গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (জিটিএ) পূর্ণ সময়ের জন্য প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পদমর্যাদার অফিসার নিয়োগ করার ব্যাপারে আলোচনা হয়ে গিয়েছে বলে জানাল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত মামলার শুনানির সময় রাজ্যের তরফে জানানো হয়, বিজ্ঞপ্তি জারি না হওয়ায় এই মুহূর্তে নামগুলি আদালতে জানানো যাচ্ছে না। সরকারি ভাবে নাম ঘোষণার আগে সাত দিন সময় চেয়েছে রাজ্য।
এ দিন আদালতে জিটিএ-র পক্ষে আইনজীবী প্রবাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “জিটিএ আইনে (৫১ ও ৫২ ধারা অনুযায়ী) বলা হয়েছে, প্রধান সচিব পদে এক জন পূর্ণ সময়ের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পদমর্যাদার অফিসারকে নিয়োগ করবে রাজ্য সরকার এবং তাঁকে বেতন দেবে জিটিএ। এ জন্য রাজ্যের তিন জনের নাম পাঠানোর কথা এবং তার মধ্যে থেকে এক জনকে প্রধান সচিব হিসেবে ঠিক করবে জিটিএ। কিন্তু রাজ্য সরকার এখনও প্রধান সচিবের নাম পাঠায়নি।”
বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত জানতে চান, কেন রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে দেরি করছে। রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়, জিটিএ চুক্তি হওয়ার সময়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে মোর্চার ‘সুসম্পর্ক’ ছিল। মোর্চার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই দার্জিলিঙের জেলাশাসককে জিটিএ-র প্রধান সচিব পদে নিয়োগ করা হয়েছিল। বর্তমানে সেই সম্পর্কের ‘অবনতি’ হয়েছে।
বিচারপতি জানান, মোর্চা-সরকারের সম্পর্কের বিষয় নিয়ে তিনি জানতে আগ্রহী নন।
জিটিএ আইন অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কি না, জানতে চান তিনি। জিটিএ-র অন্য আইনজীবী অয়নাভ রাহা আদালতে জিটিএ-চুক্তিটি পড়ে শোনান। তিনি জানান, চুক্তি অনুযায়ী রাজ্য সরকারের পাঠানো তিনটি
নাম থেকেই জিটিএ প্রধান সচিব ঠিক করার কথা।
রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়, জিটিএ-কে প্রধান সচিব পদের জন্য যোগ্য অফিসারদের নাম পাঠানোর ব্যাপারে সরকার আলোচনা-পর্ব মিটিয়ে ফেললেও সে বিষয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তি এখনও জারি হয়নি। তাই আদালতকে এই মুহূর্তে নাম জানানো সম্ভব নয়। রাজ্য সরকার সাত দিন পরে হাইকোর্টে রিপোর্ট দিয়ে তা জানিয়ে দেবে।
জিটিএ-র প্রাক্তন প্রধান সচিব সৌমিত্র মোহনকে একই সঙ্গে দার্জিলিঙের জেলাশাসকের দায়িত্বও পালন করতে হত। প্রথম দিকে জিটিএ-তে ক্ষমতাসীন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সৌমিত্রবাবুকে প্রধান সচিব হিসেবে মেনে নিয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম করেছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, নিয়োগ, কেনাকাটা ও দরপত্র সংক্রান্ত নানা বিষয়ে আইনি প্রশ্ন তুলে দার্জিলিঙের জেলাশাসক তাদের বাধা দিচ্ছেন বলে মোর্চার তরফে অভিযোগ ওঠে। তখনই মোর্চা ওই পদ থেকে সৌমিত্র মোহনকে সরিয়ে পূর্ণ সময়ের প্রধান সচিব নিয়োগের দাবি তোলে।
গত ২৯ জানুয়ারি দার্জিলিঙে উত্তরবঙ্গ উৎসবের মঞ্চের সামনে আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে স্লোগান দেওয়া হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ ঘোষণা করে ওই স্লোগান থামাতে মোর্চা নেতৃত্বকে বাধ্য করান। এর পরেই মোর্চার সঙ্গে রাজ্যের সম্পর্কের অবনতি হয়। কয়েক দিনের মাথায় জিটিএ-এর তরফে সৌমিত্র মোহনকে প্রধান সচিব পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্য সরকারকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়।
সম্প্রতি মোর্চা সুর নরম করলে রাজ্য নমনীয় মনোভাব দেখিয়ে প্রধান সচিব হিসেবে জলপাইগুড়ির বিভাগীয় কমিশনারকে ওই পদে বসানোর প্রস্তাব দেয়। জিটিএ-র তরফে তা খারিজ করা হয় এবং ওই ব্যাপারে উচ্চ আদালতে মামলা করা হয়।
সেই প্রেক্ষিতে এ দিন আদালতে রাজ্যের বক্তব্য শুনে পাহাড়ের রাজনীতির নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের একটা বড় অংশের ধারণা, জিটিএ-র প্রধান সচিব নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় আগের থেকে অনেকটাই ‘নমনীয়’ অবস্থানে এসেছে রাজ্য সরকার। |