সিপিএমের ২ নম্বর লোকাল কমিটির অফিসে আগুন লাগানোর চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল তৃণমূলের স্থানীয় নেতা অভিজিৎ ধীবর। তাঁকে জেরা করে ওই অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টার অভিযোগে আরও চার তৃণমূলকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ইউনিয়নের দফতরে ভাঙচুরের ঘটনাতেও এরা জড়িত বলে জানিয়েছেন বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা। ধৃতদের নাম লাকি ঘোষ, বাপন সেখ, সেখ কুরবান ও রাজু হরিজন। বৃহস্পতিবার বর্ধমানের সিজেএম আদালত অভিজিতের দু’দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের উপর দিল্লিতে হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার থেকেই তৃণমূলের নেতা কর্মীরা মিছিল শুরু করেন। জেলা জুড়ে সিপিএমের বিভিন্ন ধরনের অফিস ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। বর্ধমান শহরের পারকারস রোডে সিপিএমের জেলা কমিটির দফতরের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এতে তৃণমূলের এক জেলা নেতা পুলিশকে ভর্ৎসনা করেন বলেও অভিযোগ। বর্ধমান থানার আইসি দিলীপকুমার গঙ্গোপাধ্যায়কে ওই নেতা বলেন, “কোনও ঘটনা ঘটার আগেই পুলিশ সিপিএমকে বাঁচাতে পাহারা দিতে শুরু করেছে। মনে হচ্ছে, তৃণমূলের লোকেরা যেন বর্বর। তারা দলীয় কার্যালয় আক্রমণ করবে।” |
বুধবার সকালেই বর্ধমানের বাহির সর্বমঙ্গলা পাড়ার সিপিএমের ২ নম্বর লোকাল কমিটির অফিসে ঢুকে ভাঙচুর করেন। তার পর সমস্ত মালপত্র নিয়ে চলে যায় তারা। দলের বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল বুধবারই অভিযোগ করেন। রাতে ওই লোকাল কমিটি অফিসে পরপর দু’বার আগুন নাগানোর চেষ্টা করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে খবর। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ কিছু লোক জ্বলন্ত টায়ার ফেলে ওই অফিসটিতে আগুন লাগানোর চেষ্টা করে। তাঁরা তড়িঘড়ি থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে আগুন নিভিয়ে ফেলে। পরে রাত ১২টা নাগাদ ফের ওই অফিসে আগুন লাগাতে চেষ্টা করেন দুষ্কৃতীরা। পুলিশ তাড়া করে অভিজিতবাবুকে ধরে ফেলে। পুলিশ সুপার জানান, “দুষ্কৃতীরা ফের ওই অফিসে আগুন লাগাতে আসবে ধরেই ওই অফিসের কাছে গোপনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।”
ধৃত অভিজিৎবাবু বিবেকানন্দ মহাবিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ প্রভাবিত ছাত্রসংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক। আগেও বেশ কয়েক বার তাঁর বিরুদ্ধে সংগঠনের অন্য একটি গোষ্ঠীর লোকজনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল। তাঁকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকবার সংগঠনের ভিতর থেকেই দাবি উঠেছিল বলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সূত্রের খবর। পুলিশ সুপার জানান, বুধবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজবাটি চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ে বামপন্থী কর্মচারী ইউনিয়নের দফতর ভাঙচুরের ঘটনাতেও অভিজিৎবাবু ও তাঁর দলবল জড়িত। অভিজিতবাবুকে জেরা করে ওই দুটি ভাঙ্গচুর ও দু-দফায় সিপিএমের ২ নম্বর লোকাল কমিটি অফিসে অগ্নিসংযোগের চেষ্টায় জড়িত আরও মোট চারজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাঁদের এ দিন আদালতে হাজির করানো হয়েছে।
জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা তথা সংগঠনের জেলা সভাপতি অশোক রুদ্রের বক্তব্য, “আমরা ঘটনাটি খতিয়ে দেখব। হতে পারে, এটা এসএফআইয়ের ষড়যন্ত্র। যদি দেখা যায়, সত্যিই ওই পাঁচজন দোষী, তা’হলে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
|