মানবাধিকার কমিশনে যাব।” |
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সন্তোষ সাহানি। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
উত্তরবঙ্গের ছাত্র সন্তোষ কলকাতায় বাম-ছাত্রদের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর সামনেই সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যু হয়েছিল বলে বিমানবাবু জানান। শিলিগুড়িতে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষের পরে প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিয়ে গ্রেফতার হন সন্তোষ। জেল-হাজতে অসুস্থ হয়ে পড়ায় সোমবার তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সন্তোষ মুক্ত থাকলেও রাতে তাঁর পায়ে বেড়ি পরানো হয়েছে বলে অভিযোগ।
সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি জানজানির পরেই প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী পুলিশ, জেল কর্তৃপক্ষ ও হাসপাতাল সুপারকে ফোনে ভর্ৎসনা করে অবিলম্বে বেড়ি খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তবে প্রাক্তন মন্ত্রী অশোকবাবুর অভিযোগ, “শাসক দলের মন্ত্রীর নির্দেশেই এই অমানবিক কাজ হয়েছে। বেড়ি থাকায় সন্তোষ রাতে শৌচাগারে যেতে পারেনি। বাড়ির লোকজন বললেও নিরাপত্তা রক্ষী বেড়ি খোলেননি।”
সন্তোষের পাহারার দায়িত্বে ছিলেন এক জন কারারক্ষী। তিনিই ওই বেড়ি পরান বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ি বিশেষ সংশোধনাগারের সুপার থুপদেন ভুটিয়া বলেন, “আমরা সন্তোষকে পুলিশ সেল-এ রাখার জন্য আবেদন করেও সাড়া পাইনি। তাই এক কারারক্ষীকে পাহারায় রাখা হয়। তিনি নিরাপত্তার কারণে বেড়ি পরিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।” শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমার বলেন, “পুরোটাই জেল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।” উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের সুপার সব্যসাচী দাস বলেন, “সোমবার সকালে যখন ভর্তি করানো হয়, সে সময় রোগীর পায়ে বেড়ি বা অন্য কিছু বাধা ছিল না। রাত ৮টা নাগাদ ফের যখন ওঁর সঙ্গে দেখা করতে যাই, তখন বিছানায় একটি ‘হ্যান্ড কাফ’ বাধা ছিল। সেটা পায়ের সঙ্গে বাধা ছিল না বলেই মনে হচ্ছে।” বেড়ি-কাণ্ডের সূত্র ধরে সরকারের ‘মানবিক মুখ’ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। তাঁর অভিযোগ, সিপিএমের যুব কর্মী অমিত দে-কে মায়ের শেষকৃত্যের জন্যও জামিন দেওয়া হয়নি। এখন জেলে থেকে কী করে মায়ের শ্রাদ্ধের কাজ করবে অমিত তা বুঝতে পারছেন না। বিমানবাবু বলেন, “চার দিকে সরকারের মানবিক মুখের বিজ্ঞাপন দেখছি। আর সরকার অমানবিক কাজ করছে। সরকারের আমানবিক, অগণতান্ত্রিক কাজের বিরুদ্ধে সব গণতন্ত্রপ্রিয়, শুভবুদ্ধির মানুষের প্রতিবাদ করা উচিত।” |