স্টেডিয়াম তৈরিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জমির সমস্যা।
হুগলির সদর শহর চুঁচুড়া। ২০০৪ সালে স্টেডিয়াম তৈরির জন্য রাজ্যের তৎকালীন মন্ত্রী ও জেলার বিধায়ক নরেন দে’র উদ্যোগে তৈরি হয় ৬ সদস্যের ‘চিনসুরা নেতাজি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’। ২০০৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় তালডাঙার কাছে জিটি রোডের ধারে ট্রাস্টি বোর্ডের উদ্যোগে কেনা হয় ৪৮ বিঘে জমি। ঠিক হয় জমিটিকে খেলার উপযোগী করে তোলা হবে। স্টেডিয়াম তৈরির নকশা-সহ প্রকল্প জমা দেওয়া হয় রাজ্যের ক্রীড়া দফতরে। স্টেডিয়াম তৈরির জন্য মঞ্জুর হয় ২ কোটি ৬৭ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা। প্রথম ধাপে পাওয়া যায় ৫০ লক্ষ টাকা। ঠিক হয় তৈরি হবে ৩০ হাজার দর্শকাসনের কংক্রিটের স্টেডিয়াম। থাকবে অ্যাথেলেটিক টার্ফ।
২০১০ সালের ২৮ মার্চ ওই জমিতেই শিলান্যাস হয় চুঁচুড়া স্টেডিয়ামের। উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন মন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। তারপর পেরিয়ে গিয়েছে তিন বছর। গাঁথা হয়নি একটিও ইট। কাজ বলতে হয়েছে মাঠের ধারে কিছুটা তারের বেড়া ও মাঠের পাশে থাকা ছোট খালের উপর একটি সেতু। |
এরপর চলে আসে বিধানসভা ভোট। বদল হয় সরকারের। ট্রাস্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, এর মধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে প্রথম ধাপের টাকা। ট্রাস্টের প্রধান নরেন দে বলেন, “জিটি রোডের ধারে অবস্থিত হওয়ায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য ওই জমি কিনেছিলাম আমরা। প্রাথমিক ভাবে যে টাকা পাওয়া গিয়েছিল তাতে মাঠ ঘেরার কাজ কিছুটা হয়েছে। কিন্তু তারপর টাকা না পাওয়ায় থমকে যায় কাজ। নতুন সরকারের কাছেও স্টেডিয়াম তৈরির জন্য দরবার করেছি। এখনও কোনও উত্তর আসেনি।”
কিন্তু ট্রাস্টের থেকে জমি নিজেদের হাতে না পেলে স্টেডিয়াম তৈরি করতে রাজি নয় রাজ্য সরকার। অম্তত সে রকমই জানালেন স্থানীয় বিধায়ক তপন মজুমদার। তিনি বলেন, “চুঁচুড়ায় স্টেডিয়াম তৈরির স্বপ্ন দীর্ঘদিনের। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে জমি। ট্রাস্টি বোর্ড স্টেডিয়াম তৈরির প্রস্তাবিত জমি সরকারের হাতে তুলে দিক। এক বছরের মধ্যে স্টেডিয়াম তৈরি করে দেওয়া হবে।” হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার পুরপ্রধান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা নরেনবাবুকে বলেছিলাম, স্টেডিয়ামের জন্য নেওয়া জমিটি ট্রাস্টের হাতে না রেখে সরকারের হাতে দিন। সরকারি উদ্যোগে আমরা স্টেডিয়াম করে দেব। কিন্তু নরেনবাবু প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। তাই সমস্যা।”
নরেন দের পাল্টা দাবি, “ট্রাস্টি বোর্ডকে দেখেই সে সময়ে অর্থ মঞ্জুর করা হয়েছিল। জমিটা আমাদের। তা ছাড়া, সরাসরি ক্রীড়া দফতর থেকে এখনও আমাদের কাছে কোনও প্রস্তাব আসেনি। পুরসভার মাধ্যমে এসেছে। তাই এই বিষয়ে আমরা এখনই কিছু ভাবছি না।”
স্টেডিয়াম তৈরি না হওয়ায় জেলার ক্রীড়ামহলেও তৈরি হয়েছে হতাশা। মোহনবাগানের প্রাক্তন খেলোয়াড় স্বপন সাহারায় বলেন, “সদর শহরে স্টেডিয়াম থাকলে খেলার মানোন্নতি হত। উঠতি খেলোয়াড়েরা উৎসাহ পেত। জমি জটে স্টেডিয়াম না হওয়া দুঃখজনক।” প্রাক্তন জাতীয় অ্যাথলেটিক্স কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চুঁচুড়া শহরে স্টেডিয়াম তৈরি হলে জেলার ঐতিহ্য বৃদ্ধি পেত। খেলার মান বাড়ত।” কাজ না হওয়ায় জঙ্গলে ভরে গিয়েছে ওই জমি। এখন অন্ধকার নামলে বসে মদ-জুয়ার আড্ডা। রয়ে গিয়েছে শুধু শিলান্যাসের ফলক।
কতটা পথ পেরোলে তবে স্টেডিয়াম হবে, তা সত্যিই জানেন না চুঁচুড়ার ক্রীড়াপ্রেমীরা।
|