ঋণ মকুবে দুর্নীতি, সমবায় ব্যাঙ্কের
বিশদ রিপোর্ট চাইল নাবার্ড
ন্তত ১৪ শতাংশ ক্ষেত্রে ভুয়ো চাষিদের নামে ঋণ মকুব করে সে বাবদ টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে। ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে যোগ্য চাষিরা ঋণ মকুবের সুযোগ পাননি। অনেক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে গিয়ে আবার ঋণ মকুব সংক্রান্ত কাগজপত্র বিকৃত করা হয়েছে। ২০০৮ সালে কেন্দ্রীয় সরকার কৃষি ঋণ মকুবের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা বাস্তবায়িত করতে গিয়ে এমনই বেনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে রিপোর্টে জানিয়েছে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)।
ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে সারা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও যে সব চাষির কৃষি ঋণ মকুব করা হয়েছিল, তাঁদের প্রত্যেকের সম্পর্কে বিশদ তথ্য নতুন করে যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে অর্থমন্ত্রক। রাজ্যে এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নাবার্ড (ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ফর এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট)-কে।
কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ১৯৯৭ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০০৭ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত যে সব চাষি বিভিন্ন প্রাথমিক সমবায় সমিতি এবং গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে কৃষি ঋণ নিয়েছিলেন, তাঁদের ঋণ মকুব করে দেওয়া হবে। যে সব চাষি ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ নিয়েছিলেন, তাঁদেরই ঋণ মকুবের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক এবং গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলি ‘যোগ্য’ চাষিদের তালিকা এবং মকুবযোগ্য ঋণের পরিমাণ নাবার্ডকে পাঠায়। অর্থ মন্ত্রকের কাছ থেকে টাকা বুঝে পেয়ে চাষিদের ঋণ মকুব করে ব্যাঙ্কগুলি। সারা দেশে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লক্ষ চাষিকে মকুবের আওতায় আনতে গিয়ে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে কেন্দ্র। এ রাজ্যে অন্তত ৭০০ কোটি টাকার ঋণ মকুব করা হয় বলে নাবার্ড সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু ঋণ মকুবের সুবিধা পাওয়া ৯০ হাজার অ্যাকাউন্ট নিয়ে নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়ে অন্তত ১০ হাজার অ্যাকাউন্টে দুর্নীতি ও বেনিয়মের সন্ধান পায় সিএজি। ধরা পড়ে, যে সব চাষির ঋণ মকুবের আওতায় আসার কথা নয়, তাঁদেরও ঋণ মকুবের নাম করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়েছে। তার মধ্যে এ রাজ্যের বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর এবং নদিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের ঋণগ্রহীতার অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
গত ৫ মার্চ সিএজি সংসদে রিপোর্ট পেশ করার পরে এ রাজ্যে দুর্নীতি ও বেনিয়মের সঙ্গে যুক্ত কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কগুলিকে ৩৭ লক্ষ টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয় অর্থমন্ত্রক। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, যে সব চাষির ঋণ মকুব করা হয়েছিল, তাঁদের সকলের অ্যাকাউন্ট ফের পরীক্ষা করা হবে।
নাবার্ড-এর পশ্চিমবঙ্গের চিফ জেনারেল ম্যানেজার এস পদ্মনাভন বলেন, “আমরা বিভিন্ন জেলার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক এবং গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলিকে চাষিদের নামের তালিকা জমা দিতে বলেছি। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক এবং গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলিকে নির্দেশ দিয়েছি, যোগ্য নয় এমন চাষির ঋণ মকুব করে সেই বাবদ টাকা নেওয়া হয়ে থাকলে, তা যেন তারা ফেরত দেয় এবং কাগজপত্র বিকৃত করা হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে যেন এফআইআর করা হয়।”
আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এ কাজ শেষ করতে হবে বলে নাবার্ড সূত্রের খবর। পদ্মনাভন বলেন, “কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক এবং গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলির পাঠানো তালিকা এবং বেনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ সংক্রান্ত রিপোর্ট পেলে তা নিজস্ব বিশেষজ্ঞ দিয়ে ফের পরীক্ষা করব।”
হাওড়া জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক ঋণ মকুব করা বাবদ অর্থমন্ত্রক থেকে পেয়েছিল প্রায় ১৬ কোটি টাকা। এই ব্যাঙ্কের এক কর্তা বলেন, “আমাদের অধীনে থাকা প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতিগুলি চাষিদের ঋণ দিয়েছিল। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তালিকার ভিত্তিতে আমরা নাবার্ড-এর কাছে টাকা চাই। সেই টাকা পাওয়ার পরে তা সমবায় সমিতিগুলিকে মিটিয়ে দেওয়া হয়। নাবার্ড-এর কাছ থেকে নির্দেশ পাওয়ার পরে আমরা প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতিগুলি যে নামের তালিকা পাঠিয়েছিল, তা ফের খতিয়ে দেখতে শুরু করেছি। এ জন্য বিশেষ দলও করা হয়েছে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.