ভাঙচুর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে
শান্তির বার্তাই সার, চলছে হামলা
রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে নিগ্রহের প্রতিবাদে বুধবার সারা দিন জেলা জুড়ে ধিক্কার মিছিল, সভা ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করল তৃণমূল। মিছিল, বিক্ষোভের জেরে সপ্তাহের মাঝে কাজের দিনে রাস্তায় বেরিয়ে দুর্ভোগে পড়েন মানুষজন। তবে মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার সারা দিন নানা জায়গায় সিপিএমের অফিসে হামলার অভিযোগ উঠেছে। আগের সন্ধ্যায় শহর জুড়ে অশান্তির পরে এ দিন দুর্গাপুরে সিপিএম অফিসের সামনে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছিল।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজবাটি চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ইউনিয়ন অফিসে ভাঙচুর হয় এ দিন সকালে। অভিযোগের তির তৃণমূল সমর্থিত একটি কর্মী ইউনিয়ের দিকে। ওই গোষ্ঠীর নেতা সীতারাম মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “আমরা এ কাজে জড়িত নই। বরং ভাঙচুরের নিন্দাই করছি।”
ঘটনার নিন্দা করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা শহরের বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ও। রাজবাটির সামনে সভায় তিনি দলীয় কর্মীদের হুঁশিয়ার করে বলেন, “কেউ সিপিএম অফিস ভাঙচুর করবেন না। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক আগেই বলেছেন, বদলা নয় বদল চাই। আমাদের প্রতিশোধ নেওয়ার কিছু নেই। প্ররোচনায় পা দেবেন না।”
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী
ইউনিয়ন অফিসে ভাঙচুর।
কালনা কলেজের সামনে
টিএমসিপি-র বিক্ষোভ।
এ দিন সন্ধ্যায় মঙ্গলকোটের নিগনে তাদের দক্ষিণ-পূর্ব লোকাল কমিটি হামলা হয় বলে অভিযোগ সিপিএমের। ধিক্কার মিছিলে বেরোনো জনা কুড়ি তৃণমূল কর্মী ওই অফিসে ঢুকে প্রথমে ভাঙচুর, তার পরে আগুন লাগিয়ে দেয় বলে দাবি সিপিএম নেতৃত্বের। পুলিশ অবশ্য রাত পর্যন্ত এই ঘটনার কথা স্বীকার করেনি।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডলের অভিযোগ, “উচালনে আমাদের এক প্রাক্তন নেতা ৭৫ বছরের কমল সরকারকে বাড়ির সদর দরজায় ফেলে পেটানো হয়েছে। তিনি চোখে দেখতে পান না, হাঁটতেও পারেন না। জানি না এ সব করে কার কী লাভ হচ্ছে!” তিনি আরও অভিযোগ করেন, জেলা জুড়ে তাঁদের ২৫-৩০ জন কর্মী তৃণমূলের হামলায় আহত হয়েছেন। ভাঙচুর হয়েছে ভাতারের বলগনাচটির অফিস।
মন্তেশ্বরের রায়গ্রামেও সিপিএম অফিস ভাঙচুর হয়েছে। শুধু বর্ধমান শহরেরই আট-দশটি দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর হয়েছে। সুভাষপল্লিতে সিপিএমের ২ নম্বর লোকাল কমিটি অফিসেও হামলা হয়।
বর্ধমান শহরের টাউন হল থেকে
রাজবাটি পর্যন্ত মিছিলে মুখে কালো কাপড়
বেঁধে হাঁটলেন মন্ত্রী রবিঞ্জন চট্টোপাধ্যায়।
জামুড়িয়ার বগরায়
সিপিএমের পার্টি
অফিসে আগুন।—নিজস্ব চিত্র।
রাজ্জাক মণ্ডলের দাবি, “সকালে তৃণমূলের লোকেরা ওই অফিসে গিয়ে শুধু ভাঙচুরই করেনি, সমস্ত মালপত্র লুঠও করেছে। জেলার নানা জায়গায় আহত কর্মী-সমর্থকদের হাসপাতালে আনাও সম্ভব হয়নি। তাতেও বাধা দিয়েছে ওরা।”
মঙ্গলবার রাতে পানাগড়ে দু’টি সিপিএম এবং দু’টি সিটু অফিস ভাঙচুর হয়। তবে ওই রাত পর্যন্ত দুর্গাপুরে পরপর সিপিএম এবং সিটু অফিসে হামলা হলেও বুধবার নতুন করে আর কোথাও তা হয়নি। এ দিন তৃণমূলের তরফে ধিক্কার মিছিল করা হয় শহরজুড়ে। শহরের সিটিসেন্টারের সিপিএম জোনাল অফিসের সামনে পুলিশি প্রহরা ছিল। ছিল জলকামানও। তবে এ দিন সকালে মেনগেট এলাকায় একটি তৃণমূল অফিসে আগুন লাগে। কাঁকসার আকন্দারায় তৃণমূলের পোস্টার ছেঁড়া হয়। অভিযোগ, সিপিএম এই ঘটনায় জড়িত। সিপিএম যদিও তা মানেনি।
সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার গভীর রাতে কাঁকসার অফিসে হামলা হয়। প্রথমে ভাঙচুর হয় ডাকবাংলো মোড়ের অফিসটিতে। তার পরে পানাগড় বাজারে। সেখান থেকে হামলাকারীরা গ্যাসের সিলিন্ডার নিয়ে পালায় বলেও অভিযোগ। ভাঙচুর করা হয় রনডিহা মোড় এবং স্থানীয় একটি কারখানার সিটু অফিসেও।
বার্নপুরে সিপিএমের পার্টি অফিসের
টালির ছাদ ভাঙচুর। ছবি: শৈলেন সরকার
দুর্গাপুর সিটিসেন্টার এলাকায় জলকামান নিয়ে
তৈরি পুলিশ। ছবি: শৈলেন সরকার, বিকাশ মশান
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বীরেশ্বর মণ্ডলের বক্তব্য, “তৃণমূলের উচ্চ নেতারা শান্তির কথা বলছেন। কিন্তু তাদের নিচুতলার কর্মীরা আমাদের নানা অফিসে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।” তাঁর অভিযোগ, তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের প্রকাশ্যে এবং ফোনেও ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রদেশ তৃণমূল সদস্য দেবদাস বক্সী অবশ্য বলেন, “এই ধরনের ঘটনায় দলের সায় নেই। যা বলার উচ্চ নেতৃত্ব বলে দিয়েছেন। এর পরেও যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক।”
সিপিএমের অজয় জোনালের সম্পাদক মনোজ দত্ত জানান, বুধবার সকালে জামুড়িয়ায় তৃণমূলের একটি ধিক্কার মিছিল থেকে তাঁদের ৫ নম্বর লোকাল কমিটির অফিসে হামলা হয়। প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রহৃত হন তাঁদের লোকাল সম্পাদক সুন্দর যোশী-সহ চার জন। এর পরেই ওই কার্যালয়ে আগুন লাগানো হয়। দুপুরে রতিবাটিতে সিপিআই অফিসেও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। রানিগঞ্জের জেকে নগর রেলপাড়ে ডিওয়াইএফের অফিস দখল, পুরাতন এগারার সিপিএম অফিস ভাঙচুরের পরে দুই কর্মীকে মারধর, চুরুলিয়ায় সিপিএমের ১ নম্বর লোকাল কমিটি অফিসের সামনে বোমাবাজিতেও অভিযুক্ত।

আসানসোলে ধিক্কার মিছিল। ছবি: শৈলেন সরকার, বিকাশ মশান ও ওমপ্রকাশ সিংহ।
জেলা জুড়েই এ দিন ধিক্কার মিছিল করে তৃণমূল। সকাল ১০টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা ২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে তৃণমূলের বারাবনি ব্লক কমিটি। সংগঠনের নেতা পাপ্পু উপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কয়েকশো সদস্য-সমর্থক সেনর্যালে মোড়ে অবরোধ করেন। সার বেঁধে পণ্যবাহী লরি রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ে। আসানসোলের বিএনআর তৃণমূল ভবন থেকে কয়েক হাজার মানুষের একটি মিছিল শহর পরিক্রমা করে আসানসোল পুরসভা ভবনের সামনে শেষ হয়। যুব তৃণমূল এর পরে সেখানে একটি সমাবেশ করেন। তার জেরে এ দিন আসানসোলে তীব্র যানজট হয়। কাঠফাটা গরমের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ জি টি রোডে যাত্রীবাহী যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকে।
বার্নপুরের রহমতনগরে মঙ্গলবার গভীর রাতে সিপিএমের একটি অফিসে ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। হিরাপুর থানায় লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে। রূপনারায়ণপুরে সিপিএমের একটি লোকাল কমিটি অফিসেও মঙ্গলবার গভীর রাতে ভাঙচুর হয়েছে বলে অভিযোগ। বারাবনির কাটাপাহাড়ি এলাকায় সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর দুই কর্মী প্রহৃত হয়ে ইসিএলের কাল্লা হাসপাতালে ভর্তি।
সিপিএমের আসানসোল জোনাল সম্পাদক পার্থ মুখোপাধ্যায় জানান, মহকুমার নানা প্রান্তে সিপিএম কর্মীদের মারধর ও হামলার প্রতিবাদে তাঁরা আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.