মেজিয়ায় রক্ষী ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদ
কয়লা ঢোকাতে বাধা বিদ্যুৎকেন্দ্রে
য়লা চুরিতে মদতের অভিযোগে তিন মাস আগে ছাঁটাই করা হয়েছিল ৫২ জন নিরাপত্তাকর্মীকে। তাঁদের কাজে ফেরানোর দাবিতে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বে বুধবার দিনভর রেললাইন আটকে বাঁকুড়ার ডিভিসি-র মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে (এমটিপিএস) কয়লা ঢুকতে দেওয়া হল না। তার জেরে এ দিন আট রেক কয়লা ঢোকেনি ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। এই অবস্থা চলতে থাকলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
এমটিপিএস কর্তৃপক্ষের ক্ষোভ, বর্ধমানের রানিগঞ্জে এই অবরোধের কথা পুলিশ-প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনার বক্তব্য, “শুনেছি, ওখানে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ নিয়ে সমস্যা রয়েছে। তা সংস্থাকেই মেটাতে হবে।” শিল্পাঞ্চলের তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের বক্তব্য, “আমরা ওই কর্মীদের ছাঁটাই করতে বারণ করেছিলাম। প্রয়োজনে নিরাপত্তাকর্মী পদে না রেখে অন্য পদে বহাল করতে বলেছিলাম। কিন্তু তাঁরা শোনেননি। এ দিন কী হয়েছে, আমাকে জানানো হয়নি।”
এমটিপিএস সূত্রে জানা যায়, ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির আটটি ইউনিট মিলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৩৪০ মেগাওয়াটের মতো। রেল, নানা ইস্পাত সংস্থা ও খনি ছাড়াও কয়েকটি রাজ্যকে ওই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। রানিগঞ্জ থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত যে লাইনে মালগাড়ি আসে, তা সংস্থার নিজস্ব। নানা খনি থেকে দিনে গড়ে ৮-৯ মালগাড়ি কয়লা আসে। ১৯৯৩ সালে এই লাইন তৈরির সময়ে একটি ঠিকা সংস্থা মারফত ৫২ জন নিরাপত্তাকর্মীকে পাহারার কাজে নিয়োগ করা হয়েছিল। লাইন তৈরির পরেও তাঁরা সে কাজে বহাল ছিলেন। যাতায়াতের পথে মালগাড়ি পাহারার কাজে নিযুক্ত হয় আর এক ঠিকা সংস্থার ৪৫ জন কর্মী।
এমটিপিএস কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে কয়লা আসার সময়ে মালগাড়ি থেকে তা চুরি যাচ্ছিল। তদন্ত করে দেখা যায়, দু’ধরনের নিরাপত্তারক্ষীই এর সঙ্গে জড়িত। তাই গত বছর এপ্রিলে মালগাড়ি পাহারায় যুক্ত ৪৫ কর্মীকে ছাঁটাই করে প্রাক্তন সেনাকর্মীদের একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাতে কয়লা চুরি অনেকটা বন্ধ হয়। এমটিপিএস কর্তৃপক্ষের দাবি, এর পরে রেললাইন পাহারায় যুক্ত ৫২ জন কর্মী কাজে আসা বন্ধ করে দেন। তাঁরা মাঝে-মধ্যে নানা দাবি তুলে কেন্দ্রে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। শেষে গত জানুয়ারিতে তাঁদের ছাঁটাই করা হয়। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে রেললাইন পাহারার কাজেও যুক্ত হন প্রাক্তন সেনাকর্মীরা। এমটিপিএসের একটি সূত্রের দাবি, জানুয়ারিতে মহাকরণে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে বৈঠকে বসেন সংস্থার আধিকারিকেরা। সেখানে মলয়বাবু ওই ৫২ জন কর্মীকে ছাঁটাই করতে বারণ করেন। কিন্তু সংস্থার তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, নিজেদের শুধরে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া সত্ত্বেও ওই কর্মীরা যে আচরণ করেছেন তাতে তাঁদের বহাল রাখা সম্ভব নয়।
এমটিপিএস সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেলে ওই কেন্দ্রের আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত ‘ডিভিসি এমটিপিএস ক্যাসুয়াল তৃণমূল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর প্যাডে একটি চিঠি পাঠানো হয়। তাতে বুধবার সকাল থেকে রেললাইন অবরোধের কথা জানানো হয়। কেন্দ্রের চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস মিত্র বলেন, “সঙ্গে সঙ্গে আমরা আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারকে চিঠি পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানাই।” এ দিন সকাল ৮টা থেকে রানিগঞ্জে দামোদরের সেতুর কাছে মালগাড়ি আটকানো হয়। আইএনটিটিইউসি নেতা তথা ওই ৫২ জন কর্মীর অন্যতম সুবীর রায় বলেন, “কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি, আমাদের অন্তত কারখানার মধ্যে কাজ দেওয়া হোক, অথবা বকেয়া মেটানো হোক।” দেবাশিসবাবুর অবশ্য দাবি, তাঁদের কাছে ওই কর্মীদের কোনও বকেয়া নেই। তিনি জানান, এ দিন সকালে পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, তাঁদের কাছে দিন দুয়েক উৎপাদন চালানোর মতো কয়লা আছে। তাই শীঘ্র অবরোধ না তোলা হলে বিপর্যয় ঘটবে।
বিকেলে চিঠির প্রতিলিপি বর্ধমানের জেলাশাসককেও পাঠানো হয় বলে দেবাশিসবাবুর দাবি। যদিও সন্ধ্যায় জেলাশাসক বলেন, “আমরা এখনও কোনও চিঠি পাইনি।” আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দের আশ্বাস, “বিদ্যুৎকেন্দ্রের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা রুজু হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মিটলে ভাল, তা না হলে পুলিশ অবরোধ তুলে দেবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.