পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা জরুরি তা বোঝাতে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনারও উল্লেখ করল রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
কমিশনের দায়ের করা মামলায় হলফনামা পেশ করে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই দাবি করেছে যে, পঞ্চায়েত নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশই যথেষ্ট। প্রয়োজনে অন্য রাজ্য থেকে সশস্ত্র পুলিশ আনার কথাও বলা হয়েছিল ওই হলফনামায়। মঙ্গলবার জবাবি হলফনামা জমা দিয়ে নির্বাচন কমিশন জানাল, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন যে রকম, তাতে আধাসামরিক বাহিনী দিয়েই ভোট করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন তা বোঝাতে গিয়ে প্রেসিডেন্সিতে হামলা, দিল্লিতে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে নিগ্রহের জেরে রাজ্যে অশান্তি থেকে শুরু করে গার্ডেনরিচ এবং মাঠপুকুর-কাণ্ডেরও উল্লেখ করা হয়েছে হলফনামায়।
কমিশনের বক্তব্য, রাজ্য সরকার জানিয়েছে তাদের হাতে ৫৫ হাজার সশস্ত্র পুলিশ রয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ভোট করতে গেলে এর তিন গুণ নিরাপত্তা রক্ষী দরকার। হলফনামায় বলা হয়েছে, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট করানোর দায়িত্ব যে হেতু কমিশনের, সে হেতু তাদের চাহিদা মতো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্য সরকারকে। সেটাই নিয়ম। কমিশনের কোনও রঙ নেই। তার কাজ ভোট পরিচালনা করা। কমিশন মনে করে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই নির্বাচন হবে। এখানে রাজ্য সরকারের সম্মতি বা অসম্মতির কোনও সুযোগ নেই।
কেন্দ্রীয় বাহিনী কবে থেকে লাগবে তা-ও হলফনামায় জানিয়ে দিয়েছে কমিশন। তারা বলেছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী লাগবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন থেকে। ফল ঘোষণার পরেও বেশ কিছু দিন কেন্দ্রীয় বাহিনী রেখে দিতে হবে। কমিশনের বক্তব্য, রাজ্যের যা পরিস্থিতি, তাতে কলেজ নির্বাচনও করা যাচ্ছে না। স্কুল কমিটির নির্বাচন করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের মতো একেবারে স্থানীয় সমস্যার সঙ্গে যুক্ত নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনও ঝুঁকি তারা নিতে পারে না। কারণ, যে কোনও সময় গ্রামাঞ্চলে হিংসা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কমিশনের আইনজীবী লক্ষ্মীচাঁদ বিয়ানি বলেন, সরকার বলেছে তারা প্রয়োজনে অন্য রাজ্য থেকে সশস্ত্র পুলিশ আনবে। কিন্তু কোন রাজ্য থেকে কত পুলিশ আনবে, কবে তারা আসবে, এ সব কিছুই জানায়নি। তাই ওই সব কথার কোনও মূল্য নেই। তা ছাড়া, কত পর্যবেক্ষক লাগবে, কোন জেলায় কত পুলিশ দেওয়া হবে, কোন বুথে কত জন সশস্ত্র পুলিশ ও কত জন লাঠিধারী থাকবে, তা স্থির করবে কমিশন। এটা তাদের দায়িত্ব।
কমিশনের এক্তিয়ার কী, তা-ও জবাবি হলফনামায় পরিষ্কার করে দিয়েছে তারা। কমিশন জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই সহমতের ভিত্তিতে রাজ্য সরকারকে ভোটের দিন স্থির করতে হবে। সরকারের ঠিক করা দিনের সঙ্গে কমিশন সহমত না হলে সরকারকে পুর্নবিবেচনার জন্য বলবে। পঞ্চায়েত আইনের ৪২ ধারায় রাজ্য সরকারের একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই।
কমিশনের জবাবি হলফনামা এ দিন জমা পড়লেও মামলার শুনানি হয়নি। বেলা তিনটে থেকে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৩টে ২০ মিনিট থেকে বিচারপতি কনোয়ালজিৎ সিংহ অহলুওয়ালিয়ার বিদায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। তার আগে মাত্র ২০ মিনিটের জন্য আর মামলা শুনতে চাননি বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার।
কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল বলেন, মামলাটির দ্রুত শেষ হওয়া প্রয়োজন। বিচারপতি সমাদ্দার জানান, তিনি মনে করেন এই মামলা শেষ হতে বেশি দিন লাগার কথা নয়। প্রয়োজনে আগামিকাল, বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবারেও তিনি এই মামলা শুনতে পারেন।
|