সুর নরম গুরুঙ্গের, আশ্বাস মসৃণ জিটিএ-র
রাজ্যের সঙ্গে সংঘাত নয়, মোর্চাকে পরামর্শ রাষ্ট্রপতির
দার্জিলিং পাহাড়ে গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) চালাতে গিয়ে যে জট তৈরি হয়েছে তা ছাড়াতে এ বার আসরে নামলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। বুধবার গ্যাংটকে বিমল গুরুঙ্গ-সহ মোর্চার শীর্ষনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। রাষ্ট্রপতি মোর্চা নেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন, জিটিএ-র কাজে ব্যাঘাত ঘটে এমন কিছু যেন তাঁরা না করেন। তাতে পাহাড়ের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। মোর্চা নেতাদের তিনি এ-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাত বজায় রাখলে কেন্দ্রীয় সরকারকেও পাশে পাওয়া যাবে না। জিটিএ-র স্বার্থেই রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতে না যাওয়া ঠিক হচ্ছে না বলে মোর্চার অন্দরেও মত জোরালো হয়ে উঠছিল গত কিছু দিন ধরে। বিমল গুরুঙ্গ এই অবস্থায় ‘পিতৃসম’ রাষ্ট্রপতির পরামর্শ মেনে আজ ঘোষণা করে দিয়েছেন, তাঁরা মসৃণ ভাবেই পুরো ৫ বছর জিটিএ চালাতে চান।
মোর্চা নেতারা মনে করছেন, দার্জিলিঙের ভৌগোলিক গুরুত্ব এবং পাহাড়ের সমস্যার সংবেদনশীলতা বুঝেই দেশের সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে প্রণববাবু কেন্দ্র, রাজ্য ও মোর্চার মধ্যে মেলবন্ধন ঘটাতে উদ্যোগী হয়েছেন। এতে জিটিএ প্রতিনিধিরা যতটা উদ্দীপিত, ততটাই আশাবাদী রাজ্য সরকারও। উভয় তরফেরই অনেকে আশা করছেন, খোদ রাষ্ট্রপতি প্রধান মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নেওয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতাদের মধ্যে দূরত্ব কমবে। তাঁদের সম্পর্কের বরফ গললে তবেই পাহাড় পুরোপুরি স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে বলে আশা করছেন পাহাড়বাসীও।
সিকিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন। বুধবার গ্যাংটকে। ছবি: পিটিআই
রাষ্ট্রপতির অভিভাবকসুলভ পরামর্শ পাওয়ার পরেই মোর্চা নেতারা ফের রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের কথা ভাবছেন। মোর্চার প্রতিনিধিরা শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন বলেও মোর্চা সূত্রের খবর। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “আমরা সোমবার ফের দিল্লি যাচ্ছি। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আরও এক বার দেখা করার অনুমতি চেয়েছি। আমাদের প্রতিনিধি দল যাবে কলকাতাতেও। দিনক্ষণ শীঘ্রই চূড়ান্ত হয়ে যাবে। আমরা চাই তাড়াতাড়ি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হোক।”
জিটিএ সূত্রের খবর, রাষ্ট্রপতির সিকিম সফরের কথা জেনে আগে থেকেই মোর্চা নেতারা সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে মোর্চা নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল রাষ্ট্রপতির অফিস থেকেই। তাই রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে সাক্ষাতের অনুমতি মিলতে সমস্যা হয়নি। সেই মতো বিমল গুরুঙ্গ, রোশন গিরি, হরকাহাবাদুর ছেত্রীর নেতৃত্বে মোর্চা প্রতিনিধিরা গ্যাংটকে যান। সেখানে রাজভবনে গিয়ে তাঁরা জিটিএ-এর বর্তমান সমস্যা এবং উন্নয়নের দাবিদাওয়া নিয়ে স্মারকলিপি দেন রাষ্ট্রপতিকে। প্রণববাবু এ প্রসঙ্গে পরে বলেন, “আমার সঙ্গে জিটিএ নেতারা দেখা করতে এসেছিলেন। আমার কাছে তাঁরা একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন।” তাতে মোর্চার দাবিগুলির একটি হল, পাহাড়ে একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠন। সরকারি সূত্রের খবর, রাষ্ট্রপতি তাঁদের জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না। তবে মোর্চাকে দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলতে হবে রাজ্য সরকারের সঙ্গেও। কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলব, রাজ্যের সঙ্গে নয় এমন অবস্থান থেকে মোর্চা নেতাদের সরে আসার পরামর্শ দেন রাষ্ট্রপতি। কার্যত তিনি মোর্চা নেতাদের এই বার্তাই দিয়েছেন যে, রাজ্যের সঙ্গে সংঘাত বজায় রাখলে কেন্দ্রকেও পাশে পাওয়া যাবে না।
মমতার সঙ্গে গুরুঙ্গদের সংঘাত চরমে উঠেছিল লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের প্রশ্নে। কেন্দ্রের কাছে মোর্চা অভিযোগ জানায়, রাজ্য সরকার জিটিএ-র কাজে নাক গলাচ্ছে। মোর্চার কট্টরপন্থীদের চাপে অলিখিত ভাবে বিধানসভার অধিবেশন বয়কট করা শুরু করেন দলের বিধায়করা।
তবে মোর্চার অনেকের মত ছিল, জিটিএ-র সুবিধার্থেই বিধায়কদের বিধানসভায় থাকা দরকার। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা এ-ও স্বীকার করেন যে, বিপদে-আপদে তো বটেই ছোটখাটো অনুষ্ঠানে যোগ দিতেও মুখ্যমন্ত্রী পৌনে দু’বছরে অন্তত ১২বার পাহাড়ে এসেছেন। অনেক কাজে গতি এসেছে এতে।
এই অবস্থায় মোর্চা নেতারা সুর নরম করে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন আগেই। এ বার রাষ্ট্রপতির পরামর্শ মেনে রাজ্যের সঙ্গে ফের সুসম্পর্ক গড়ার ব্যাপারে মোর্চার প্রায় সব নেতাই একমত হয়েছেন। এবং তারই ভিত্তিতে গুরুঙ্গ আজ মসৃণ ভাবে পুরো মেয়াদ জিটিএ চালানোর আশ্বাস দিয়েছেন। দিল্লিতে যোজনা কমিশনে বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাই সৌজন্যের খাতিরেও তাঁর সঙ্গে দেখা করা উচিত বলে মত প্রকাশ করেছেন মোর্চার অনেক প্রবীণ নেতা।
পাহাড়কে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে যে মনমোহন সরকার তৈরি, সেটা দিল্লি আগেও বলেছে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশের সাম্প্রতিক দার্জিলিং সফর মনমোহন ও মমতা সরকারের মধ্যে দূরত্ব বাড়ালেও দিল্লি এটা বুঝতে পারছে যে, পাহাড় নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য দূরত্ব তৈরি হলে বিপদ। সেই কারণেই উদ্যোগী হয়েছেন প্রণব।
অতীতে জ্যোতি বসুর সঙ্গে সুবাস ঘিসিংয়ের সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। পরে দু’তরফের উদ্যোগেই সংঘাত মিটিয়ে নেওয়া হয়। সিপিএমের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক হরকিষেণ সিংহ সুরজিৎ-ও সে বার এ বিষয়ে তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুটা সিংহের সঙ্গে কথা বলেছিলেন।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.