গত বছর ১২ জানুয়ারি ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক সভা থেকে ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতালকে জেলা হাসপাতালে উন্নীত করা ও ঝাড়গ্রামকে স্বাস্থ্য জেলা করার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর এক বছরেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। কিন্তু ঘোষণা মতো কাজ এগোয়নি। ৩১ মার্চের মধ্যেই ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতাল সম্পূর্ণ রূপে জেলা হাসপাতাল হিসেবে গড়ে ওঠার কথা ছিল। সময়সীমা ফুরিয়েছে। অথচ জেলা হাসপাতালের পরিকাঠামোই গড়ে ওঠেনি। হাসপাতাল সুপার সুদীপ কাঁড়ারের বক্তব্য, “কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। বাকি কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। পূর্ত দফতরকে আরও তৎপর হতে বলা হয়েছে।”
পরিকাঠামো উন্নয়নে কী কী করার কথা ছিল?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, প্রথম ধাপে হাসপাতালের ৬টি ওয়ার্ড সংস্কারের কথা ছিল। এ জন্য ব্যয় ধার্য হয়েছিল ৪৯ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা। দ্বিতীয় ধাপে উন্নত অপারেশন থিয়েটার, ট্রমা কেয়ার ইউনিট, আইসিইউ, আইটিইউ, এসএনসিইউ ও বার্ন ইউনিট চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৯২ লক্ষ টাকা। এখনও পর্যন্ত মাত্র ২টি ওয়াড, শিশু বিভাগ ও ফিমেল মেডিসিনের সংস্কার হয়েছে। মেল মেডিসিন ওয়ার্ড সংস্কারের কাজ চলছে। মেল ও ফিমেল সার্জিক্যাল ও প্রসূতি বিভাগের কাজ শুরু হতেই ঢের দেরি। দ্বিতীয় ধাপের পরিকল্পনার মধ্যে শুধু এসএনসিইউ চালু করা গিয়েছে। বার্ন ইউনিট, আইসিইউ-সহ বাকি কাজের জন্য সবে মাটি পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলে তারপর কাজ শুরু হবে। |
প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১২ সালের জানুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরপরই সরকারি নির্দেশ এসে গিয়েছিল। অথচ কাজ এগোয়নি। কিন্তু কেন? অর্থ নেই এমন নয়। এখনও পর্যন্ত স্বাস্থ্য দফতরকে এই কাজ করার জন্য প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। খরচ করতে পারলেই ফের টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। তবু কাজের গতি অতি মন্থর। এর জন্য স্বাস্থ্য দফতর দুষছে পূর্ত দফতরকে। আর পূর্ত দফতর পাল্টা বলছে, ওয়ার্ড থেকে রোগীকে অন্যত্র স্থানান্তর না করলে কী ভাবে সংস্কার করা যাবে?
জঙ্গলমহলের প্রান্তিক মানুষজন যথাযথ স্বাস্থ্য পরিষেবা পান না বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ। একদিকে দারিদ্রের কারণে অপুষ্টি তো রয়েছেই, তার উপর চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে দরিদ্র মানুষজনকে চরম সমস্যায় দিন কাটাতে হয়। সমস্যা সমাধানে গ্রামে গ্রামে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা কেন্দ্র খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু গুরুতর রোগের চিকিৎসা সেখানে সম্ভব নয়। ব্লক ও মহকুমা হাসপাতালেও উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব। সব মিলিয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজই ছিল জঙ্গলমহলবাসীর একমাত্র ভরসা। সবার পক্ষে আবার মেদিনীপুরে রোগীকে নিয়ে আসা সম্ভব ছিল না দারিদ্রের কারণে। যাতে জঙ্গলমহলের মানুষ কাছাকাছির মধ্যে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পান, সে জন্য ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতালকে জেলা হাসপাতালে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নতুন বিভাগ খুলতেও অর্থ বরাদ্দ করা হয়। ৩১ মার্চের মধ্যে সব কাজ শেষ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও বেশিরভাগ কাজই এখনও শুরুই করা যায়নি! কতদিনে এই কাজ শেষ হবে সে বিষয়েও নিশ্চিত করে কেউ কিছুই বলতে পারছেন না। জঙ্গলমহলের মানুষ বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছেন। |