|
|
|
|
অমিত মিত্র নিগ্রহ |
দোষীদের শাস্তিতে দেরি কেন, প্রশ্ন সিপিএমেই |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে নিগ্রহের ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করল সিপিএম। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য দলের দিল্লি রাজ্য কমিটিকে বার্তা পাঠিয়েছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু যে ঘটনার জেরে দলের ভাবমূর্তির বিরাট ক্ষতি হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে লাগাতার আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে দলীয় কার্যালয় এবং নেতা-কর্মীদের, সেই কাণ্ডে ব্যবস্থাগ্রহণের প্রক্রিয়ার গতি এত শ্লথ কেন প্রশ্ন উঠছে দলেই!
সিপিএম সূত্রের খবর, দিল্লির রাজ্য নেতৃত্ব এবং অন্যান্য গণসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে নিগ্রহ-কাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে ৫ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে দলীয় স্তরে। তবে এঁরা কেউই ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের সদস্য নন। ওই ৫ জনের মধ্যে তিন জনই দিল্লি রাজ্য কমিটির সদস্য। এই তিন জনের মধ্যে এক জন সিপিএমের গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির অনুমোদিত জনবাদী মহিলা সমিতির নেত্রী, এক জন আবার দিল্লির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীরও সদস্য! ৫ জনের মধ্যে বাকি দু’জন দিল্লিরই লোকাল কমিটি স্তরের সদস্য। দলীয় স্তরে চিহ্নিত করার কাজ এক প্রকার হয়ে গেলেও আরও কেউ অমিতবাবুকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহে হাত লাগিয়েছিলেন কি না, নিশ্চিত হওয়ার জন্য সেই দিনের ঘটনার ফুটেজ পাঠাতে দিল্লি পুলিশের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে।
দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, “যে ৪-৫ জন ওই অনভিপ্রেত ঘটনায় জড়িত বলে জানা যাচ্ছে, তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দিল্লি রাজ্য কমিটিকে বলা হয়েছে। তবে কোনও সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি।” সিপিএমের একটি সূত্রের ইঙ্গিত, চলতি মাসের শেষ দিকে দিল্লির রাজ্য কমিটির বৈঠক হতে পারে। সেখানেই উঠতে পারে বিষয়টি। সিপিএমের গঠনতন্ত্র মেনে রাজ্য কমিটি কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করলে তা আবার অনুমোদন করাতে হবে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে। এপ্রিলেই যে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক ভাবে পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল বলে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে মে মাসে।
অমিত-নিগ্রহে সিপিএম নেতৃত্ব যথেষ্টই বিব্রত। আপাতত তাঁরা চাইছেন ‘প্রতীকী’ অর্থে হলেও দোষীদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নিয়ে কিছুটা ভাবমূর্তি রক্ষা করতে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল এবং সিপিএম, দু’দলই অন্যায় করে দায় স্বীকার করে না বলে যে তুলমূল্য সমালোচনা চলছে, ব্যবস্থা নিলে তার থেকেও খানিকটা দায়মুক্ত হওয়া যাবে বলে সিপিএম নেতৃত্বের ধারণা। দলের এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, “যোজনা কমিশনের ঘটনার দিন পুলিশের নিরাপত্তা আয়োজন অস্বীকার করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্য মন্ত্রীরা উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন, এটা ঠিক। কিন্তু এটাও ঠিক যে, নিগ্রহের ঘটনা আমাদের অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে। রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রতি মানুষের অসন্তোষ যখন বাড়ছিল, সেই সময় এই ঘটনা তৃণমূলকে আবার গলা চড়াতে সাহায্য করেছে।”
এই সূত্রেই কিছু প্রশ্ন উঠছে সিপিএমের অন্দরে। এ রাজ্যের এক রাজ্য কমিটির সদস্যের প্রশ্ন, “দলের গঠনতন্ত্র মেনে অনেক রকম শাস্তির ব্যবস্থা করা যায়। কী ঘটেছে যখন জানাই যাচ্ছে, দ্রুত ব্যবস্থা নিলে তবেই জনমানসে কিছুটা ভাল বার্তা যাওয়া সম্ভব!” পরিস্থিতি অবশ্য এখনও যথেষ্ট জটিল রেখেছে দিল্লির রাজ্য সম্পাদক পুষ্পেন্দ্র গ্রেওয়ালের (দলে যিনি ‘কমরেড পুসি’ নামে বেশি পরিচিত) অবস্থান। দলের অন্দরে তিনি এখনও সওয়াল করছেন, সে দিন তাঁর কমরেডরা ভুল কিছু করেননি! সুদীপ্ত গুপ্তের মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যা খুশি মন্তব্য করবেন আর তাঁদের কমরেডদের হাতে চুড়ি পরে বসে থাকতে হবে এমন মনে করার কোনও কারণ নেই বলে তিনি দলে সওয়াল করেছেন, জানা যাচ্ছে সিপিএম সূত্রে। প্রকাশ্যে তিনি অবশ্য মুখ খুলতে নারাজ। গ্রেওয়ালের পাশাপাশিই কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর এক বাঙালি সদস্যের ভূমিকা নিয়েও দলে প্রশ্ন উঠেছে। সিপিএমের একটি সূত্রের খবর, ৯ তারিখ যোজনা কমিশনে তৃণমূল নেত্রী যাবেন, সেই খবর দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের জানা ছিল না। আগের দিন ওই কেন্দ্রীয় নেতাই কারাটকে বলেন, সুদীপ্ত-মৃত্যুর পরে মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি আসছেন। তাঁদের বিক্ষোভ করা উচিত। ঘটনার পরে আলিমুদ্দিনের ক্ষোভের মুখে কারাট পুরো বিষয়টিই বিমান বসু-বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যদের জানিয়েছেন।
শুধু বিক্ষোভকারীরাই নন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দিকেও আঙুল তুলছে দলের একাংশ। পশ্চিমবঙ্গেরই রাজ্য কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, “দিল্লি পার্টি কংগ্রেসের পরে ২০০৬-এ দলিল তৈরি হয়েছিল দল এবং গণসংগঠনের ভূমিকা নিয়ে। কোঝিকোড়েও তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই দলিল অনুযায়ী, গণসংগঠনের কর্মসূচিতে দল কখনওই জড়াবে না। তা হলে দিল্লির বিক্ষোভে এসএফআই এবং দলের রাজ্য কমিটি মিশে গেল কী ভাবে? খাস দিল্লিতেই কি তার মানে কেন্দ্রীয় কমিটির নজরদারি বলে কিছু নেই?” |
পুরনো খবর: রাজধানীতে এসএফআইয়ের হাতে নিগৃহীত অমিত মিত্র |
|
|
|
|
|