|
|
|
|
বিহুর ছন্দে জীবনের সুর খুঁজছে অসম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
লাল-সাদা ফুলাম গামোসা আর মুগা-লালের মেখলা চাদরে মুড়ে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে নেমে এসেছে বিহুর মরসুম। লালে-তসরে লটপটাচ্ছে কচি বিহুরানিদের দল। চড়া রোদকে হেলায় হারিয়ে সেই উত্তাপ আগামী এক সপ্তাহ লোহিত পারে জীবনের সুর খুঁজে নেবে। বহাগি বিহুর তালে আজ উত্তাল অসম। গরু বিহুর দিন, খোদ বর্ষীয়ান মুখ্যমন্ত্রী ডিমের লড়াইতে নেমে চারবারের মধ্যে তিনবার জিতে গিয়ে আত্মহারা। বিহুর পাঁচটি ঐতিহ্য মুগা, গামোসা, আহোম অলঙ্কার, শিবসাগরের ঢোল, সর্থেবাড়ির কাঁসা-পিতল-সবই খানিকটা হলেও বিপন্নতার মুখে দাঁড়িয়ে। তবু, রাজ্যের বৃহত্তম উৎসবের দিনে আজ বিপন্নতা, অভিমান সরিয়ে রাখতে চাইছে অসম।
শেষ চৈত্রেই যেন ভরা বৈশাখের গরম। তার মধ্যেই রাজ্যের সর্বত্র চলছে বিহুর কর্মশালা আর প্রাক বহাগি মেলা। ধুবুরি থেকে শদিয়া অবধি চার থেকে চুরাশি ‘বিহু আনন্দিয়া, বিহু বিনন্দিয়া’র সুরে মত্ত। ডন বস্কো স্কুল চত্বর বা শিল্পগ্রামে শহর ও জেলার প্রায় দুইশো ছাত্রছাত্রী হাতের মুদ্রা, পায়ের ভঙ্গিমার সঙ্গেই, ঢোল, পেপা (শিঙা), গগনায় সুর তোলবার কায়দাও রপ্ত করে ফেলেছে। বিহুটুলির সমবেত নৃত্যের পাশাপাশি, বিভিন্ন বয়সীদের জন্য চলবে হরেক প্রতিযোগিতাও। সেখানে সেরা দল, সেরা নাচিয়ে, সেরা বাজিয়ে বা সবার উপরে ‘বিহু সম্রাজ্ঞী’ হতে পারলে তো কেল্লা ফতে। প্রশিক্ষণ ও প্রসাধনে শেষ পোঁচ দিয়ে তাই বিহু সুন্দরীর দল তৈরি। |
|
বিহুর তালে অঙ্গ দোলে। গুয়াহাটিতে রবিবার উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি। |
বিহুর আগেই বাইরের রেশমের আগ্রাসন থেকে স্থানীয় রেশমবস্ত্র বাঁচাতে আন্দোলনে নেমেছিলেন শুয়ালকুচির শিল্পীরা। অভিযোগ, বাইরে থেকে নকল ফুলাম গামোসাও বাজার ভরিয়ে ফেলছে। শিবসাগরে ঢোল শিল্পও পতনোন্মুখ। গত আড়াইশো বছর ধরে, জামুগুড়ির শিল্পীরা ঢোল বানানোর জন্য বিখ্যাত। আহোম রাজারা বিহু ‘হুসোরি’র সময় থেকেই জামুগুড়ির ঢোলকে সেরার সম্মান দিয়েছেন। এখানকার তিরিশটি বাড়িতে একশজন শিল্পী আপাতত ঢোল বানাতেন। কিন্তু সস্তা ঢোলের সামনে টিঁকতে না পেরে বর্তমানে, মাত্র দুটি পরিবার বাদে বাকিরা অন্য জীবিকা খুঁজে নিয়েছেন। কাঁঠালকাঠের খোলে ২২ ইঞ্চির সেই ঢোল কিনতে ৬ হাজার টাকা লাগে। শিবসাগরেরই আনন্দ গগৈ অসমে প্রথম বাঁশের ঢোল-শিঙা তৈরি শুরু করেছেন। একই জেলার বাসিন্দা, ওএনজিসির ইঞ্জিনিয়র দ্বিজেন গগৈয়ের তৈরি ২৭ ফুট লম্বা সম্প্রীতির ‘বর টকা’ (বাঁশের বাদ্যযন্ত্র) ও ‘জেং টং’ (বাঁশের ড্রাম) এবারের বিহুতে বড় আকর্ষণ। ‘ডলৌ বা’ বাঁশ থেকে তৈরি এই বর টকা বাজাতে ছয় জন ও জেং টং বাজাতে ২০ জন বায়েনের দরকার পড়বে।
অসমের আরও এক ঐতিহ্য সর্থেবাড়ির কাঁসা-পিতল। বিহুর সরাই, করতাল, বাসনপত্র সবই আগে বরপেটার সর্থেবাড়িতে তৈরি হত। ভুটান, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, তাইল্যান্ডেও এখান থেকেই কাঁসা-পিতলের সামগ্রী যেত। বর্তমানে, এখানকার ১৮০০ শিল্পী এই শিল্পে যুক্ত। কিন্তু আমদানি করা সস্তার বাসনপত্র এমনকী সরাইও বাজার ছেয়ে ফেলায় তাঁদের অবস্থা বিপন্ন।
অন্য দিকে, অসমিয়া মেয়েদের কজনই বা হাতে সোনার গামখারু, গলায় গোলপোটা, কানে সোনার থুরিয়া পরতে পারবেন? ডুগডুগি, বেনা, জেথিপোতাই, জাপি, সিলিখা, ঢুল, লোকাপারো বহু যুগ থেকে অসমিয়া সজ্জার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। নির্দিষ্ট কারিগর ছাড়া ওইসব গয়না অন্যত্র বানানো সম্ভব নয়। কিন্তু, সোনার যা দাম তাতে ২৪ ক্যারাট ‘পাত সুন’-এ মোড়া আসল অসমিয়া গয়না গায়ে তুলতে গেলে ভাঁড়ে টান পড়বে। এই সব গয়নার নক্সা অবিকল নকল সস্তার সোনার জল করা সংস্করণও বাজারে চলে এসেছে।
প্রবাসী অসমিয়াদের এ বার বিহুটুলিতে টেনে আনতে চাইছে ১৯৬২ সালে যাত্রা শুরু করা ‘পূব গুয়াহাটি বিহু সম্মিলন’। চানমারির মাঠে চার দিনের পুরো অনুষ্ঠান এঁরা ইন্টারনেটে আপলোড করে যাবেন।
|
ধুবুরিতে শুরু বিহু
নিজস্ব সংবাদদাতা • ধুবুরি |
রবিবার থেকে অসমের ধুবুরিতে শুরু হয়েছে রঙালি বিহু উৎসব। ধুবুরি কেন্দ্রীয় রঙালি বিহু উদযাপন সমিতির উদ্যোগে শহরে রাজা প্রভাতচন্দ্র বরুয়া খেলার মাঠে শুরু হয়েছে এই উৎসব। তিন দিনের উৎসবের উদ্বোধন করেছেন ধুবুরির জেলাশাসক ধুবুরি কেন্দ্রীয় রঙালি বিহু উদযাপন সমিতি সভাপতি কুমুদ চন্দ্রকলিতা। উৎসবের প্রথম দিন ‘হুচরি’, ‘নাচনী’র সঙ্গে ঢুলিয়ার তালে জেলাশাসক থেকে শুরু করে দর্শকেরা কোমর দোলান। শান্তিরক্ষার আর্জি জানিয়ে একটি শোভা যাত্রারও আয়োজন করে বিহু উৎসব কমিটি। উৎসবের ৩ দিন শিশু সহ সব বয়সের বাসিন্দাদের নিয়ে প্রতিযোগিতা হবে বলে জানানো হয়েছে। ধুবুরি কেন্দ্রীয় রঙালি বিহু উদযাপন সমিতি সম্পাদক পুলক দেব বলেন, “রঙালি বিহুর মাধ্যমে ধুবুরিতে শান্তির পরিবেশ থাকবে।” চৈত্র সংক্রান্তির শেষ দিনের ঐতিহ্য মেনে এই দিন ‘গরু বিহু’ পালন করা হয়েছে উৎসব চত্বরে। |
|
|
|
|
|