স্পোর্টিং ক্লুব-১ (পেনা)
ইস্টবেঙ্গল-১ (চিডি) |
একশো এক বছর আগের চোদ্দো এপ্রিলের রাত। উত্তর আটলান্টিকে হিমশৈলের আঘাতে ডুবে গিয়েছিল আরএমএস টাইটানিক। মাঝসমুদ্রে সলিলসমাধি ঘটেছিল ১৫০২ জনের।
রবিবার, আর এক চোদ্দো এপ্রিলের পড়ন্ত বিকেলে যুবভারতীতে সলিলসমাধি ঘটল ২০১২-১৩ মরসুমে ইস্টবেঙ্গলের আই লিগ জয়ের স্বপ্ন। তাৎপর্যের, স্পোর্টিংয়ের সঙ্গে ড্রয়ের পর মেহতাব, চিডিরা যখন সারসত্য বুঝে নিয়ে বলছেন, “আর কোনও আশা নেই।” তখন দেশ ছাড়ার আগে ইস্টবেঙ্গল কোচ মর্গ্যান বলে গেলেন, “কে বলতে পারে শেষ পর্যন্ত কী হবে!”
কী অদ্ভুত মিল! টাইটানিক ডোবার মুহূর্তেও জাহাজের ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড স্মিথ ‘এসওএস’ ছাড়তে বলে একই কথা বলেছিলেন। ইতিহাস বলছে, সে দিন সামনে যে মহাবিপদ আসছে তা বুঝতে পেরেছিলেন মাস্তুলে দাঁড়ানো নাবিক ফ্রেডরিক ফ্লিট। এ দিনও ম্যাচ দেখতে আসা প্রয়াগ কোচ এলকো সে রকমই বলে গেলেন, “জানতাম স্পোর্টিং একটা ঝটকা দেবে। এখন বুধবার চার্চিল ডেম্পোকে হারালেই ইস্টবেঙ্গলের কিন্তু সব আশা শেষ।”
সব শুনে গোয়া থেকে চার্চিল কোচ সুভাষ ভৌমিক ফোনে বললেন, “কোনও কথা নয়। দয়া করে বাকি চার ম্যাচ জেতার জন্য মনঃসংযোগ করতে দিন।”
সুভাষ যখন ‘মনঃসংযোগ’ করছেন তখন লাল-হলুদ কোচ পরের মরসুমে থাকবেন কি থাকবেন না, একশো ভাগ চূড়ান্ত করতে পরিবারের উদ্দেশ্যে অস্ট্রেলিয়ার পথে। মাঠে সুবোধ-রাজুদের ঢিলেঢালা ভাব দেখে যুবভারতীতে মর্গ্যানের দায়বদ্ধতা নিয়ে ‘আদ্যশ্রাদ্ধ’ করছিলেন কয়েক জন লাল-হলুদ সমর্থক। যাঁদের বক্তব্য, আই লিগের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পরের বার থাকা না থাকা নিয়ে কোচের বকবকানির জন্যই টিমের ফুটবলাররা এত এলোমেলো। যে অভিযোগ শুনে মর্গ্যান বলছেন, “কেন? প্লেয়াররা তো পেশাদার।”
মর্গ্যানের ‘পেশাদার’ ফুটবলাররাই প্রথমার্ধে এতটাই কুৎসিত ফুটবল খেললেন যে ক্লাবের একটি সূত্র জানাচ্ছেন, সাহেব কোচ বিরতিতে ছেলেদের কড়া ধমকানি দিয়ে ড্রেসিংরুম ছেড়ে বেরিয়ে যান। অহেতুক ঝুড়ি-ঝুড়ি ব্যাকপাস লাল-হলুদ মাঝমাঠে। তাতেই নাকি মেজাজ গরম মর্গ্যানের। কাজের কাজ হচ্ছিল না। বল আসছিল না অ্যাটাকিং থার্ডে। এই সুযোগেই কাউন্টার অ্যাটাকে গোল গোয়ার দলটির। সুবোধের ভুল ট্যাকলে বক্সের সামনে বল পেয়ে যান জাভি-ইনিয়েস্তাদের দেশের স্ট্রাইকার হুয়ান পেনা। সামনে ওপারা-গুরবিন্দর। তাঁদের চার্জ করার দোটানা দেখেই ওই জায়গা থেকে রামধনুর মতো বাঁকানো শটে গোল করেন তিনি। মালাগার হয়ে চার বছর আগে লা লিগায় তিন ম্যাচ খেলেছেন পেনা। বললেন, “আমাকে তো গোল করার যথেষ্ট সময় দিল ওরা।”
এর পর বিরতিতে টিমকে মর্গ্যানের ‘ধমকানি’। তার পরই যেন সব ঠিকঠাক। ওভারল্যাপে যাওয়া রবার্টের সেন্টারে মাথা ছুঁইয়ে গোলশোধ চিডির। কিন্তু তার পরে ৩৩ মিনিট সময় পেয়েও গোল মিসের ব্যর্থতায় জিতে ফেরা হয়নি সঞ্জুদের। নিট ফল, ২৩ ম্যাচে ৪৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশা এখন বোধহয় শুধু অঙ্কের বিচারেই থাকল ইস্টবেঙ্গলের!
টাইটানিক ডোবার পরের সকালে সাগরে ভাসতে থাকা কিছু জীবিত যাত্রীকে উদ্ধার করেছিল কার্পেথিয়া নামক জাহাজ। মর্গ্যানের দলকে জল থেকে টেনে তোলার ‘কার্পেথিয়া’ কি মোহনবাগান? যাদের সঙ্গে চার্চিলকে দু’বার খেলতে হবে। বাংলা নববর্ষের সকাল থেকে সেই আশাই হয়তো ইস্টবেঙ্গলের ‘এসওএস’!
ইস্টবেঙ্গল: অভিজিৎ, রাজু, গুরবিন্দর, ওপারা, রবার্ট, সুবোধ (লোবো), সঞ্জু (ইসফাক), লালরিন্দিকা, পেন, বলজিৎ (রবিন), চিডি।
|
ইস্টবেঙ্গলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস পুণেরও
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা
|
ইস্টবেঙ্গলের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অঙ্কটা ক্রমশই জটিল হয়ে উঠেছে। চার্চিল এক ম্যাচ কম খেলে চার পয়েন্টে এগিয়ে ইস্টবেঙ্গলের থেকে। চার্চিলের বাকি চার ম্যাচ, ইস্টবেঙ্গলের তিন। এর মধ্যে সুভাষ ভৌমিকের দলকে দু’বার মুখোমুখি হতে হবে মোহনবাগানের। লাল-হলুদ ভক্তরা এখন তাকিয়ে চিরশত্রুর দিকে। যদি মোহনবাগান কোনও ভাবে চার্চিলকে হারিয়ে ইস্টবেঙ্গলের সুবিধা করে দিতে পারে। রবিবার পুণে ১-০ হারায় ওএনজিসি-কে। যার নিট ফল ইস্টবেঙ্গলের তুলনায় এক ম্যাচ কম খেলে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে মেহতাবদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে ডেরেক পেরেরার দল। আই লিগের অন্য ম্যাচে মুম্বই এফসি’কে ২-০ হারাল শিলং লাজং। |