পুলিশের মারেই সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল এসএফআই। কিন্তু পুলিশ অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা (৩০৪ ধারা) দায়ের করায় তার প্রতিবাদে আদালতের দ্বারস্থ হল তারা।
এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্তর অপমৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে মোট তিনটি মামলা রুজু করেছে পুলিশ। প্রথমটিতে বাস চালকের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে। দ্বিতীয়টিতে জখম হোমগার্ড বিশ্বজিৎ মণ্ডলের অভিযোগের ভিত্তিতে এসএফআইয়ের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে পুলিশকর্মীকে খুনের চেষ্টা ও সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর এবং হাঙ্গামা বাঁধানোর মামলা রুজু করা হয়েছে। এবং তৃতীয়টিতে এসএফআই কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শী ডোনা গুপ্তর অভিযোগের ভিত্তিতে অজ্ঞাতপরিচয় পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর মামলা রুজু করেছে পুলিশ। তৃতীয় মামলাটি নিয়েই আপত্তি তুলে আদালতে গিয়েছে এসএফআই।
|
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবি করে এসএফআই কর্মী ডোনা গুপ্ত পুলিশের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ভাবে সুদীপ্তকে খুনের অভিযোগ করেছিলেন মঙ্গলবারই। অভিযোগ, হেস্টিংস থানা তা সত্ত্বেও ৩০২ ধারায় খুনের মামলা দায়ের না করে ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করেছে। বুধবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বরূপ শেঠের এজলাসে ডোনাদেবীর আইনজীবী ইয়াসিন রহমান এই মর্মে আবেদন করেন। বিচারক তাঁর বক্তব্য শুনে পিটিশনটি নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষকর্তা অবশ্য বলেন, “অভিযোগ যে-ভাবে করা হয়েছে, সেই মতোই মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই উপযুক্ত ধারায় মামলা করা হয়েছে।”
এসএফআইয়ের আইনজীবী সঞ্জীব গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “১৫১ ধারায় আইন অমান্যকারীদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে এসএফআই কর্মীরা পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। পুলিশের মারধরের কারণেই সুদীপ্তর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু পুলিশ নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা দায়ের না করে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর মামলা রুজু করল।” সঞ্জীববাবুর দাবি, পুলিশ এসএফআইয়ের অভিযোগের কোনও গুরুত্বই দিচ্ছে না। আইনের তোয়াক্কা না করে নিজেদের মতো করে মামলা সাজিয়ে নিচ্ছে। আদালত কক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে এ দিন একই অভিযোগ করেন ডোনাদেবীও।
সুদীপ্তর মৃত্যুর কারণ জানতে চেয়ে কলকাতা পুলিশের কাছে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট চেয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনও। কমিশন নিজেদের দুই সদস্য দিয়েও ওই ঘটনার তদন্ত করাবে। বুধবার তারা বিষয়টি জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে।
পুলিশ এখন কী বলছে? পুলিশের একাংশের দাবি, বাসের পিছনের দরজায় হাতে এসএফআইয়ের পতাকা নিয়ে ঝুলছিলেন সুদীপ্ত। হাওয়ায় পতাকার আড়াল হওয়ায় সম্ভবত তিনি ল্যাম্পপোস্টটি দেখতে পাননি।
|
উত্তর কোথায় |
|
• বাসের মধ্যে পুলিশ কি লাঠি চালিয়েছিল?
• জেল-গেটের কাছে বাসের গতি কত ছিল?
• বাসে ক’জন বিক্ষোভকারীকে তোলা হয়?
• সুদীপ্ত বাস থেকে পড়ে গেলেন কী ভাবে?
• ল্যাম্পপোস্টে তিনি কী ভাবে ধাক্কা খেলেন?
• সুদীপ্তের কানে চোট লাগল কী করে? |
|
বাসটি বাঁক নেওয়ার সময় দ্রুতগতিতে থাকায় ল্যাম্পপোস্টে ধাক্কা খেয়ে সুদীপ্ত পড়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটে। এক তদন্তকারী অফিসারের দাবি, “ডিএলখান রোড থেকে থ্যাকারে রোডে ঢোকার সময়ে ওই অপ্রশস্ত রাস্তায় যে-গতিতে বাসের চলার কথা, তার চেয়ে অনেক দ্রুত গতিতে ৫৯ নম্বর রুটের বাসটি যাচ্ছিল। সেটা চালকের বড় ত্রুটি। চালক রাজা দাসকে এ দিন সকালে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে যান।
কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শী ও জেলকর্মী অবশ্য পুলিশের দাবি পুরোপুরি মানছেন না। তাঁদের এক জনের কথায়, “ওই বাসটির আগেও দু’তিনটি বাস এবং পুলিশের প্রিজন ভ্যান ছিল। ল্যাম্পপোস্টটা জেলের মূল ফটকের প্রায় ৩০ গজের মধ্যে। তাই ওখানে গেটে ঢোকার মুখে কোনও অবস্থাতেই বাসটি দ্রুত গতিতে থাকা সম্ভব ছিল না। তবে ধস্তাধস্তিতে পড়ে ল্যাম্পপোস্টে কেউ আঘাত পেতেই পারে।” একাধিক জেলকর্মীর কথায়, “এসএফআই সমর্থকেরা বাস থেকে নামার সময় থেকেই পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। দফায় দফায় লাঠিচার্জ করে পুলিশ।”
সুদীপ্তর সঙ্গে বাসে ছিলেন এসএফআইয়ের দুই কর্মী দেবস্মিতা সরকার ও তনুশ্রী মণ্ডল। তাঁদের অভিযোগ, “বাসের মধ্যেই আমাদের ফ্ল্যাগ থেকে লাঠি খুলে নিয়ে মারছিল পুলিশ। জেলের কাছে আমাদের টেনে হিঁচড়ে নামাতে থাকে এক দল পুলিশ। লাঠিচার্জও শুরু হয়ে যায়। সুদীপ্ত ছিল গেটের সামনে। পুলিশের লাঠিচার্জের মধ্যেই সুদীপ্ত গেট থেকে ছিটকে গিয়ে পড়ে। চেঁচিয়ে ওঠে, ‘দাদা কী করছেন! আমার কানটা বোধহয় গেল।” দেবস্মিতা-তনুশ্রীদের দাবি, ওই শেষ। আর কোনও কথা বলেনি সুদীপ্ত। |