কর্মী কম, নিরাপত্তার ফাঁক গলে মারামারি থেকে অপমৃত্যু
রান্নাঘর আর কুষ্ঠ ওয়ার্ডের দায়িত্বে মাত্র একজন ওয়ার্ডার। নিরাপত্তার ফাঁক গলে কিছু হলে দায় তাঁরই। আবার এই দু’টি পাশাপাশিও নয়। রান্নাঘর আর ওই ওয়ার্ডের দূরত্ব খুব কম হলেও ৫০ মিটার। মধ্যে রয়েছে মহিলা জেল!
মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে নিরাপত্তা ব্যবস্থার হাল চুম্বকে এমনটাই। সম্প্রতি সংশোধনাগার চত্বরে এক বিচারাধীন বন্দি আত্মহত্যা করেন। একটি গাছ থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। মৃতের পরিবার দাবি করে, ওই বন্দি আত্মহত্যা করতে পারেন না। পরিবারের দাবি মতো চলছে তদন্ত। এক ওয়ার্ডার ও এক ইনচার্জকে শো-কজও করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও হতে পারে। এই ঘটনায় ফের সামনে এসেছে মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের নিরাপত্তার বিষয়টি। এক হাজারেরও বেশি বন্দির মধ্যে রয়েছেন মাওবাদী সন্দেহে ধৃতরা, কুখ্যাত সমাজবিরোধী থেকে বাংলাদেশিরাও। এর জেরে জেল চত্বরে যে নাশকতা হতে পারে, এক সময় এমন ইঙ্গিতও প্রশাসনকে দিয়েছিলেন গোয়েন্দারা। পরিস্থিতি দেখে বছরখানেক আগে সংশোধনাগারের নিরাপত্তা ঢেলে সাজানোর তোড়জোড় শুরু হয়। তবে কাজ এগিয়েছে নামমাত্রই। অভিযোগ, কর্মী-সংখ্যা এতটাই কম যে, মাঝেমধ্যে সমস্যা হয়। এই অবস্থায় শূন্যপদে দ্রুত কর্মী নিয়োগের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে জেলরক্ষী সংগঠনগুলো।
তৃণমূল প্রভাবিত ‘বঙ্গীয় কারারক্ষী সমিতি’-র নেতা কার্তিক সাহু বলেন, “বহু পদ শূন্য। ফলে, প্রবল সমস্যা হচ্ছে। কর্মী নিয়োগের দাবি আমরা মন্ত্রীকেও জানিয়েছি।” তাঁর কথায়, “একজন ওয়ার্ডারের পক্ষে একাধিক জায়গার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সম্ভব নয়।” প্রায় একই বক্তব্য সিপিএম প্রভাবিত ‘কারারক্ষী সমিতি, পশ্চিমবঙ্গ’র নেতা অতুল সাহার। তিনি বলেন, “দ্রুত কর্মী নিয়োগ না হলে সমস্যা হবেই।” তাঁর প্রশ্ন, “যে সংশোধনাগারের নিরাপত্তা নিয়ে এত তোড়জোড়, সেখানে কর্মী এত কম থাকবে কেন?”
সমস্যার কথা মানছেন কারা দফতরের আধিকারিকেরাও। এআইজি (কারা) কল্যাণ প্রামাণিকের বক্তব্য, “সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানে। মেদিনীপুরের কর্মীর সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম রয়েছে। অবশ্য সর্বত্রই এক পরিস্থিতি।” তাঁর দাবি, “প্রতি মাসে দফতরে যে রিপোর্ট পাঠানো হয়, সেখানেও এই সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়।” কারা দফতরের আধিকারিকদের একাংশ এবং তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠন অবশ্য এই পরিস্থিতির জন্য দুষছে বাম জমানাকে। অভিযোগ, বামফ্রন্ট সরকারই শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ করেনি।
মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের অবস্থা ঠিক কেমন?
জেল সূত্রে খবর, মূল নিরাপত্তার দায়িত্ব যাঁর, সেই সিকিউরিটি অফিসারের পদই শূন্য। অভিযোগ, নিরাপত্তার গাফিলতিতেই বন্দিদের মধ্যে মারামারি থেকে শুরু করে, মাদক দ্রব্য উদ্ধার, মোবাইল উদ্ধার, বন্দির অপমৃত্যু-সহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ফের যে কোনও সময় অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে মানছে কারারক্ষীদের একাংশ। এক কারারক্ষীর কথায়, “ওয়ার্ডারের সংখ্যাই যেখানে প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক। সেখানে সর্বত্র সমান নজর রাখা মুশকিল।”
এক নজরে মেদিনীপুর জেল
সেল- ৫২টি
ওয়ার্ড- ১৪টি
বন্দি- ১ হাজার ১৯০ জন
(সাজাপ্রাপ্ত- ৬১৭, বিচারাধীন- ৫৪৪, বাংলাদেশি- ২৯)
পদ সংখ্যা/শূন্য পদ
সিকিউরিটি অফিসার ১/১
ডেপুটি জেলার ৫/২
সাব জেলার ৩/২
হেড ওয়ার্ডার ১৫/১২
ওয়ার্ডার ২১৯/১১৩

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.