বেদনাহত কণ্ঠে এবং বেহালার ছড়ে এক পুত্রহারা প্রৌঢ় শোনাচ্ছিলেন, ‘আমি পথভোলা এক পথিক এসেছি’। তাঁর সামনে হাজির জনতা বোধহয় পথ ভোলেনি। এই শহরের বুকে মর্মান্তিক ভাবে প্রাণ হারানো এক ছাত্রের জন্য বাম ছাত্র সংগঠনগুলিরই ডাকা স্মরণসভা ভরিয়ে তুললেন অগুনতি অভিভাবক। সাদা কার্ডে বার্তা লিখে রেখে গেলেন সুদীপ্ত গুপ্তের স্মৃতির উদ্দেশে।
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম চেয়েও সরকারের কাছে অনুমতি মেলেনি। এসএফআইয়ের রাজ্য কমিটির প্রয়াত সদস্য সুদীপ্তের স্মরণসভা তাই সরিয়ে আনতে হয়েছিল দক্ষিণের নজরুল মঞ্চে। রবীন্দ্র সরোবর বরাবর বুধবার বিকালের ভ্যাপসা গরমে উপচে পড়ল ভিড়! প্রেক্ষাগৃহের মেঝেতে বসে ছেলেমেয়েরা। তিন ধার খোলা প্রেক্ষাগৃহের ধাপে ধাপে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন মানুষ। বাইরে সরোবর চত্বরে গিজগিজ করছে মাথা। এই বিশাল জমায়েতই উঠে দাঁড়িয়ে কুর্ণিশ জানাল সুদীপ্তের বাবা প্রণব গুপ্তকে। ছেলের ছবিতে প্রিয় বেহালা ছুঁইয়ে সুর ধরার আগে যিনি বললেন, “খুব কষ্ট নিয়ে আপনারা এসেছেন জানি। বেহালায় গান বাজিয়ে শোনাচ্ছি, যাতে কষ্টটা একটু লাঘব হয়।”
সিপিএম বা বামফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা কেউ মঞ্চে ছিলেন না। রবীন দেব, সুজন চক্রবর্তী, শমীক লাহিড়ীরা বাইরে দাঁড়িয়েই গোটা অনুষ্ঠানে নজর রেখেছিলেন। রবীনবাবুর কথায়, “ছাত্রদের আয়োজনে স্মরণসভা। সেখানে আমাদের শীর্ষ নেতারা কেউ থাকবেন না, এমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা, গান-কবিতা সবই ছাত্রছাত্রীরা করেছে।” এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাস ও রাজ্য সভাপতি মধুজা সেন রায় তো ছিলেনই। তিন শরিক দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্র ব্লক, পিএসইউ এবং এআইএসএফের তরফে সৌম্যদীপ সরকার, মৃন্ময় সেনগুপ্ত ও পার্থ মুখোপাধ্যায় বক্তা ছিলেন। পরে আসেন ছাত্র পরিষদ, ডিএসও, আইসা-র প্রতিনিধিরাও। সৌম্যদীপ স্মরণসভায় প্রশ্ন তোলেন, “দিল্লির ঘটনা অবশ্যই অনভিপ্রেত। কিন্তু এক মন্ত্রীর ছেঁড়া ধুতির দাম যদি এ রাজ্যের দেড় হাজার দলীয় কার্যালয় হয়, তা হলে সুদীপ্তের প্রাণের দাম কত চাইতে পারি আমরা?” সুদীপ্তের মৃত্যুর বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিও ফের উঠেছে এ দিনের সভায়। ঠিক হয়েছে, দেশের সর্বত্র আগামী ২ মে সুদীপ্ত-স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করবে এসএফআই।
|