বিহারের অখ্যাত গ্রামের দোর্দণ্ডপ্রতাপ ব্যক্তির বাড়িতে বসেছে নাচগানের মজলিস। চটুল গানের সঙ্গে স্বল্পবসনা কিশোরী ও তরুণীদের নাচ চলছে। নাচিয়েদের দিকে দেদার টাকা ছুড়ছেন দর্শক-শ্রোতারা। মঞ্চের এক পাশে খাটিয়ায় বসে বাড়ির মালিক, বছর পঞ্চাশের শম্ভু যাদব। ভোরের দিকে আসর শেষ হওয়ার পরে ভিড় কিছুটা কমতেই দর্শকদের কয়েক জন ঘিরে ধরলেন তাকে। পরিচয় জিজ্ঞাসা করতেই, উত্তর এল, “আমরা পুলিশ।”
সোমবার ভোরে বিহারের নেতওয়ার এলাকার দারোলি থেকে এ ভাবেই আন্তঃরাজ্য নারী পাচার চক্রের ওই পাণ্ডাকে গ্রেফতার করেছে সোনারপুর থানার পুলিশ। ওই ডেরা থেকে সোনারপুরের এক কিশোরীকেও উদ্ধার করা হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এসপি প্রবীণ ত্রিপাঠী জানান, শম্ভু ছাড়াও বিশ্বজিৎ দাস নামে তার এক ‘লিঙ্কম্যান’কে ধরা হয়েছে। মঙ্গলবার তাদের কলকাতায় আনা হয়। প্রবীণবাবু এবং এএসপি কঙ্করপ্রসাদ বারুই তাদের জেরা করেন।
শম্ভুকে ধরতে বিহার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে দিন তিনেক আগেই জাল ফেলেন সোনারপুরের তদন্তকারীরা। বিহারের সিওয়ান থানার মাধবপুর থেকে এক কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। কিশোরীটি পুলিশকে জানিয়েছিল, সোনারপুরের আরও এক জনকে আটকে রাখা হয়েছে নেতওয়ারে। তারই বয়ানের ভিত্তিতে শুক্রবার কলকাতা স্টেশন থেকে নারী পাচার চক্রের চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের জেরা করে খোঁজ মেলে শম্ভুর। সোনারপুর থানার আইসি প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তদন্ত শুরু হয়। দারোলিতে নারী পাচার চক্রের ওই পাণ্ডার বাড়িতে হানা দেয় সাদা পোশাকের পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় ওই গ্রামে ‘মুখিয়াজি’ বলে পরিচিত শম্ভুকে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বিভিন্ন রাজ্য থেকে ‘লিঙ্কম্যান’ মারফত কিশোরী ও তরুণীদের ২৫-৩০ হাজার টাকায় কিনত শম্ভু। তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হত সকলকে। পাচার হওয়া মেয়েদের নাচগানের প্রশিক্ষণ চলত সেখানে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চটুল গানের সঙ্গে তাঁদের নাচানো হত। পরে মুম্বই, দিল্লি, পুণের যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হত ওই কিশোরী, তরুণীদের।
|