|
|
|
|
রাষ্ট্রপতির আর্জিতে বন্ধ তোলার ইঙ্গিত মোর্চার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ে র ‘অনুরোধ’-এই মুখরক্ষার রফাসূত্র খুঁজে পেল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। মার্চে পাহাড়ে দু’দফায় মোট চার দিন বন্ধ এবং সরকারি অফিস-ধর্মঘটের ডাক প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দিল তারা।
রাজ্য সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির পরে সম্প্রতি পাহাড়ে এই বন্ধ ও ধর্মঘটের ডাক দিয়ে ফেলে কিছুটা বিপাকেই পড়েছেন মোর্চা নেতৃত্ব। চা-বাগান থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সারা পাহাড় জুড়েই
মার্চে শুরু হয় নতুন মরসুম। |
|
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিমল গুরুঙ্গ ও রোশন গিরি।—নিজস্ব চিত্র |
ভিড় উপছে পড়ে পর্যটকদেরও। সে কারণে বিভিন্ন মহল থেকে আন্দোলনের ডাক তুলে নিতে মোর্চা নেতৃত্বের উপরে ঘরে-বাইরে চাপ তৈরি হয়। মোর্চা নেতৃত্ব তাই এমন একটি পথের সন্ধানে ছিলেন, যাতে নিজেদের মর্যাদা অটুট রেখেই বন্ধ তুলে নেওয়া যায়। বুধবার দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরে মোর্চা নেতারা যেন সেই পথটিই পেয়ে যান। মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গকে পাহাড়ের বন্ধ ও ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে বলেন রাষ্ট্রপতি। বৈঠক সেরে বেরিয়েই মোর্চা নেতা হরকাবাহাদুর ছেত্রীও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মন্তব্য করে দেন, “রাষ্ট্রপতি যখন অনুরোধ করেছেন, তখন তাঁকে তো সম্মান দিতেই হবে।”
গুরুঙ্গের কথা থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, বন্ধ নিয়ে দলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে দার্জিলিংয়ে
ফিরে। শিলিগুড়ি থেকে দিল্লি রওনা হওয়ার আগেই গুরুঙ্গ রাষ্ট্রপতিকে ‘পিতৃতুল্য’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। কাজেই তাঁর ‘অনুরোধ’-এ মোর্চা নেতারা সাড়া দেবেন বলে পাহাড়বাসীও আশা করছেন।
তবে মোর্চার যতই দিল্লির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে, ততই দূরত্ব বাড়ছে মহাকরণের সঙ্গে। মোর্চা নেতারা জেনেবুঝেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সির সঙ্গে দিল্লিতে গিয়ে বৈঠক করেছেন। দীপার সঙ্গেই তাঁরা গিয়েছেন
রেলমন্ত্রী পবন বনসল ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের সঙ্গে বৈঠক করতে। দীপার সঙ্গে তাঁদের এমন সম্পর্ক আগে দেখা যায়নি। রোশন গিরির মন্তব্য, উনি পাহাড়ের মানুষের ‘তকলিফ’ বুঝেছেন। তৃণমূলের উত্তরবঙ্গ কোর কমিটির চেয়ারম্যান গৌতম দেবের অবশ্য হুঁশিয়ারি, “মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে উন্নয়নে গতি এনেছেন। এখন এলাকার কোনও কংগ্রেস নেতা আলোচনার নাম
করে উস্কানি দিলে, তাতে ফল
খারাপই হবে।”
শিন্দে এবং গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশের কাছে রাজ্য সরকারের নামে সরাসরি নালিশ-অভিযোগও করেছেন মোর্চা
নেতারা। সেই ধারা অব্যাহত রেখে আজ রাষ্ট্রপতির কাছেও রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন গুরুঙ্গ-রোশনরা। রোশন বলেন, “রাষ্ট্রপতিকে বলেছি, রাজ্য সরকার জিটিএ-কে ঠিক মতো কাজ করতে দিচ্ছে না। চুক্তি অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না।” মোর্চা নেতাদের প্রধান অভিযোগ, তাঁদের আপত্তিতে কান না দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করেছেন। গোর্খা আন্দোলনের সময় মোর্চা-সদস্যদের বিরুদ্ধে যে সব মামলা হয়েছে, তা প্রত্যাহৃত হয়নি। রোশনের অভিযোগ, মোট ৩৯৮টি মামলা ঝুলে রয়েছে। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর এ বিষয়ে পর্যালোচনা কমিটির বৈঠকও হয়েছে। সে দিন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব প্রতিশ্রুতি দেন, ১০ দিনের মধ্যে দেড়শো মামলা প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু তা হয়নি।
পাহাড়ে এই নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়ে ইতিমধ্যে জল্পনাও
শুরু হয়েছে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে দার্জিলিং কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থীকে মোর্চা সমর্থন করবে, এমন জল্পনাও রয়েছে।
তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পরে গুরুঙ্গের মুখে একাধিকবার সিপিএমের প্রশংসাও শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি সীতারাম ইয়েচুরির নেতৃত্বাধীন সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সুপারিশ করেছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য নির্দিষ্ট সুযোগ-সুবিধা দার্জিলিংয়েও দেওয়া হোক। সেই সুপারিশও কার্যকর করার দাবি তুলছে মোর্চা। হরকাবাহাদুর ছেত্রীর বক্তব্য, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হোন বা দীপা দাশমুন্সি বা সীতারাম ইয়েচুরি, যিনি আমাদের সাহায্য করবেন, আমরা তাঁর সঙ্গেই আছি।” |
|
|
|
|
|