প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার সহ ৩ জনকে ব্যক্তিগত জামিনেই মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বুধবার তৃণমূলের মিছিলের উপরে হামলার অভিযোগে সিপিএমের ৫১ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি আদালতে হাজির করানো হলে তাঁদের মধ্যে ৫ মহিলাকে অবশ্য শর্তসাপেক্ষে জামিন দেওয়া হয়েছে। দু’জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকি ৪৪ জনকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন এসিজেএম মধুমিতা বসু। ধৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশের উপরে হামলা, সরকারি সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আদালতে ‘কেস ডায়েরি’ পেশ করতে না পারায় ভর্ৎসিত হয়েছে পুলিশও। যে মামলায় জড়িত সন্দেহে এত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেখানে কেস ডায়েরি পেশে গাফিলতি বাঞ্ছনীয় নয় বলে জানিয়ে দেন বিচারক। এর পরেই দ্রুত তা আদালতে পেশের নির্দেশ দেন তিনি। সেই মতো আজ, শুক্রবার ওই কেস ডায়েরি পেশ হওয়ার কথা। ফলে, আজ, ধৃতদের ফের আদালতে হাজির করানো হবে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমার বলেন, “আদালতের নির্দেশ মেনে দ্রুত সব পদক্ষেপ করা হবে।” |
শিলিগুড়ি থানা থেকে ফেরার পরে দলীয় কার্যালয়ে অশোক ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক |
বুধবার শিলিগুড়িতে এক ঘণ্টার ব্যবধানে সিপিএম-তৃণমূলের মিছিল, সভা ঘিরে তপ্ত হয় শহর। দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পুলিশ, পথচারী, সাংবাদিক সহ অন্তত ৩৫ জন আহত হন। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূলের মিছিল থেকে প্ররোচনার সূত্রপাত। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, সিপিএমের অফিস থেকে তাদের মিছিলে জল, সোডার বোতল, পাথর ছুড়ে গোলমাল পাকানো হয়। ওই রাতেই পুলিশ গিয়ে অশোকবাবু, জীবেশবাবু, ডিওয়াইএফআইয়ের জেলা সম্পাদক শঙ্কর ঘোষ সহ ৫৯ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তাঁদের মধ্যে ৫৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে কিছুক্ষণ পরে ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরেও অশোকবাবু, জীবেশবাবু এবং শঙ্করবাবু প্রায় সারা রাতই থানায় থেকে
যান। ভোরে তিন নেতা বাড়িতে ফেরেন। এর পরে বাকিদের আদালতে হাজির করানোর প্রস্তুতি নেয় পুলিশ।
কিন্তু বামফ্রন্টের ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্ধের জেরে আদালতে স্বাভাবিক কাজকর্ম হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। বেলা ৯টায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব নেতা-কর্মীদের নিয়ে শহরে মিছিল করে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার আর্জি জানান। বেলা বাড়তেই দেখা যায়, বন্ধ উপেক্ষা করে শহরে যানবাহন চলছে। দোকানপাটও খুলছে। একাধিক স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় স্বাভাবিক ছিল। এমনকী, বাম মনোভাবাপন্ন আইনজীবীরাও আদালতে হাজির হন। গণতান্ত্রিক আইনজীবী সেলের পক্ষে মিলন সরকার সহ ৫০ জন আইনজীবী ধৃত সিপিএম নেতা-কর্মীদের হয়ে সওয়াল করেন। মিলনবাবু আদালতে দাবি করেন, “পুরো মামলা সাজানো। পুলিশ যাঁদের আহত হওয়ার কথা বলছে, তাঁদের হাজির করানোর সম্ভাবনা নেই। কারণ কেউ আহত হননি।” এর পরে সরকারি আইনজীবী সুদীপ রায় বাসুনিয়া আদালতে জানান, “দুই পুলিশকে মারধর করা হয়েছে। তবে তাঁদের নাম এখনও পুলিশের তরফে জানানো হয়নি। পরের শুনানিতে জানানো হবে।” উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিচারক শিলিগুড়ি পুরসভার কাউন্সিলর শালিনী ডালমিয়া, রাগিণী সিংহ, মৌসুমী হাজরা ও প্রীতিকণা বিশ্বাস সহ ৫ মহিলাকে শর্ত সাপেক্ষে জামিনে মুক্তি দেন।
এদিন সকাল থেকেই পুলিশে ছয়লাপ ছিল আদালত চত্বর। সিপিএম সমর্থকেরা স্লোগান দিলেও পরিস্থিতি পুলিশের আয়ত্তে ছিল। আদালতে শুনানি চলাকালীন সিপিএমের দুই কর্মী চঞ্চল চক্রবর্তী ও সন্তোষ সহানি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়।
সন্ধ্যায় প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবু তাঁদের ডাকা বন্ধ সফল হয়েছে বলে দাবি করেন। তাঁর কথায়, “পুলিশ আমাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেছে। তবে রাজ্যের শাসক দল পুলিশকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করছে। যে ভাবে পার্টি অফিসের ভেতরে ঢুকে আমাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তা অমানবিক, অসাংবিধানিক এবং বেআইনি। আমাদের কর্মীদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।” জীবেশবাবু জানান, আজ, শুক্রবার জেলা বামফ্রন্টের বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠক থেকে আগামী দিনের আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়া হবে।
এদিন বিকেলে ফের তৃণমূলের মিছিলে প্রায় ২ ঘণ্টার জন্য শহরের যানবাহন চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তবে মিছিল ঘিরে কোনও গোলমাল হয়নি। মন্ত্রী গৌতমবাবুর অভিযোগ, “পরিকল্পিত ভাবে আমাদের প্রতিবাদ মিছিলের উপরে হামলা করে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে সিপিএম। মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর উপরে যে ভাবে হামলা করা হয়েছে তা মানুষ দেখেছেন। তাই প্রতিবাদে মানুষ সোচ্চার হয়েছেন। তা বুঝতে পেরে বিষয়টিকে অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করছেন সিপিএম নেতারা।” |