সময় মতো বৃষ্টি না-হওয়ায় কোচবিহার জেলায় পাট চাষের মোট এলাকা কমার আশঙ্কা করছেন কৃষি দফতরের কর্তারা। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হলেও এবার এপ্রিল মাসের প্রায় দু’সপ্তাহ কেটে গেলেও মাত্র ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষের কাজ শেষ হয়েছে। অন্য বছর ওই সময়ের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর এলাকায় পাট লাগানোর কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যায়। কোচবিহারের মুখ্য কৃষি আধিকারিক প্রণবজ্যোতি পন্ডিত বলেন, “বৃষ্টির অভাবের জন্য এ বার এখন পর্যন্ত ২৫ শতাংশ জমিতে পাট চাষ সম্ভব হয়েছে। এমন চললে পাট চাষের এলাকা কমতে পারে।”
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার সমস্ত মহকুমায় পাট চাষ হয়। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে সাধারণত মে ও জুন মাস থেকে পাটের বীজ বোনার কাজ হয়। কিন্তু কোচবিহারের চাষিরা আবহাওয়ার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মার্চ মাস থেকে পাট বীজ বোনার কাজ শুরু করেন। এপ্রিল মাসের মধ্যে জেলায় পাট লাগানোর কাজ শেষ হয়ে যায়। পাটের জন্য প্রসিদ্ধ ওই জেলায় প্রতি বছর গড়ে ৯০ হাজার মেট্রিক টন পাট উৎপাদন হয়। এ বার ওই পরিমাণ পাট মিলবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, গত অক্টোবর মাস থেকে বৃষ্টি নেই। ফলে অনেকে জমি তৈরি করেও বীজ বুনতে পারেনি। তাই এলাকা কমে গেলে উৎপাদনেও প্রভাব পড়বে। জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “গত ৬ অক্টোবর মাসের পরে প্রায় ছয় মাস কোচবিহারে ভারী বৃষ্টি হয়নি। অক্টোবর মাস থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত অন্য বছর ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেও এ বার হয়েছে মাত্র ২০ মিলিমিটার। তাই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।”
শুধু যে পাট চাষের সমস্যা হচ্ছে সেটাই নয়। মরসুমের সময় পিছিয়ে গেলে আমন চাষ শুরু করতেও সমস্যা দেখা দেবে। সময় মতো ধানের জমি তৈরি করা যাবে না। ফলে ধান চাষ মার খাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। পাট চাষি ধলপল গ্রামের সির্দ্ধাথ মণ্ডল বলেন, “অন্য বছর গড়ে ১০ বিঘা জমিতে পাট চাষ করি। এ বার সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় বীজ বুনতে পারিনি। জানি না শেষ পর্যন্ত কতটুকু বুনতে পারব।” বক্সিরহাটের পাট চাষি অমল রায় বলেন, “ঝুঁকি নিয়ে বীজ বুনেছি। বৃষ্টি নেই। চড়া রোদে পাট শুকিয়ে যাচ্ছে। ক’দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে কী যে হবে বুঝতে পারছি না।” |