|
|
|
|
তৃণমূল নেতাকে ‘খুনের চেষ্টা’ কালিম্পঙে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কালিম্পং ও শিলিগুড়ি |
তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক খাদের কিনারে গেলেও এতদিন যা হয়নি, এ বার তাই-ই ঘটল দার্জিলিং পাহাড়ে। মঙ্গলবার দুপুরে কালিম্পং থানার কাছে রাস্তা আটকে তিন তৃণমূল নেতাকে রড, বাটাম দিয়ে পিটিয়ে, পাথর দিয়ে থেঁতলে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল মোর্চার কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। পুলিশ জানায়, আহতদের নাম ছং ভুটিয়া, গোপাল সিংহ ছেত্রী ও ব্রুনো লেপচা। তাঁদের তিন জনকে প্রথমে কালিম্পং হাসপাতালে ও পরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ছং ভুটিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ চার মোর্চা সমর্থককে গ্রেফতার করেছে। কালিম্পঙের জিটিএ-এর এক সদস্য তথা মোর্চাকে নেতাকেও পুলিশ জেরা করছে। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিনয় তামাং বলেছেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। আমাদের কারও এমন ঘটনায় যুক্ত থাকার কথা নয়। যা ঘটেছে তা
নিয়ে তদন্ত হোক। আইন আইনের পথে চলুক।” |
|
হাসপাতালে ভর্তি তৃণমূল নেতা ছং ভুটিয়া। বুধবার। |
তৃণমূল সূত্রের খবর, আহত তিন জনই কালিম্পঙে জিটিএ নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। সম্প্রতি কলকাতায় গিয়ে তৃণমূল ভবনে বৈঠকের পরে সংগঠন বাড়াতে তাঁরা লাগাতার প্রচারে নামেন। পাশাপাশি, চলতি মাসের শেষে নয়াদিল্লিতে মদন তামাং হত্যা মামলায় ছং ভুটিয়ার সাক্ষ্যদানেরও কথা। তৃণমূলের পাহাড়ের আহ্বায়ক রাজেন মুখিয়ার সন্দেহ, “ছং ওই খুনের ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী এবং কালিম্পঙে তৃণমূলের সংগঠন জোরদারের কাজ দ্রুতগতিতে করছেন। তাই ওঁকে খুনের চেষ্টা হয়েছে। দুই জিটিএ সদস্যের নেতৃত্বে লোহার রড এবং পাথর দিয়ে হামলা করা হয়েছে। আমরা পুলিশকে সব বলেছি।”
এই মারধরের ঘটনায় উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে যাতে কোনও ভাবে অশান্তি না হয়, তা নিশ্চিত করতে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। রাতেই উত্তরবঙ্গের আইজি অনুজ শর্মা, জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন সহ জেলার পদস্থ কর্তারা বৈঠকে বসেন। দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “কারা খুনের চেষ্টা করেছে সেই ব্যাপারে স্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। চার জনকে ধরা হয়েছে। আরও কয়েকজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।” পুলিশ জানায়, ওই তিন জন হেঁটে দলের কাজে যাচ্ছিলেন। সেই সময়ে অন্তত ১০-১৫ জন তাঁদের ঘিরে ধরে হামলা চালায়। থানার অদূরে ওই হামলা হলেও পুলিশ পৌঁছনোর আগেই দুষ্কৃতীরা পালায়। তাই কালিম্পং থানার অফিসারদের একাংশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। |
|
কালিম্পংয়ে প্রহৃত তৃণমূল নেতা ছং ভুটিয়াকে দেখতে হাসপাতালে
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। শিলিগুড়িতে বিশ্বরূপ বসাকের ছবি। |
এদিন রাতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব হাসপাতালে যান। প্রয়োজনে ছং ভুটিয়াকে আরও উন্নত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে বলে তিনি জানান। গৌতমবাবু বলেন, “আমরা পাহাড়ে শান্তি ও উন্নয়ন চাই। কিন্তু মোর্চাকে বিভিন্ন মহল থেকে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। এদিনের ঘটনা তারই পরিণতি। পুলিশকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আমাদের কর্মীদের সংযত থাকতে বলেছি।”
তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান গৌতমবাবুর অভিযোগ, কংগ্রেস নেতাদের একাংশ নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে মোর্চার একাংশকে উস্কানি দিচ্ছেন। যদিও মোর্চা নেতা বিনয় তামাং বলেন, “কারও উস্কানিতে মোর্চা নেতা-কর্মীরা প্ররোচিত হন না।” তিনি বলেন, “কী হয়েছে তা আমরাও খোঁজ নিয়ে দেখছি। পুলিশ কালিম্পঙের আমাদের দলীয় দফতরে ঢুকে নেতাদের ধরে নিয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে জিটিএ সদস্য নিমা তামাং রয়েছেন।”
|
ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
|
|
|
|
|