বিচারপতির পরামর্শে এক দিনের মধ্যেই আলোচনায় বসলেন দু’পক্ষের দুই আইনজীবী। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে জট খুলল না শুক্রবার রাতের সেই বৈঠকেও। আলোচনা আটকে গেল কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের প্রশ্নেই। রাতে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “বৈঠক ব্যর্থ।”
এ দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় অ্যাডভোকেট জেনারেলের ব্রড স্ট্রিটের বাড়িতে যান সমরাদিত্যবাবু। সেখান থেকে বার
|
বিমল চট্টোপাধ্যায়
|
|
সমরাদিত্য পাল |
হন আটটা কুড়ি নাগাদ। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, বিমলবাবুর বাড়িতে সমরাদিত্যবাবু মিনিট পঞ্চাশেক থাকলেও দু’জনের বৈঠকের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র কয়েক মিনিটের। কমিশন সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রশ্নেই এ দিন রাতের বৈঠক ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে। আলোচনায় প্রথমেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রসঙ্গ ওঠে। তাতে দু’পক্ষই নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় অন্য কিছু নিয়ে কথার অবকাশ ছিল না বলে কমিশন সূত্রের খবর। এই বৈঠক ব্যর্থ হওয়ায় আপসে বিবাদ মেটার সম্ভাবনাও আপাতত শেষ হয়ে গেল মনে করা হচ্ছে। পঞ্চায়েত ভোটের ভাগ্য এ বার আদালতেই নির্ধারিত হবে। ফলে ভোট হওয়া নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ছিল, তা রয়ে গেল পুরোমাত্রায়। মঙ্গলবার বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের এজলাসে দু’পক্ষই বৈঠক নিয়ে নিজেদের বক্তব্য পেশ করবে।
কমিশন যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রশ্নে আপস করবে না, বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারের চিঠি পাওয়ার পরে হাইকোর্টে দাঁড়িয়েই তা পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন সমরাদিত্যবাবু। এ ব্যাপারে কমিশন যে হলফনামা পেশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে: রাজ্যে গত পাঁচটি বড় নির্বাচনের যে তিনটি শুধু রাজ্য পুলিশের তত্ত্বাবধানে হয়, সেখানে সর্বাধিক মৃত্যুর সংখ্যা ৫৮। ন্যূনতম ২৭। আর যে দু’টি ভোট কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে হয়েছে, সেখানে মাত্র এক জন মারা গিয়েছেন।
পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন জরুরি, তা ব্যাখ্যা করে সমরাদিত্যবাবু জানিয়েছিলেন, স্থানীয় সমস্যার ভিত্তিতে পঞ্চায়েত ভোট হয়। তাই সেই ভোটে সংঘর্ষের আশঙ্কা বেশি। বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক এবং পুলিশকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেও নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নিশ্চিত হয়েছে বলে আদালতে সওয়াল করেছিলেন তিনি।
কমিশনের এই মনোভাব জেনেও রাজ্য কীসের ভিত্তিতে আলোচনায় রাজি হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। রাজ্য সরকার সূত্রের খবর, বৈঠকে রাজি হলেও রাজ্য যে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের প্রস্তাব মেনে নেবে না, তা পরিষ্কার হয়ে যায় এ দিন বিকেলেই। হাইকোর্টে গিয়ে অ্যাডভোকেট জেনারেলের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে সরকার যে অবস্থান বদলাচ্ছে না, সেটা তখনই জানিয়ে দেওয়া হয় বিমলবাবুকে।
অথচ বিচারপতি সমাদ্দারের পরামর্শ মেনে এ দিন সকালেই আলোচনার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। বিমলবাবু ও সমরাদিত্যবাবুর মধ্যে টেলিফোনে কথা হয়। দু’জনে বর্তমানে দুই যুযুধান শিবিরের সেনাপতি হলেও হাইকোর্টে একই বার লাইব্রেরিতে বসেন। দু’জনের মধ্যে সখ্যও রয়েছে।
শুক্রবার সকালে ফোনালাপের আগে অবশ্য দু’জনেই নিজেদের মক্কেলের সঙ্গে কথা বলেন। বিমলবাবু সমরাদিত্যবাবুকে জানান, শুক্রবার সন্ধ্যাতেই তিনি বসতে চান। সমরাদিত্যবাবু জানান, তাঁর আপত্তি নেই। তখনই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় এই বৈঠকের সময় স্থির হয়।
কোথায় বৈঠক হবে, এর পরে তা নিয়ে আলোচনা হয়। বিমলবাবু জানান, তিনি সমরাদিত্যবাবুর বাড়িতে যাবেন। তাতে রাজি হননি সমরাদিত্যবাবু। তাঁর যুক্তি, বিমলবাবু বর্তমানে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল। ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সমমর্যাদা তাঁর। বরং সমরাদিত্যবাবুই তাঁর বাড়িতে যাবেন। সেই মতো রাতে বৈঠক হল ঠিকই, কিন্তু কোনও রফা সূত্র বেরোল না। বৈঠকের পরে অ্যাডভোকেট জেনারেল ফলাফল জানিয়ে দেন পঞ্চায়েতমন্ত্রীকে। সমরাদিত্যবাবুও ফোন করেন রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডেকে।
|