কেউকেটা সেজে লালবাতির গাড়ি চড়তেন ইন্দ্রজিৎ
বিবার ভরদুপুরের ব্যাঙ্কশাল কোর্ট। আদালতের লক-আপে ঢুকছেন হলদে সালোয়ার-কামিজ পরা এক মহিলা, ওড়নায় মুখ ঢাকা। দেখে আদালত চত্বরে দাঁড়ানো এক পুলিশ অফিসার বলে উঠলেন, “বান্টিকে দেখতে বাবলি চলে এসেছে!”
‘বান্টি’ মানে ইন্দ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায় শহরে একাধিক জালিয়াতিতে অন্যতম অভিযুক্ত। আর ‘বাবলি হলেন ইন্দ্রজিতের স্ত্রী রসিকা চট্টোপাধ্যায়। তাঁর নামেও জালিয়াতির একাধিক মামলা! স্বামীর সঙ্গে মিলে লোক ঠকানোর অভিযোগে তিনি আগে গ্রেফতারও হয়েছেন। আপাতত রসিকা জামিনে মুক্ত।
পশ্চিমবঙ্গ পরিকাঠামো উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের ১২০ কোটি টাকার জালিয়াতির ঘটনায় শনিবার রাতে ইন্দ্রজিৎকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখা।

পুলিশ-সূত্রের খবর: ইন্দ্রজিতের কাছে মিলেছে ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। বিমান দাস নামে আরও এক জনকে পাকড়াও করা হয়েছে। তাঁর কাছে থেকে চেকবই ও বেশ কিছু নথিপত্র পাওয়া গিয়েছে।
পুলিশ-সূত্রের খবর: ইউকো ব্যাঙ্কের সার্কাস অ্যাভিনিউ শাখায় দু’দফায় ১২০ কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিল নিগম।
বিনিময়ে সার্টিফিকেটও পেয়েছিল। এ বছর মার্চে ব্যাঙ্কের সঙ্গে হিসেব মেলাতে গিয়ে গরমিল নজরে পড়ে নিগম কর্তাদের। তাঁরা জানতে পারেন, ফিক্সড ডিপোজিটের সার্টিফিকেটগুলো জাল। হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। তদন্তে নেমে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি শাখার অফিসারেরা জানতে পারেন, ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি সেজে জালিয়াতেরা নিগম-কর্তাদের কাছে গিয়ে একটি অ্যকাউন্ট নম্বর দিয়ে বলেছিল, ফিক্সড ডিপোজিট করার জন্য তাতে টাকা পাঠাতে হবে। কিন্তু ওই অ্যাকাউন্টে জমা করার পরেই টাকা উধাও হয়ে যায় বলে অভিযোগ।
গোয়েন্দা-সূত্রের খবর, ভুয়ো অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়েছিল জনৈক প্রদীপ চোংদারের নামে। সেখান থেকেই একের পর এক অ্যাকাউন্টে টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়। তদন্তকারীরা আপাতত এমন দু’শোটি অ্যাকাউন্টের খোঁজ পেয়েছেন। ইন্দ্রজিৎ ধরা পড়লেন কী ভাবে ?
পুলিশ-সূত্রের খবর: তদন্তে নেমে প্রথমেই ইউকো ব্যাঙ্কের সার্কাস অ্যাভিনিউ ব্রাঞ্চের ম্যানেজার অ্যালয়েস লাকড়াকে গ্রেফতার করা হয়। পরে নানা জায়গায় ধরা হয় আরও ক’জনকে। “লাকড়া-সহ ধৃতদের জেরা করে ইন্দ্রজিৎ সম্পর্কে খবরাখবর পাওয়া যায়।” জানাচ্ছেন এক পুলিশ-কর্তা।
পুলিশের দাবি: জেরায় ইন্দ্রজিৎ জানিয়েছেন, ইদানীং তিনি লালবাতি লাগানো গাড়ি নিয়ে ঘুরতেন। নিজের পরিচয় দিতেন উঁচু দরের সরকারি কর্তা হিসেবে। এ ভাবে তিনি নিগম ও ব্যাঙ্কের কিছু অফিসারের উপরে প্রভাব বিস্তার করেন। জানা গিয়েছে, কসবা ও সাউথ সিটিতে ইন্দ্রজিতের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে। তাঁর এমন আরও সম্পত্তি থেকে থাকতে পারে বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ। তদন্তকারীদের দাবি: জালিয়াতির টাকায় আরামের জীবন কাটাচ্ছিলেন ইন্দ্রজিৎ। বছর পাঁচেক আগে আর এক জালিয়াতির ঘটনায় ইন্দ্রজিৎ ধরা পড়েন। তখন জানা গিয়েছিল, পারিবারিক এক অনুষ্ঠানে তিনি প্রায় কোটি টাকা খরচ করেছেন। অতি অল্প দূরত্ব যেতেও বিমানে চড়তেন। “জালিয়াতির মতো টাকা ওড়াতেও ইন্দ্রজিৎ ওস্তাদ।” মন্তব্য এক তদন্তকারীর।
এক পুলিশ-কর্তা জানিয়েছেন, বিত্ত নিগম-কাণ্ডে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার অ্যালয়েস লাকড়া ধরা পড়ার পরেই বেশ কিছু দিনের জন্য ইন্দ্রজিৎ মুম্বই চলে যান। সপ্তাহখানেক আগে কলকাতায় ফিরেছিলেন। আত্মীয়-সূত্রে কাঠমান্ডুতেও তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। কাঠমান্ডু, মুম্বই-সহ ইন্দ্রজিতের সব ক’টি ডেরা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই বিপুল জালিয়াতিতে নিগমের একাংশও কি জড়িত?
এক পুলিশ-কর্তার মন্তব্য, “জেরায় এমন কিছু ইঙ্গিত মিলেছে। যাচাই করা হচ্ছে।”
এ দিন দুপুরে ইন্দ্রজিৎ ও বিমানকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁকে চোদ্দো দিন পুলিশ-হেফাজতে রাখতে বলেন। তাঁকে এজলাসে হাজির করানোর আগে কোর্ট লক-আপের ভিতরে স্বামীর সঙ্গে দেখা করেন রসিকা। মিনিট কয়েক কথা বলে আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে যান। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথা বলতে চাননি। পুলিশ জানিয়েছে, আগের একাধিক জালিয়াতির ঘটনায় ইন্দ্রজিতের শাগরেদ হিসেবে রসিকার নাম জড়িয়ে গেলেও বিত্ত নিগম-কাণ্ডে এখনও তাঁর নাম ওঠেনি।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.