স্টেডিয়াম আছে। মাঠও। কিন্তু খেলা প্রায় হয় না। বছরভর গরু-ছাগল চরে। বর্ষায় জল জমে। অনেক জায়গা থেকে উঠে গিয়েছে ঘাস।
দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে হাওড়ার আন্দুলের আড়গোড়ি স্টেডিয়াম। অবহেলা-অনাদরের এই খেলার মাঠ কবে আবার ব্যবহারের উপযোগী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এলাকার ক্রীড়াপ্রেমীরা। মাঠটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা আড়গোড়ি স্পোর্টিং ক্লাবের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ।
২০০৯ সালে হাওড়ার তত্কালীন সিপিএম সাংসদ স্বদেশ চক্রবর্তীর সাংসদ তহবিল থেকে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকায় হাওড়া উন্নয়ন পর্ষদের (এইচআইটি) তদারকিকে তৈরি হয় স্টেডিয়ামটি। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পায় আড়গোড়ি স্পোটিং ক্লাব। চার বছর পেরিয়ে গিয়েছে। স্টেডিয়ামের উদ্বোধনের দিনে একটি প্রদর্শনী ম্যাচ ছাড়া জোটেনি বড় মাপের কোনও প্রতিযোগিতা। থানার উদ্যোগে ফুটবল লিগের খেলাও হয় না বললেই চলে। কালেভদ্রে এলাকার যুবকদের উদ্যোগে শুধু ফুটবল-ক্রিকেট প্রতিযোগিতা হয়।
আড়গোড়ি স্টেডিয়ামে গেলেই দেখা যাবে, মাঠের গা ঘেঁষে গড়ে উঠেছে কারখানা। নষ্ট হয়ে গিয়েছে মাঠের নিকাশি ব্যবস্থা। মাঠের এক দিকে রয়েছে দোতলা স্টেডিয়াম। কংক্রিটের বসার চেয়ারে অব্যবহারের ছাপ স্পষ্ট। শ্যাওলা পড়ে কালো হয়ে গিয়েছে চারদিক। ভেঙে গিয়েছে বেশ কিছু জায়গা। একতলার পুরোটাই লম্বা হলঘর। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার গেট প্রায় ভাঙা। সিঁড়িতে ইতিউতি ছড়িয়ে রয়েছে নোংরা ও আর্বজনা। |
এলাকার বাসিন্দারা জানান, ষাটের দশক থেকে খেলার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল মাঠটি। নব্বই দশকের গোড়া পর্যন্ত মাঠে নিকাশি ব্যবস্থা ছিল বেশ ভাল। মাঠের পাশের জলাভূমিগুলিতে বর্ষার সময়ে মাঠের জমা জল গিয়ে পড়ত। খেলাও হত অনেক। ধীরে ধীরে মাঠের পাশে তৈরি হয় কারখানা। জল বেরোনোর রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন প্রতি বর্ষায় জলে ডুবে যায় মাঠ। ফলে, নষ্ট হয়ে গিয়েছে ঘাস। সৃষ্টি হয়েছে গর্ত।
মাঠের এই করুণ অবস্থায় হতাশ এলাকার ক্রীড়াপ্রেমীরা। স্থানীয় বাসিন্দা তথা কলকাতা মাঠের প্রাক্তন ফুটবলার তপন সেন (তপা) বলেন, “আগে ওই মাঠে স্থানীয় স্কুলগুলির খেলাধুলো হত। এখন সাঁকরাইল থানা লিগের খেলাও আড়গোড়ি মাঠে দেওয়া যাচ্ছে না। ওই খেলোয়াড়দের চোট লাগতে পারে।” স্থানীয় ফুটবলার উজ্জ্বল চক্রবর্তী (উদয়) বলেন, “মাঠটি খেলার অযোগ্য। খেলোয়াড়রা চোট পাবেন। স্থানীয় থানা ফুটবল লিগে মাঠের সমস্যা হলেও ওই মাঠে খেলা যায় না। পরিচর্যার অভাব রয়েছে।” বড় মাঠটি পড়ে থাকলেও এলাকার উঠতি খেলোয়াড়রা আশপাশের ছোট মাঠে প্র্যাকটিস করেন। স্টেডিয়াম সংলগ্ন ফকিরপাড়ার যুবকদের অভিযোগ, “আড়গোড়ি ক্লাব স্টেডিয়ামটি সংস্কার করা হলে ওখানে খেলাধুলো করা যেত।”
ওই ক্লাবের তরফে যে স্টেডিয়াম কমিটি গড়া হয়েছে, তার কর্তা প্রণব দাস সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “অর্থাভাবে মাঠটি আমরা রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারছি না। নতুন প্রজন্মের ছেলেরাও দায়িত্ব নিতে তেমন আগ্রহী নন। মাঠের আশপাশের পরিবেশ বেশ খারাপ হয়ে গিয়েছে।” ক্লাবের সম্পাদক সঞ্জয় নন্দী বলেন, “এই এলাকায় নিকাশির সমস্যা দীর্ঘদিনের। অনেক আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু কাজ কিছুই হয়নি।” আন্দুল পঞ্চায়েতের প্রধান অপরেশ ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “মাঠ সংস্কারের জন্য টাকা চেয়ে জেলা পরিষদে আবেদন করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।”
হাওড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী সভাপতি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আড়গোড়ির মাঠটি প্রমাণ মাপের নয়। যাতায়াতেরও সমস্যা রয়েছে। সেই কারণেই ওই মাঠে জেলা লিগের খেলা দেওয়া যায় না। তবে থানা লিগের খেলা না হওয়ার কিছু নেই।” স্থানীয় বিধায়ক শীতল সর্দার অবশ্য তাঁর কাছে আবেদন এলে মাঠ সংস্কারের জন্য সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “স্টেডিয়ামের বিষয়ে আমার সঙ্গে কেউ কোনও আলোচনা করেনি। আমাকে জানালে আমি আমার সীমিত ক্ষমতার মধ্যে সাহায্য করার চেষ্টা করব।” কবে মাঠটি সংস্কার হয়, এখন সে দিকেই তাকিয়ে এলাকার ক্রীড়াপ্রেমীরা। |