নিজস্ব সংবাদদাতা • সাঁকরাইল |
বাঁশবনের মধ্যে পড়ে ছিল এক তরুণের ক্ষতবিক্ষত দেহ। ধড়-মুণ্ড আলাদা। পুরুষাঙ্গ কাটা।
মঙ্গলবার সকালে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় হাওড়ার সাঁকরাইলের ধুলাগড়িতে। দেহ উদ্ধার করতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশ। পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। পুলিশের একটি গাড়িতে ভাঙচুর করে জনতা। দু’জন পুলিশকর্মী আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে র্যাফ নামাতে হয়। ধুলাগড়ি-জুজারশাহ রাস্তা কিছউ ক্ষণের জন্য অবরোধ হয়। পুলিশের উপরে হামলা চালানোর অভিযোগে এক গ্রামবাসীকে আটক করা হয়েছে।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, শুভ ঢাকি (১৮) নামে ওই তরুণের দেহ যেখানে পড়েছিল, বছর খানেক ধরে সেখানেই রাতের অন্ধকারে জুয়ার আসর বসায় দুষ্কৃতীরা। চোলাইয়ের ঠেকও চলে। জুয়া-চোলাই বন্ধের দাবিতে বহু বার পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন এলাকার মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশের একাংশের মদতেই জুয়াড়িদের রমরমা। জুয়ার আসর থেকে নিয়মিত ‘তোলা’ যায় পুলিশের কাছেও। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে ক্রমে সংগঠিত হচ্ছিলেন মানুষ। সে জন্য আতঙ্ক ছড়াতেই জুয়ার আসরে ডেকে এনে খুন করা হল শুভর মতো নিরীহ এক তরুণকে। জুয়ার আসর চালাতে পুলিশ মদত দিচ্ছে কিনা, সে প্রসঙ্গে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সুখেন্দু হীরার বক্তব্য, “আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি। তবে পুলিশের কাছে এ ব্যাপারে কেউ কখনও অভিযোগই করেনি।”
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই জুয়ার আসরে বসেই সোমবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে মদ্যপান করছিলেন শুভ। জুয়ার আসরে তাঁর নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে তাঁর পেটে প্রচুর মদও পাওয়া গিয়েছে। জুয়ার ঠেকে পরিচিতদের সঙ্গে গোলমালের জেরেই খুন হয়েছেন ওই তরুণ। যদিও নিহতের বউদি তুলিকা বলেন, “আমার দেওরকে কোনও দিন মদ্যপান করতে দেখিনি।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুভ ছিলেন পেশায় জরির কারিগর। বাড়ি শিবতলায়। দিন দ’শেক হল হাতে তেমন কাজ ছিল না। তুলিকা বলেন, “সোমবার রাত ৯টা নাগাদ আমরা এক সঙ্গে বাড়িতে বসেছিলাম। সে সময়ে শুভর মোবাইলে ফোন আসে। ফিরতে রাত হবে বলে ও বেরিয়ে যায়। কিন্তু সারা রাত আসেনি।” সকালে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে বাঁশবাগানে তাঁর ক্ষতবিক্ষত দেহ মেলে।
জুয়ার আসরে দেহ পড়ে থাকতে দেখে উত্তেজনা ছড়ায়। এলাকাটি সাঁকরাইল ও পাঁচলা দু’টি থানার মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত। দু’টি থানার পুলিশই জুয়ার আসর চালাতে মদত দেয় বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। হাওড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সুখেন্দু হীরা বলেন, “তদন্ত চলছে। দুষ্কৃতীদের ধরতে পারলেই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।” |