শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমারের ক্ষমতা কার্যত খর্ব করে দিল রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর। বুধবার শহরে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষ এড়াতে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিতে না-পারায় সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাতে রাজ্য পুলিশের সদর দফতর থেকে এক নির্দেশ জারি করে কমিশনারের ক্ষমতা খর্ব করা হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই নির্দেশে বলা হয়েছে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের দৈনন্দিন কাজের তদারকির দায়িত্ব রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজিকে দেওয়া হল। সেই সঙ্গে পুলিশ কমিশনারকেও যাবতীয় বিষয়ে আইজির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলেও নির্দেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওই নির্দেশ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার। আনন্দ কুমার বলেন, “এমন একটা নির্দেশ পেয়েছি। পুলিশ কমিশনারেটের কাজকর্মের তদারকি ও পরামর্শ দেওয়ার দায়িত্ব উত্তরবঙ্গের আইজিকে দেওয়া হয়েছে।” শিলিগুড়িতে ওই দিন সিপিএম এবং তৃণমূলের খুব কাছাকাছি সময়ে মিছিল ও সমাবেশ ছিল। তা জানা সত্ত্বেও কেন পুলিশ আগাম সব রকম ব্যবস্থা নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সিপিএম এবং তৃণমূল দু’তরফেই পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছিল। এই প্রসঙ্গে সিপির বক্তব্য, “গোড়ায় অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটলেও শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি পুলিশই সামাল দিয়েছে। পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও ছিল। তার পরেও কেন এমন ঘটল, তা নিয়ে বিভাগীয় তদন্তও তো শুরু করিয়েছি। এর বেশি কিছু বলার নেই।”
ঘটনা হল, শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারের পদটি রাজ্য পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার সমতুল্য। কিন্তু পুলিশ কমিশনারেট এলাকাকে রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজির আওতার বাইরে রাখা হয়। তাই এতদিন কমিশনারেটের আওতায় থাকা এলাকায় যে কোনও ব্যাপারে একক ভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল শিলিগুড়ির সিপির। তিনি সরাসরি রাজ্য পুলিশের ডিজির কাছে রিপোর্ট করতেন। যে ভাবে রাজ্যের আরও চারটি কমিশনারেট হাওড়া, ব্যারাকপুর, বিধাননগর ও আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনাররাও সরাসরি ডিজি-কেই রিপোর্ট করেন। শিলিগুড়ি কমিশনারেটের ক্ষেত্রে এ বার উত্তরবঙ্গের আইজি-র ক্ষমতা বাড়িয়ে সেই প্রথার পরিবর্তন করা হল।
তাই পুলিশ কর্তাদের অনেকেরই মতে, নতুন নির্দেশের ফলে শিলিগুড়ির সিপি-র একক ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কার্যত খর্ব করা হল। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানান, দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীকে হেনস্থা ও তার ফলে রাজ্যের নানা এলাকার সঙ্গে শিলিগুড়িতে যা হয়েছে তা মাথায় রেখেই ওই দিন গোলমাল এড়ানোর জন্য পুলিশের আরও সক্রিয় থাকা উচিত ছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত পুলিশ, উত্তেজিত জনতাকে সামলানোর প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম (জলকামান ইত্যাদি) থাকা সত্ত্বেও শিলিগুড়িতে প্রায় আড়াই ঘন্টা ধরে বিক্ষিপ্ত ভাবে সংঘর্ষ হয়েছে। তাতে মহাকরণের কর্তাদের অনেকেই উদ্বিগ্ন। প্রশাসনিক সূত্রেই জানা গিয়েছে, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিলিগুড়িতে কেন এমন কাণ্ড ঘটল তা নিয়ে বিশদে খোঁজখবর নেন। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফেও পৃথক ভাবে শিলিগুড়ির ব্যাপারে রিপোর্ট তলব করা হয়। শুধু তাই নয়, ঘটনার দিন, বুধবার শেষ পর্যন্ত রাজ্য পুলিশের ডিজি পদমর্যাদার অফিসারদের কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গের আইজি সহ একাধিক অফিসারকে বারবার নির্দেশ দিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে হয়েছে বলেও পুলিশ মহলে খবর। কেন এমন করতে হল সেই প্রশ্নও ওঠে মহাকরণে। সরকারি সূত্রের খবর, রাতেই পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের কাজের তদারকির দায়িত্ব উত্তরবঙ্গের আইজির উপরে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট সকলকে জানিয়ে দেওয়া হয়।
এই ব্যাপারে উত্তরবঙ্গের আইজি অনুজ শর্মা বলেন, “শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের তদারকি করার জন্য আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই মতো কাজ শুরু করেছি।” |