কয়লা চুরিতে জড়িত থাকায় অভিযুক্ত ৫২ নিরাপত্তকর্মীকে পুনর্নিয়োগের দাবি মানতে চাইলেন না ডিভিসি-র মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র (এমটিপিএস) কর্তৃপক্ষ। ওই কর্মীদের কাজে ফেরানোর দাবিতে বুধবার দিনভর বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা নিয়ে যাওয়া মালগাড়ি আটকে দেয় আইএনটিটিইউসি। শেষে রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ প্রশাসনের তরফে সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের আশ্বাস দেওয়া হলে অবরোধ ওঠে। বৃহস্পতিবার রানিগঞ্জ থানায় বৈঠক হয়। বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “যতদূর শুনেছি, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে।”
এ দিন থানায় আয়োজিত বৈঠকে ছিলেন রানিগঞ্জের বিডিও পার্থপ্রতিম সরকার, এমটিপিএসের দুই আধিকারিক, পুলিশ, রাজ্য শ্রম দফতরের আসানসোলের আধিকারিক রিজাউল হক এবং আইএনটিটিইউসি-র প্রতিনিধি। এমটিপিএস সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে বিডিও ওই ৫২ জন কর্মীকে কী ভাবে পুনর্নিয়োগ করা যায়, তা বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে দেখতে বলেন। কিন্তু সংস্থার আধিকারিকেরা সাফ জানিয়ে দেন, ওই কর্মীরা নানা সময়ে কয়লা চুরিতে মদত দিয়েছেন। তাঁরা যে ঠিকা সংস্থার কর্মী, গত বছর সেই সংস্থার বেতনের টাকার বাক্স লুঠ করে চম্পট দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী কাজে আসেননি। বিদ্যুৎকেন্দ্রে নানা বিষয়ে সমস্যা সৃষ্টি করেছেন। তা শুনে বিডিও জানতে চান, সংস্থার তরফে সেই সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন। কেন্দ্রের আধিকারিকেরা জানান, তাঁরা ওই কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেছেন।
এমটিপিএসের চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস মিত্র জানান, এর পরেও বিডিও ওই কর্মীদের নিরাপত্তারক্ষী বাদ দিয়ে অন্য কাজে নিয়োগের জন্য অনুরোধ করেন। তখন সংস্থার তরফে জানানো হয়, ওই কর্মীরা যে সেই কাজ করতে গিয়েও সমস্যা সৃষ্টি করবেন না, তার নিশ্চয়তা নেই। তবে কোনও ঠিকা সংস্থা মারফত অন্য কোনও কাজে ওই ৫২ জন নিযুক্ত হলে তাঁদের অসুবিধে নেই। কারণ, আইএনটিইউসি, সিটু এবং আইএনটিটিইউসি, এই তিন সংগঠন নিয়ে গঠিত ফোরামের সুপারিশে নিযুক্ত এই ঠিকাকর্মীরা যে কাজ করেন, তা বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ দেখেন না। তাই সেক্ষেত্রে তাঁদের কোনও আপত্তিও থাকবে না।
বৈঠকে থাকা এমটিপিএসের নিরাপত্তা আধিকারিক সুচিত মণ্ডল জানান, রাজ্য শ্রম দফতরের আধিকারিক তাঁদের জানান, ১৬ বছর কাজ করা এই কর্মীদের এ ভাবে ছাঁটাই করা নিয়ম বহির্ভূত। কিন্তু তাঁরা জানিয়ে দেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র কেন্দ্রীয় শ্রম দফতরের অধীন। ছাঁটাই করার আগে কেন্দ্রীয় শ্রম দফতরের কাছে এই ৫২ কর্মীর বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগের নথিপত্র পাঠানো হয়েছিল। তা দেখে কেন্দ্রীয় শ্রম দফতর জানায়, ছাঁটাইয়ে তাদের কোনও আপত্তি নেই।
জেলাশাসক বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানালেও বিদ্যুৎকেন্দ্রের আইএনটিটিইউসি নেতা মলয় মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এই ৫২ জন কর্মীর জন্য বিকল্প কোনও ব্যবস্থা করতেই হবে। প্রশাসনের আশ্বাস পেয়ে আমরা অবরোধ তুলে নিয়েছি। এখন প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেয়, তার উপরে আমরা নজর রাখছি।”
|
