এ ভাবে আর কত দিন চলবে! সিপিএমের ভুলের মাসুল তাঁদের কেন দিতে হবে? আলিমুদ্দিনে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসুদের মুখোমুখি বসে প্রশ্ন তুললেন অশোক ঘোষেরা।
বাম জমানার পতনের পরে বৃহস্পতিবারই প্রথম আলিমুদ্দিনে গিয়েছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রবীণ রাজ্য সম্পাদক অশোকবাবু। সঙ্গে দলের চার নেতা। উপলক্ষ, সিপিএম ও বাম শরিক ফব-র দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সেখানেই তাঁদের ক্ষোভের কথা স্পষ্ট জানিয়ে এসেছেন ফব নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, সিপিএমের পরেই রাজ্যে তৃণমূলের হাতে সব চেয়ে বেশি আক্রান্ত তাঁদের কার্যালয় ও কর্মীরা। অথচ দিল্লিতে যোজনা কমিশনের সামনে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে শারীরিক হেনস্থার যে ঘটনা নিয়ে এই প্রতিক্রিয়ার সূত্রপাত, তার সঙ্গে ফব-র দূরতম সম্পর্কও ছিল না!
বস্তুত, বুধবার বামফ্রন্ট বৈঠকেও শরিকদের একই রকম ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমানবাবুকে। ফ্রন্টের মতোই এ দিন দ্বিপাক্ষিক আলোচনাতেও সিপিএম নেতৃত্ব যথেষ্ট রক্ষণাত্মক ছিলেন বলে আলিমুদ্দিন সূত্রের খবর। যে ভাবে সিপিএম বা তাদের বিভিন্ন শাখা সংগঠন নিজেদের মতো কর্মসূচি নিয়ে শেষ মুহূর্তে শরিকদের ডাকছে এবং তার পরে আবার কার্যক্ষেত্রে তাদের উপেক্ষা করছে, এতে বাম ঐক্য রক্ষা করা মুশকিল বলেও এ দিনের বৈঠকে হুঁশিয়ারি দেন ফব নেতৃত্ব। বিমানবাবু অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, সাম্প্রতিক ভুল থেকে তাঁরা শিক্ষা নেবেন। তাড়াহুড়ো করে কোনও কর্মসূচি নেওয়া হবে না। বৈঠকের পরে দু’দলের নেতৃত্বই অবশ্য কোনও ব্যাপারে মুখ খোলেননি।
ফব-র শক্ত ঘাঁটি কোচবিহারে একের পর এক কার্যালয় আক্রান্ত হয়েছে তণমূলের হাতে। কোচবিহারের ফ ব সাংসদকে এক সন্ধ্যায় পুলিশের কাছে সাময়িক আশ্রয় নিতে হয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বর্ধমান, বাঁকুড়াতেও সিপিএমের পাশাপাশি ফ ব আক্রান্ত। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে ফব নেতৃত্বের প্রশ্ন, দিল্লির ঘটনার দায় কার, তা নিয়ে সিপিএমের মধ্যেই দ্বিমত রয়েছে। কিন্তু আলিমুদ্দিন বা দিল্লি শাখা যারই দায় হোক, সেটা তো কোনও ভাবে ফব-র নয়। অথচ সিপিএমের ভুলের মাসুল দিতে হচ্ছে তাদেরও! অনেক কষ্টে যে নেতা-কর্মীদের মাঠে নামানো গিয়েছিল, এত আক্রমণের জেরে তাঁরা আবার ভয় পেয়ে গুটিয়ে যাবেন। এ ভাবে কি ফ্রন্ট চলতে পারে? তাঁরা যে আন্তরিক ভাবেই দিল্লি-কাণ্ড চাননি, ফব নেতাদের তা-ই বোঝানোর চেষ্টা করেন বুদ্ধবাবু-বিমানবাবুরা।
রাজ্য জুড়ে যে হিংসার দাপট চলছে, তার প্রতিবাদে সরব হতে শুরু করেছে ফ্রন্টের বাইরের বাম দলগুলিও। দিল্লির ঘটনা এবং তার প্রতিবাদে সিপিএম-সহ বাম শরিকদের কার্যালয়ে তৃণমূলের হামলার কড়া নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছেন পিডিএসের রাজ্য সম্পাদক সমীর পূততুণ্ড। হিংসার রাজনীতির প্রতিবাদে ২২ এপ্রিল কলকাতায় মিছিলের শেষে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশের ডাক দিয়েছে পিডিএস। সিপিএমের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের কার্যালয়ও আক্রান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের। দলের নেতা কার্তিক পালের অভিযোগ, “তৃণমূল এবং রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে এখন বদলা চালাচ্ছে! রাজ্যে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নৈরাজ্য চলছে!”
দিল্লি-কাণ্ডের প্রতিবাদে জেলায় জেলায় যে ভাবে তৃণমূলের তাণ্ডব চলছে, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে, তার সমালোচনায় সিপিএম-ফব নেতৃত্ব অবশ্য একমত। প্রতিবাদে এক সঙ্গে পথে নামার ব্যাপারেও নীতিগত ভাবে তাঁরা সহমত। তবে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে হঠকারিতা বা তাড়াহুড়ো উচিত হবে না বলে ফব পরামর্শ দিয়েছে বড় শরিককে। ফব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বৈঠকে বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার একের পর এক ক্যাচ তুলবে। বামেদের দিক থেকে বেশি কারিকুরির কোনও দরকার নেই! সোজা বল করে গেলেই হল। কায়দা করতে গেলে ক্যাচ মিস হবে, জনমানসেও খলনায়ক হতে হবে! তৃণমূলের হামলার প্রতিবাদে কলকাতায় একটি প্রতিবাদ মিছিল থেকে দু’দিন আগে সরে দাঁড়ায় আরএসপি এবং সিপিআই। ভবিষ্যতে এই ধরনের তিক্ততা এড়ানোর জন্য ফব-কে অনুরোধ করেছে সিপিএম। বাম ঐক্যে মনোযোগ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন অশোকবাবুও। |