বাড়ির ভিতরে একটি টিউবলাইট ও একটি পাখা। বাইরে জ্বলে একটি বাল্ব। ছাপোষা পরিবারে বিদ্যুৎ খরচ হয় এইটুকুতেই। আর তার জন্য তিন মাসের বিল এসেছে ৮৭ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা। বিদ্যুৎ বণ্টণ সংস্থার পাঠানো এই বিল হাতে পেয়ে মাথায় হাত কালনার মেদগাছি গ্রামের হালদার পরিবারের।
কালনা ২ ব্লকে পূর্ব সাতগাছিয়া পঞ্চায়েতের ওই গ্রামে টালির চালের একচিলতে বাড়ি প্রদীপ হালদারের। কলকাতায় একটি বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষী পদে কর্মরত থাকায় প্রদীপবাবু বেশির ভাগ সময়েই বাড়িতে থাকেন না। থাকেন তাঁর স্ত্রী ও বৃদ্ধা দিদিমা। প্রদীপবাবু জানান, বাড়িতে বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় যৎসামান্য। ঘরের ভিতরে যে টিউবলাইট রয়েছে সেটি দিনের বেলায় জ্বললেও রাতে অল্প ভোল্টেজের জন্য জ্বলে না। বাড়ির বাইরের আলোটি রাত ১০টার পরে নিভিয়ে ফেলা হয়। গ্রীষ্মে সারা রাত পাখা চলে। প্রদীপবাবুর দাবি, যে হারে বিদ্যুৎ খরচ হয় তাতে মাসে একশো টাকার আশপাশে বিল হওয়া উচিত। সাধারণত তা-ই এসে থাকে বলে জানান তিনি। |
কিন্তু সমস্যার শুরু গত বছর পুজোর আগে থেকে। সে বার ২০১২-এর মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তিন মাসের জন্য বিদ্যুতের বিল আসে তিন হাজার ৩৬৮ টাকা। প্রদীপবাবু জানান, বিল দেখে চমকে উঠে তাঁরা বিদ্যুৎ সংস্থার অফিসে যান। সেখান থেকে জানানো হয়, ভুলবশত বেশি বিল চলে গিয়েছে। তবে জানানো হয়, যে বিল গিয়েছে তা এখনই জমা দিতে হবে। পরবর্তীতে যে বিল হবে তা ধীরে ধীরে এই জমা টাকা থেকে কাটা হবে। কিন্তু তাঁরা সেই টাকা এক সঙ্গে জোগাড় করতে না পারায় সংযোগ ছিন্ন করে দিয়ে যায় বিদ্যুৎ সংস্থা।
প্রদীপবাবু বৃহস্পতিবার জানান, দিন পনেরো আগে তাঁদের এক আত্মীয় বকেয়া বিল মিটিয়ে দেন। তার পরেই ফের সংযোগ দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কয়েক দিন আগে ফের বাড়িতে একটি বিল এসে পৌঁছয়। তাতে দেখা যায়, ২০১২-এর জুন, জুলাই ও অগস্ট, এই তিন মাসের জন্য তাঁদের ৮৭ লক্ষ ৭৬ হাজার ৮১৯ টাকা ৫৬ পয়সা বিল বকেয়া রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। প্রদীপবাবু বলেন, “এই বিল দেখে আমাদের মাথায় কিছু ঢুকছে না। কেন এই রকম ভুতুড়ে বিল এল জানি না। শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা নিয়েও শঙ্কায় রয়েছি।” প্রদীপবাবুর আত্মীয় সীমা প্রামাণিকের বক্তব্য, “কেন বারবার এই পরিবারের সঙ্গে এমন হচ্ছে, জানি না। এ বার যে বিল এসেছে তা তো গোটা গ্রামের সব পরিবারের সারা বছরের বিদ্যুতের বিলের থেকেও বেশি।” প্রদীপবাবু জানান, তিনি শীঘ্রই বিদ্যুৎ সংস্থার অফিসে যোগাযোগ করবেন। |
এই ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ‘অল বেঙ্গল ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর কালনা ইউনিট সম্পাদক সানওয়াজউদ্দিন মণ্ডল। তাঁর বক্তব্য, “গ্রাহকদের ক্ষেত্রে এ রকম ঘটনা শুধু হয়রান করাই নয়, মানসিক যন্ত্রণারও। বিষয়টি নিয়ে সংগঠনের তরফে বিদ্যুৎ সংস্থার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলা হবে।” রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টণ সংস্থার কালনা শাখার ডিভিশনার ইঞ্জিনিয়ার চঞ্চল বিশ্বাস বলেন, “এজেন্সি মারফত এই বিল তৈরি করানো হয়। কোনও কারণে ভুল ছাপা হয়ে থাকতে পারে। ওই গ্রাহক আমাদের দফতরে এলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
|