ভরদুপুরে ব্যাঙ্কে ঢুকে লক্ষাধিক টাকা নিয়ে চম্পট দিল দুষ্কৃতীরা। কুলটির বরাকরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কে বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটে। প্রায় সাতজনের একটি সশস্ত্র দল ব্যাঙ্কে ঢুকে ম্যানেজার, সহকারী ম্যানেজার ও পাঁচ কর্মীকে মারধরও করেছে। মারধর করা হয়েছে এক গ্রাহককেও। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি জানান, পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, ব্যাঙ্কের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও বিপদসঙ্কেত ঘণ্টি এ দিন কাজ করেনি। কোনও সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীও ছিল না। ঘটনার জেরে পুরো এলাকায় পুলিশ নিরাপত্তা বানানো হয়েছে। কয়েকমাস আগে দুর্গাপুরের বেনাচিতিতে একটি অর্থলগ্নি সংস্থাতেও দিনেদুপুরে লক্ষাধিক টাকার ডাকাতি হয়েছিল।
ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার শিবাজি সত্যজিৎ পুলিশকে জানিয়েছেন, এ দিন দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ মুখে কাপড় বাঁধা অবস্থায় জনাকয়েক দুষ্কৃতী হুড়মুড়িয়ে ব্যাঙ্কে ঢুকে পড়ে। ওইসময় ব্যঙ্কে গ্রাহক প্রায় ছিলই না। দুষ্কৃতীদের প্রায় প্রত্যেকের হাতেই রিভলভার ছিল। ম্যানেজার ও সহকারি ম্যানেজার নিজের ঘরে বসে কাজ করছিলেন। আচমকা দুষ্কৃতীদের দু’জন ম্যানেজারের চেম্বারে ঢুকে তাঁদের মারতে শুরু করে। দলের বাকিরা অন্যান্য ব্যাঙ্ক কর্মীদের কিল, চড়, ঘুসি মারতে মারতে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ম্যানেজারের চেম্বারে ঢুকিয়ে দেয়। সহকারী ম্যানেজার মানস নন্দী বলেন, “ওরা আমাকে মারতে মারতে আমার কাছ থেকে ভল্টের চাবি নিয়ে নেয়। আমার ও সহকর্মীদের মোবাইল ফোন, হাতঘড়ি, আংটি, মানিব্যাগও ছিনিয়ে নেয়। এরপরে এক কর্মীকে দিয়ে ভল্ট খুলিয়ে টাকা বের করে। ক্যাশ কাউন্টারে থাকা টাকাও তুলে ব্যাগে পুরে নেয়।” তাঁর দাবি, ১৫ মিনিটের মধ্যেই গোটা কাজ সেরে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়। |
বরাকরের সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের কাছে জনবহুল বাজারের মধ্যে ব্যাঙ্কে এভাবে ডাকাতি হওয়ায় আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারাও। স্থানীয় রুক্মিনীদেবী বলেন, “আমি অচেনা চারজনকে দেখেছি। তিন জন সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের মাঠের উপর দিয়ে ব্যাগ কাঁধে খুব দ্রুত চলে গেল। আরেক জনকে বরাকর স্টেশন রোডের দিকে যেতে দেখেছি।” ঘটনার পরপরই পুলিশ এসে পড়ে। ঘণ্টাখানেক ধরে তদন্তও চলে। পরে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “জানতে পারলাম, দুপুর একটার পর ব্যঙ্কের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও বিপদসঙ্কেত ঘন্টি কোনও কাজ করেনি। সীমান্ত এলাকায় প্রতিদিন প্রচুর টাকার লেনদেন উপযোগী এই ব্যঙ্কে কোনও অস্ত্রধারী নিরাপত্তা রক্ষীও নেই। ডাকাতির ঘটনার তদন্ত ও দুষ্কৃতীদের খোঁজার পাশাপাশি ব্যাঙ্কে অত্যাবশ্যকীয় জিনিসগুলি ছিল না কেন তাও তদন্ত করে দেখছি।” সুব্রতবাবু আরও জানিয়েছেন, ঘটনার পরপরই রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাস ও যানবাহন চলাচলের সমস্ত রাস্তায় কড়া পুলিশি নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমান্তেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
এই ঘটনায় প্রাথমিক ভাবে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা কাজ করলে দুষ্কৃতীদের ছবি সংগ্রহ করে তদন্তের কাজ তরান্বিত হত। দুষ্কৃতীদের খুঁজে বের করতেও বেগ পেতে হত না। একইসঙ্গে বিপদসঙ্কেত ঘন্টিও যদি কাজ করত তাহলে এলাকার বাসিন্দারা সজাগ হতেন ও দুষ্কৃতীদের পাকড়াও করতে সুবিধা হত। পুলিশের দাবি, এই দুটি অত্যবশ্যকীয় জিনিসই এ দিন কাজই করেনি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে ম্যানেজার শিবাজী সত্যজিৎ বলেন, “দুপুর ১২টা পর্যন্ত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা কাজ করেছিল বলে জেনেছি। কিন্তু এরপরে কীভাবে এই ক্যামেরা খারাপ হয়ে গিয়েছে বুঝতে পারছি না। ডাকাতির ঘটনার সময় সুযোগ বুঝে আমাদের এক কর্মী বিপদসঙ্কেত ঘন্টী বাজাতে গিয়ে বুঝতে পারেন সেটিও কাজ করছে না। কিন্তু কেন তা বুঝতে পারছি না।” আর ব্যাঙ্কে কোনও সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী নেই কেন তা জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে উচ্চ কর্তৃপক্ষকে আগেই জানানো হয়েছে। তাঁরা না পাঠানোয় রাখা যায়নি। |