মুখ্যসচিবের চিঠিতে বিস্ময়
তথ্য নিয়ে মন্ত্রীর ভ্রান্তিবিলাসের দায়ও সচিবদের
কটি প্রশ্নের উত্তরে পূর্তমন্ত্রী বিধানসভায় জানিয়েছিলেন, গত এক বছরে রাজ্যে মাত্র সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার নতুন রাস্তা তৈরি হয়েছে। এমন উত্তর পেয়ে বিরোধী দলের প্রশ্নকর্তা বিধায়কের পাল্টা প্রশ্ন ছিল, আপনি ঠিক বলছেন তো? পূর্তমন্ত্রীর জবাব ছিল, “হ্যাঁ, ঠিকই বলছি। দফতর তো এমন জবাবই তৈরি করে দিয়েছে।”
বিধানসভায় বাজেট বক্তৃতায় অথর্মন্ত্রী অমিত মিত্র ঘোষণা করেন, গত এক বছরে রাজ্যে এক লক্ষ কোটি টাকারও বেশি লগ্নি-প্রস্তাব জমা পড়েছে। কিন্তু সরকারেরই অর্থনৈতিক সমীক্ষায় লেখা হয়েছে, গত এক বছরে রাজ্যে বিনিয়োগ হয়েছে মাত্র ৩১৮ কোটি টাকা। তার আগের বছরে যার পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বাংলায় বিনিয়োগে বন্ধ্যা পরিস্থিতির কথা কার্যত ফাঁস হয়ে যায় সরকারি রিপোর্টেই।
এ-হেন তথ্য-বিভ্রাটে জেরবার সরকার এ বার কড়া মনোভাব নিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র জানিয়ে দিয়েছেন, এখন থেকে বিধানসভার প্রশ্নের জবাব তৈরির যাবতীয় দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিবদের। মন্ত্রীদের ঠিকঠাক তথ্য দিয়ে এবং তা বুঝিয়ে বিধানসভায় পাঠানোর দায়ও সচিবদেরই। মন্ত্রীরা যাতে কোনও ভাবেই বিধানসভায় হাস্যকর জবাব না-দেন এবং সরকারকে বিব্রত হতে না-হয়, তার জন্য সব দফতরে কড়া নির্দেশ পাঠিয়েছেন মুখ্যসচিব।
মন্ত্রী-সচিবদের উদ্দেশে মুখ্যসচিব লিখেছেন, এখন থেকে বিধানসভায় তারকা চিহ্নিত প্রশ্নগুচ্ছের উত্তর তৈরি এবং সম্ভাব্য অতিরিক্ত প্রশ্নের জন্য নোট তৈরি করে দেওয়ার দায়িত্ব ব্যক্তিগত ভাবে দফতরের সচিবদের উপরে বর্তাবে। বিধানসভায় জবাব দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করে প্রতিটি উত্তর বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে সচিবদেরই। মুখ্যসচিব লিখেছেন, জবাব দেওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে মন্ত্রী উত্তর সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে ব্যক্তিগত সচিবদের। মন্ত্রীকে উত্তর বোঝানোর বৈঠকে দফতরের সচিবের থাকাও বাধ্যতামূলক বলে জানিয়ে দিয়েছেন সঞ্জয়বাবু।
বিভিন্ন দফতরকে সচেতন করে মুখ্যসচিব লিখেছেন, কোনও একটি বিষয়ে জবাব দেওয়ার আগে সচিবদের দেখে নিতে হবে, অন্য কোনও দফতর থেকে তথ্য আনাতে হবে কি না। যদি আনাতে হয়, তদারক করে তা আনিয়ে নিতে হবে সচিবদেরই। উদাহরণ দিয়ে সঞ্জয়বাবু লিখেছেন, শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দিতে কেবল কারিগরি শিক্ষা দফতরের তথ্যই যথেষ্ট নয়। এর জন্য ক্ষুদ্র শিল্প, পঞ্চায়েত, শ্রম দফতর থেকেও তথ্য আনাতে হবে। এই সমন্বয়ের কাজের ভার নিতে হবে সচিবদের। এবং সেই কাজ করার দায়িত্ব সচিবদের নিতে হবে ব্যক্তিগত ভাবেই।
মুখ্যসচিবের এই চিঠি পেয়ে অনেক সচিবই বিস্মিত। তাঁদের অনেকে বলেন, “প্রশাসন পরিচালনার সাধারণ জ্ঞান যাঁদের আছে, তাঁরা সকলেই জানেন, বিধানসভার উত্তর তৈরি করে দেওয়ার দায়িত্ব সচিবদের। অত্যন্ত যত্ন নিয়েই তা করা হয়। এর জন্য কড়া ভাষায় নির্দেশ জারির কী দরকার ছিল?”
সচিবদের কেউ কেউ আবার জানান, আমলাদের অসাবধানতার জন্যই সরকারকে বিধানসভায় বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। পরবর্তী কালে যাতে তার পুনরাবৃত্তি না-হয়, সেই জন্যই মুখ্যসচিব এমন চিঠি লিখতে বাধ্য হয়েছেন। মুখ্যসচিব জানিয়ে দিয়েছেন, বিধানসভায় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর সংক্রান্ত ভুলভ্রান্তির দায় সচিবদেরই নিতে হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.