৪ দফায় ভোট চেয়েছিল কমিশন, মানেনি রাজ্য |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
এক দফা না চার দফা, এই টানাপোড়েনেই প্রথম থেকে আটকে ছিল পঞ্চায়েত ভোটের ভবিষ্যৎ। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে নির্বাচন কমিশন বনাম রাজ্য সরকার মামলায় কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল তথ্যপ্রমাণ দিয়ে এই বিষয়টিই তুলে ধরেন।
এত দিন ধরে নির্বাচন কমিশনের তরফে বারবার তিন দফায় কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোটের কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু এ দিন আদালতে সওয়াল করার সময় কমিশনের আইনজীবী জানালেন, তিন নয়, প্রথমে চার দফাতেই ভোট করতে চেয়েছিল কমিশন। এই ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে রাজ্য সরকারকে পাঠানো চিঠিতে তারা প্রস্তাবিত তারিখও জানিয়েছিল। কিন্তু রাজ্য বরাবর এক দফায় এবং দ্রুত ভোট শেষ করতে চেয়েছে। এক সময়ে তারা ২০১২ সালের মধ্যেই ভোট শেষ করতে চেয়েছিল। সমরাদিত্যবাবু জানান, রাজ্য সরকার বললেই কমিশন তা করতে পারে না। কমিশনের একটা সাংবিধানিক দায়িত্ব রয়েছে। এবং কমিশন সেই দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারে না।
কেন ২০১২ সালের মধ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন করা সম্ভব ছিল না?
একাধিক কারণ ব্যাখ্যা করেন সমরাদিত্যবাবু। কমিশনের প্রথম যুক্তি, ৮ জুন পর্যন্ত পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদগুলির মেয়াদ। ২০১২ সালের মধ্যে ভোট প্রক্রিয়া শেষ করে ফেললে নির্ধারিত সময়ের ছ’মাস আগে নতুন প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়ে যাবেন। অথচ তখনও পুরনো পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা রয়ে যাবেন। সে ক্ষেত্রে নতুন এবং পুরনোদের মধ্যে সংঘাত হবে। আইনশৃঙ্খলা সমস্যা দেখা দেবে কমিশন সরকারকে জানিয়েছে।
রাজ্য সরকার চাইলেও কেন কমিশন এক দফায় এবং এবং বর্তমান পঞ্চায়েতের মেয়াদ শেষ হওয়ার খুব বেশি আগে ভোট করাতে চায়নি, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আরও যুক্তি দেন সমরাদিত্যবাবু। জানান, ২০১২ সালের ১ অক্টোবর থেকে দেশের নির্বাচন কমিশন নতুন ভোটার তালিকার কাজ শুরু করে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন কেন্দ্র অনুযায়ী ভোটার তালিকা তৈরির কাজ করেন যাঁরা, তাঁরাই দেশের নির্বাচন কমিশনের নতুন ভোটার তালিকা তৈরির কাজ করেন। তাই, ভোটার তালিকার কাজ শেষ হলে তবেই ডিমিলিটেশনের কাজ করা সম্ভব।
গত সেপ্টেম্বরেই রাজ্য সরকার জানিয়ে দেয়, নির্বাচন হবে ২০১৩ সালের ২০ জানুয়ারিতে, এক দফায়। ওই চিঠির জবাবে কমিশন রাজ্য সরকারকে জানায়, ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা নিয়ে ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে চার দফায় ভোট করা সম্ভব হত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। তবে ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শেষ হলে ২৪, ২৯ জানুয়ারি এবং ২ ও ৬ ফেব্রুয়ারি চার দফায় নির্বাচন করা যায়।
পরে অক্টোবরে কমিশন রাজ্য সরকারকে আবার জানায়, ২০১৩ সালের ৪, ৮, ১২ ও ১৬ মে রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন করা যায়। ফল গণনা ১৯ মে। ৩ অক্টোবর রাজ্য সরকার কমিশনকে বলল, ১০ ফেব্রুয়ারি এক দফায় নির্বাচন হবে এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি গণনা হবে। সমরাদিত্যবাবু আদালতকে দেখান, রাজ্য সরকার এক দফায় এবং দ্রুত পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে চেয়েছে। জবাবে কমিশন বলেছে, কেন সেটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। বদলে কী করা যায়, তা-ও বলেছে তারা। কিন্তু মানা সম্ভব হবে না বুঝেও রাজ্য সরকার বারবার দিন ঠিক করে চিঠি দিয়েছে। এক দফায় এবং রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ দিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন শেষ করার জন্য রাজ্য সরকারের এই জেদ কমিশন সাংবিধানিক দায়িত্ব এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থেই মানতে পারেনি।
|