মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্যের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন সুদীপ্তর বাবা। বললেন, “আমি ভিক্ষা নেব না।”
মৃত এসএফআই নেতার ময়নাতদন্তের দেখভাল করতে বুধবার এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি শুনেছি ওর (সুদীপ্তর) মা মারা গিয়েছেন, দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাবা একা হয়ে পড়েছেন। তাই ওর পরিবারের জন্য যে কোনও রকম সাহায্য করতে আমরা প্রস্তুত। পল্টু রায়চৌধুরীকে (সিপিএমের নেতা) আমি বলেছি, ওই ছেলেটির পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও সাহায্য চাওয়া হলে সরকার তার ব্যবস্থা করবে।”
নিউ গড়িয়ার ঢালুয়ার বাড়িতে তখন ছেলের মৃতদেহের প্রতীক্ষায় বসে রয়েছেন প্রণব গুপ্ত। টিভি মারফত তাঁর কানেও যায় মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের কথা। সদ্য পুত্রহারা পিতা সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্যে তাঁর প্রয়োজন নেই। মুুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “টাকা-পয়সার লোভ দেখাচ্ছেন? আমি নেব না। আমি ভিক্ষা নেব না।” বৃদ্ধের পাল্টা প্রশ্ন, “আমার ছেলেকে কি আপনি ফিরিয়ে দিতে পারবেন?” |
সুদীপ্তর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার আগে ভেঙে পড়েছেন
তাঁর বাবা।
বুধবার নিউ গড়িয়ায় সুদীপ্তর বাড়িতে। ছবি: সুদীপ আচার্য |
পরে সুদীপ্তর দিদি সুমিতা সেনগুপ্ত অবশ্য এবিপি আনন্দে বলেন, “আমি তো বেকার বসে আছি। সরকার কোনও কাজের সুযোগ দিলে আপত্তি নেই।” প্রণববাবু কিন্তু অনড়ই। তিনি ফের বলেন, “কে কোথায় কী বলল, আমার জানার দরকার নেই। সরকারের দেওয়া কোনও অনুদান বা ভিক্ষা আমি নিতে চাই না।”
সুদীপ্তর মৃত্যু নিয়ে মঙ্গলবারই দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন মমতা। এ দিনও এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে বলেন, “যে কোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের অনেক কর্মীও জনসভা থেকে ফেরার সময় রেললাইনের পাশের পোস্টে বা
ট্রাক থেকে পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছেন। আমি সবাইকে বলি সাবধানে চলাফেরা করতে।”
মঙ্গলবারও মুখ্যমন্ত্রী সুদীপ্তর মৃত্যুকে দুর্ঘটনা বলেই আখ্যা দিয়েছিলেন। এ দিনও তিনি সুদীপ্তর মৃত্যু ল্যাম্পপোস্টে ধাক্কা লেগে হয়েছে বলেই মন্তব্য করেন। তদন্ত হওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী এ ভাবে বিবৃতি দেওয়ায় সুদীপ্তর পরিবার যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে প্রণববাবুর প্রশ্ন, “দিদি, এটা কী বিচার হল আপনার! ছেলেটা তিন ঘণ্টা পড়ে রইল। পড়ে পড়ে রক্তক্ষরণ হল। দেখেই অনুমান করেছিলাম, ওকে মেরে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। মুখটা পুরো বিকৃত হয়ে গিয়েছে।”
সিপিএমের পক্ষ থেকেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে। দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু এ দিন আলিমুদ্দিনে বলেন, “(মুখ্যমন্ত্রী) হাসপাতালে গিয়ে ভাল কাজ করেছেন। কিন্তু তার পরে তিনি যা মন্তব্য করেছেন, তা অত্যন্ত খারাপ কাজ হয়েছে।” তাঁর প্রশ্ন, তদন্ত হওয়ার আগেই কী করে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, এটা নিছক দুর্ঘটনা? মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরে কি আর তদন্তের কোনও সুযোগ থাকে? মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, প্রশাসনিক তদন্তে তো তাই লিখে দেওয়া হবে।” |
বুধবার এসএসকেএম হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র |
বিমানবাবু দাবি করেন, মঙ্গলবার হাসপাতালে না গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আইপিএল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাওয়াটা অনেকেই ভাল চোখে দেখেননি। ফলে মুখরক্ষা করতেই এ দিন মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতালে যান। বিমানবাবুর কথায়, “মঙ্গলবার সুদীপ্ত মারা যাওয়ার সময় যুবভারতী স্টেডিয়ামে উদ্দাম নাচন-কোঁদন হচ্ছিল। মুখ্যমন্ত্রী তা দেখছিলেন।”
বুধবার দুপুর ১২টা নাগাদ বাড়ি থেকে মহাকরণ যাওয়ার পথে মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি থামে এসএসকেএম হাসপাতালের আউটগেটের পাশে। গাড়ি থেকে নেমে মর্গের দিকে এগোতে থাকেন মমতা। রেসপিরেটরি কেয়ার ইউনিটের সামনে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। পুলিশের কাছে জানতে চান, সুদীপ্তর ময়না তদন্তের প্রক্রিয়া কত দূর এগিয়েছে। পুলিশ কর্তারা তাঁকে জানান, প্রস্তুতি চলছে। ময়না তদন্তের কাজ যাতে দ্রুত হয় পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তার জন্য নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সুদীপ্তর মৃত্যুর তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জবাব এড়িয়ে যান তিনি। পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীন এই ভাবে মৃত্যুর জন্য কোনও পুলিশকর্মীর শাস্তি হবে কি? জিজ্ঞাসার উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাকে এ সব জিজ্ঞাসা করছেন কেন? পুলিশকে জিজ্ঞাসা করুন।” একই ভাবে তিনি এড়িয়ে যান বামফ্রন্টের তোলা বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবির প্রসঙ্গও। এর পর তিনি যান লালবাজারে। সেখানে পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ-সহ কলকাতা পুলিশের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। লালবাজার সূত্রের খবর, সুদীপ্তর মৃত্যু কী ভাবে হল, তা নিয়ে খোঁজখবর নেন মমতা। |