সংযমের বার্তা ভুলে চলল হামলা, জ্বলল আগুন
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নয়াদিল্লির ঘটনার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু বুধবারও বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায় সিপিএমের কয়েকটি দলীয় কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ উঠল মুখ্যমন্ত্রী দলের কর্মীদের বিরুদ্ধেই। কোথাও মিছিল থেকে কর্মীরা গিয়ে সিটুর অফিসের পতাকা খুলে নিয়ে তৃণমূলের পতাকা টাঙিয়ে দিলেন। কোথাও আবার সিপিএমের পার্টি অফিসে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটল। মুখ্যমন্ত্রীর ‘শান্তির বাণী’ কানে না নিয়ে তৃণমূলের নেতা থেকে মন্ত্রীরা এ সব ‘জনরোষ’ বলে দাবি করলেন।
মঙ্গলবার বিকেলেই সিপিএমের তালড্যাংরা জোনাল অফিসে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পুলিশ গিয়ে আটকে থাকা চার সিপিএম নেতাকে কোনওক্রমে উদ্ধার করেন। পুরুলিয়ায় সিপিএমের জেলা কার্যালয়েও ভাঙচুর হয় কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেনি হামলার ঘটনা। সেই রাতেই সিপিএমের খাতড়া জোনাল কমিটির অফিসে ভাঙচুর চলে। অফিসে থাকা দলের কর্মীদের লক্ষ করে ইটপাটকেল ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ।
বলরামপুরে সিটুর অফিসে বুধবার তোলা হল তৃণমূলের পতাকা।
রাতেই সারেঙ্গার পিড়রগাড়ি মোড়ে সিপিএমের লোকাল কমিটির অফিসে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বুধবার সকালে ওই পার্টি অফিসেই আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আলমারি ভেঙে নথিপত্র মেঝেতে ফেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। নতুন করে আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। এ দিন বেলা সাড়ে ১১টায় বারিকুল থানার ফুলকুসমায় তৃণমূলের ধিক্কার মিছিল বের হয়। সিপিএমের রাইপুর জোনাল সম্পাদক ধ্রুবলোচন মণ্ডলের অভিযোগ, “তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা মিছিল থেকে বেরিয়ে আমাদের লোকাল কমিটির অফিসে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। আসবাবপত্র ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়।” এ দিন ভাঙচুর করা হয় সোনামুখীতে সিপিএমের জোনাল অফিসেও। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়।
মারধরের অভিযোগও উঠেছে। এ দিন সকালে রাইপুরের চাকা গ্রামের বাসিন্দা সিপিএমের ঢেকো পঞ্চায়েতের সদস্য তুলসি তফাদারকে তৃণমূলের লোকেরা মারধর করে বলে অভিযোগ। সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র বলেন, “দিল্লির ওই ঘটনার পর থেকেই পাড়ায় পাড়ায় তৃণমূলের মস্তানদের মধ্যে গুণ্ডামি করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছে। আমাদের কর্মীদের মারধর ও দলীয় কার্যালয়গুলিতে হামলা করছে ওরা।” রাজ্যের শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, “আমাদের কর্মীরা হিংসাত্মক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়। কোথাও গোলমাল হয়ে থাকলে তা জনরোষ।”
বুধবার বিকেলে কাশীপুরের ধতলা মোড়ে সিপিএমের কৃষক সভার আঞ্চলিক কার্যালয়ে ভাঙচুর করে আগুন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সিপিএমের কাশীপুর জোনাল সদস্য গোবর্ধন শীলের অভিযোগ, “তৃণমূলের শতাধিক কর্মী-সমর্থক মিছিল করে যাওয়ার সময় আমাদের ওই কার্যালয়ে তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর করে আসবাবপত্র ও আলমারিতে আগুন লাগিয়ে দেয়।” তৃণমূলের কাশীপুরের বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার দাবি, “সিপিএমের লোকেরা নিজেরাই আগুন লাগিয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবেই মিছিল করি।” মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (রঘুনাথপুর) কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশ গিয়ে আগুন নেভায়। পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”
নয়াদিল্লি ঘটনার প্রতিবাদে বাঁকুড়া শহরে তৃণমূলের সরকারি কর্মী সংগঠনের ধিক্কার মিছিল।
এ দিন সকালে বলরামপুরে সিটুর একটি অফিসে দখল করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের বলরামপুর জোনাল কমিটির সদস্য ত্রিলোচন দাসের অভিযোগ, “তৃণমূলের কর্মীরা মিছিল করে এসে সিটুর পরিবহণ কর্মীদের কার্যালয়ের ছাদে উঠে আমাদের পতাকা খুলে দিয়ে ওদের পতাকা লাগিয়ে দেয়। বিকেলে তালা ভেঙে ওই অফিস দখল করে তৃণমূল।” তাঁর আরও অভিযোগ, মিছিল থেকে বলরামপুর চকবাজার মোড়ে তাঁদের আঞ্চলিক কার্যালয়ের দরজা ভাঙচুর করে তৃণমূল। তৃণমূলের বলরামপুর ব্লক সভাপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর দাবি, “সরকারি জমির উপরে পরিবহণ কর্মীদের চাঁদায় গড়ে ওঠা অফিসটি এক সময়ে সিটুর ছিল। কিন্তু ওই পরিবহণ কর্মীরা এখন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনে চলে এসেছেন। তাই ওই অফিসে তাঁরা তৃণমূলের পতাকা টাঙিয়ে দিয়েছেন। এটাই স্বাভাবিক।”
নয়াদিল্লির ঘটনার প্রতিবাদে তৃণমূলের প্রোগ্রেসিভ ডক্টরর্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরা এ দিন কালো ব্যাজ পরে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কাজে যোগ দেন। বিকেলে তাঁরা হাসপাতাল থেকে মৌনী মিছিল করেন। পুরুলিয়ায় জেলাশাসকের অফিস ও বিষ্ণুপুরে মহকুমাশাসকের অফিস চত্বরে স্টেট গর্ভনমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের সদস্যেরা ধিক্কার সভা করেন। বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল ও সভা করে তৃণমূলের বিভিন্ন সংগঠন। সন্ধ্যায় সিপিএম নেতা-কর্মীরা পুরুলিয়া শহরে তাঁদের পার্টি অফিসে হামলার প্রতিবাদের পাল্টা মিছিল করে।
—নিজস্ব চিত্র
পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.