অলৌকিক ঘটনার জনশ্রুতি আর পুরাতনী ঐতিহ্য নিয়ে শুরু হয়েছে পাঁচশো বছরের প্রাচীন মানিকেশ্বর ধামের গাজন উৎসব। বৃহস্পতিবার থেকে হিরাপুরের দামোদর নদের তীরে মানিকেশ্বর মন্দিরে শুরু হয়েছে তিন দিনের এই উৎসব। জেলার সীমানার এই মন্দিরের উৎসবে যোগ দেন পাশের গ্রামের লোকজনও। দূরদূরান্তের জেলাগুলি থেকেও অনের ভক্তেরা আসেন এখানে। এবারও সেই উৎসাহ দেখা গিয়েছে পুরো মাত্রায়।
হিরাপুর বিধানসভা কেন্দ্রের একেবারে শেষপ্রান্তে হলুদ মাটির তিনগ্রাম জুনুট, সালোনী ও বিনোদবাঁধ লাগোয়া এই মন্দির। আমবাগানের নীচে বিশাল জায়গা জুড়ে অযত্নে দাঁড়িয়ে আছে এই মন্দির। প্রায় পাঁচশো বছর আগে স্থানীয় পাটমোহনা গ্রামের বাসিন্দা রজনীকান্ত বহ্মচারী স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই মানিকেশ্বর ধামে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেন। জনশ্রুতি, প্রায় তিনশো বছর আগে কাশীপুরের রাজা শঙ্করদয়াল সিংহ এই শিবস্থান সংলগ্ন মেঠো পথ দিয়ে যাওয়ার সময়ে এখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন ও শিবদর্শন করেন। তখনই তিনি প্রার্থনা করেন, গাজনের দিন এখান দিয়ে ফেরার পথে যদি কোনও অলৌকিক ঘটনা দেখতে পান, তাহলে মন্দির নির্মাণ করবেন ও দেবোত্তর সম্পত্তি দান করবেন। |
শোনা যায়, গাজনের দিন ফেরার পথে তিনি ওই মানিকেশ্বর ধামে এসে দেখতে পান, দেবস্থানের ঠিক উপরে একজোড়া কদম গাছে ফুল ফুটে আছে। চৈত্রের দুপুরে, কদমগাছে অসময়ের এই ফুল দেখে তিনি অবাক হয়ে যান। সাধারণত ভাদ্র মাসেই কদম গাছে ফুল ফোটে। এই ঘটনাই তাঁর কাছে শিবের মাহাত্ম্য বলে মনে হয়েছিল। এরপরই কাশীপুরের রাজা ওই মন্দিরের তৎকালীন সেবাইতকে ৯৯ বিঘা জমি দান করেন ও একটি শিব মন্দির বানিয়ে দেন। সেই থেকেই ধুমধাম করে হয়ে আসছে এখানকার গাজন উৎসব। মন্দিরের বর্তমান প্রধান সেবাইত পূর্ণিমা চক্রবর্তী জানান, এখনও গাজনের দিন দুপুর দেড়টা থেকে আড়াইটের মধ্যে ওই জোড়া কদম গাছে দু’টি ফুল ফুটে থাকতে এখনও দেখেন মানুষজন। সেই ফুল দিয়েই এখনও ওই মন্দিরে শিবের প্রথম পুজো সারা হয়। এই দৃশ্য দেখতে এখনও উৎসবের দিন হাজার হাজার ভক্ত আসেন। এলাকার বাসিন্দা জঙ্গলাল বলেন, “উৎসবের ১৫ দিন আগে থেকেই আমরা পুজো-অর্চনা শুরু করে দিই।” অপর এক বাসিন্দা বাপি মৌলিক জানান, উৎসবের তিন দিন এখানে যেন দুর্গাপুজোর আনন্দ শুরু হয়। গোটা চত্বর জুড়ে মেলা বসে।
তবে মন্দিরের প্রধান সেবাইত থেকে শুরু করে সাধারণ ভক্ত সকলেরই আক্ষেপ, ঐতিহ্যের এই মন্দিরটির সংস্কারের কথা কেউ ভাবছেন না। মন্দিরটি আজ প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত। তাঁদের অভিযোগ, মন্দিরের ঐতিহাসিক মূল্য এমন হলেও প্রশাসনের কাছে তেমন কোনও কদর নেই। ইতিমধ্যেই মন্দির থেকে চুরি হয়ে গিয়েছে অনেক সম্পদ। চুরি হয়েছে কাশীপুরের রাজার দেওয়া একটি বিশাল পিতলের রথের অনেকটা অংশও। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, এ বার অন্তত মন্দিরের সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নিক প্রশাসন।
|