|
|
|
|
এড়াচ্ছেন শোভনদেবরা |
ফ্রন্টের ছাড়া স্লোগান ঘরে তুলে সম্মেলনে তৃণমূল |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা
সঞ্জয় সিংহ • কলকাতা |
স্লোগান দিয়ে আগে চেনা যেত। এখন চেনার উপায় নেই! প্রাক্তনের মুখের বুলি বর্তমান যে কেড়ে নিচ্ছে!
তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সম্মেলন হচ্ছে দুর্গাপুরে। তার স্লোগান? ‘কৃষি আমাদের গৌরব, শিল্প আমাদের শপথ’! রবিবারের ওই সম্মেলন উপলক্ষে যে হোর্ডিং-ব্যানার ছেয়ে গিয়েছে সর্বত্র, তাতেই জ্বলজ্বল করছে ওই স্লোগান। রাজ্য রাজনীতির বিন্দুমাত্র খবর যাঁরা রাখেন, এ হেন স্লোগানে চোখ পড়লেই চমকে উঠছেন! এ তো বামফ্রন্টের কেতাব থেকে ধার করা! ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’ স্লোগান ছিল সপ্তম বামফ্রন্ট সরকারের। এবং সেটাই শেষ বাম সরকার!
শাসক দলেরই এক বর্ষীয়ান নেতা রসিকতা করে বলছেন, “বামফ্রন্ট যে স্লোগানটা নিয়ে ডুবে গেল, আমরা এ বার সেটাকে ভাসিয়ে তুললাম!” বস্তুত, বামপন্থীদের রকম-সকম ধার করার অভিযোগ অতীতে বহু বার উঠেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। সিপিএমের ছেড়ে যাওয়া জুতোয় তাঁর দল পা গলিয়েছে এই অভিযোগও উঠছে অহরহ। কিন্তু প্রতিপক্ষের স্লোগান অদল-বদল করে নিজেদের জন্য নেওয়া, তৃণমূলের জমানাতেও বেনজির! দলের নেতাদের একাংশও একান্তে স্বীকার করছেন, এই রকম প্রকট অনুসরণ না-করলেও হত!
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী বলছেন, “নকল যারা করে, তারা কমার জায়গায় দাঁড়ি দেয়! এটাও সে রকম!” শ্যামলবাবুর মতে, তৃণমূল নেত্রী ও তাঁর দল বামপন্থী মুখ ব্যবহার করতে বরাবরই সক্রিয়। বামপন্থী স্লোগান, বামপন্থী গণ সঙ্গীত এ সব তৃণমূলের মঞ্চ থেকে অনেক বার শোনা গিয়েছে। কিন্তু সে সবই বামপন্থী আন্দোলনের অনুষঙ্গ। নির্দিষ্ট করে বামফ্রন্টের স্লোগান নয়। কৃষি ও শিল্প নিয়ে আইএনটিটিইউসি-র স্লোগান সব রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে! সিটুর রাজ্য সভাপতির আরও মন্তব্য, “শুধু মুখে নকল করলে তো হয় না, কাজটা দেখতে হয়! এঁদের তো কথা-কাজে মিল নেই! আমাদের জমানায় ফসলের দাম না-পেয়ে কৃষকদের আত্মহত্যার ঘটা ছিল না। শিল্পের অভাবে হাহাকার ছিল না। এখন তো কলাশিল্পকে মুখ্যমন্ত্রী শিল্প বলে চালাচ্ছেন আর মানুষকে কলা দেখাচ্ছেন!”
বামফ্রন্টের খোলসে কেন নিজেদের পুরতে হল, তা নিয়ে সম্মেলনের প্রাক্-মুহূর্তেও সুনির্দিষ্ট কোনও ব্যাখ্যা মিলছে না তৃণমূলের শ্রমিক নেতৃত্বের তরফে। আইএনটিটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “বলতে পারব না। আমার সঙ্গে আলোচনা করে কেউ কিছু করেনি। যাঁরা করেছেন, সেই রাজ্য নেতৃত্বকে জিজ্ঞাসা করুন!” প্রশ্ন শুনে সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেন বলছেন, “আলাদা করে আনন্দবাজারকে কিছু বলব না। যা দেখেছেন, যা জেনেছেন, যা বুঝেছেন, লিখুন!”
আসন্ন সম্মেলনে শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্বের বিড়ম্বিত হওয়ার আরও কারণ থাকছে। সম্মেলন উপলক্ষে আজ, শনিবার সমাবেশ হওয়ার কথা সিঙ্গুরে। সেখানে বা দুর্গাপুরের সম্মেলনে আইএনটিটিইউসি-র প্রবীণ নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর অনুগামীদের দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ! প্রশ্ন করলে শোভনদেব জবাব দিচ্ছেন, “দলের কাজে ব্যস্ত থাকব।” কিন্তু তাঁর অনুগামী শিবিরে শোনা যাচ্ছে অন্য কথা। তাঁদের ক্ষোভ, সম্মেলন উপলক্ষে তোলাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছেন সংগঠনেরই একাংশ। এমন সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে ‘তোলাবাজিতে সিলমোহর’ লাগাতে চায় না শ্রমিক সংগঠনের অন্য অংশ! এমনকী, শ্রমিক সংগঠনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শাসক দলের আর এক বর্ষীয়ান নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়কেও সম্মেলনে দেখা যাবে কি না, ঠিক নেই। সরকারি সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত জটিলতায় মন্ত্রীকে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।
দলের অন্দরেই আরও প্রশ্ন, রাজ্য সম্মেলন করতে গেলে যে প্রক্রিয়া মেনে চলা হয়, তার অনেক কিছুই এ বার হয়নি। বা হলেও সংগঠনের বহু নেতা-কর্মীই অন্ধকারে! কী ভাবে প্রতিনিধি নির্বাচন হল, ঠিক কী কী বিষয়ে আলোচনা হবে, এখনকার কমিটিতেই বা কারা কারা আছেন কোনও ব্যাপারেই স্পষ্ট কোনও ছবি তাঁদের কাছে নেই বলে জানাচ্ছেন সংগঠনের কিছু নেতা। জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক প্রদীপবাবুও বলছেন, তাঁর কিছু জানা নেই!
এত সব বিতর্কের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে তৃণমূল নেত্রীকে নিয়ে। সিঙ্গুরের সমাবেশে আজ থাকার কথা তাঁর। কিন্তু আজই আবার তাঁর নেতাজি ইন্ডোরে গান মেলাও উদ্বোধন করার কথা। এই অবস্থায় জমি-আন্দোলনের নেত্রীকে কি আদৌ দেখতে পাবে সিঙ্গুর? আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য নেতৃত্বের কৌশলী ব্যাখ্যা, তাঁরা তো কোথাও নেত্রীকে প্রধান বক্তা বলে প্রচার করেননি! ‘গৌরবে’র সিঙ্গুর থেকে কী ‘শপথ’ দুর্গাপুরে পৌঁছয় নজর রাখছে তৃণমূলেরই কত চোখ! |
|
|
|
|
|